অর্পিতাকে বাঁচাতে এক হলেন তিন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক!
তৌফিক মারুফ ।। ১১ বছরের অর্পিতা। ছোট ভাইয়ের জন্মের চার দিনের মাথায় মাকে হারায়। এসবের মধ্যেও অন্য শিশুদের মতো স্বপ্ন ও সম্ভাবনা নিয়ে বেড়ে উঠছিল সে। একদিন হঠাৎ সে টের পায় তার ডান চোখে অস্বাভাবিক কিছু। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সে দেখে, ডান চোখের পাশের কিছু অংশ ফুলে আছে। কয়েক দিনের মধ্যে দ্রুত ডান চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হতে থাকে।
অর্পিতার বাবা সজীব কুমার ও ঠাকুরমার কাছেও এই অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে। তাঁরা স্থির করেন, দেরি না করে অর্পিতাকে চোখের ভালো ডাক্তার দেখাবেন। সিদ্ধান্ত নেন ঢাকায় নিয়ে আসবেন, কিন্তু আর্থিক কারণে স্কুল শিক্ষক বাবার পক্ষে বগুড়ার ধুনট থেকে অর্পিতাকে ঢাকায় নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। এ খবর পৌঁছে যায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অর্পিতার বাবার স্কুলের শিক্ষক সুনন্দা সিনহার কাছে। তিনি যোগাযোগ করেন অর্পিতার বাবার সঙ্গে। দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা তাঁদের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদেরও নানাভাবে বিষয়টি জানান।
সুনন্দা সিনহার আহ্বানে সাড়া পাওয়া যায়। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছোট্ট অর্পিতার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। প্রাথমিকভাবে দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু চিকিৎসক মইনুল হক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। ধরা পড়ে অর্পিতার দুরারোগ্য চোখের ক্যান্সার। এর চিকিৎসা খুব জটিল ও কঠিন। হাল না ছেড়ে ঢাকা, ভারতের হায়দরাবাদ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অর্পিতার চিকিৎসায় সর্বোচ্চ উপায় খুঁজতে থাকেন। বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসক মইনুল হকের সঙ্গে যুক্ত হন জাতীয় ক্যান্সার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডাক্তার সাবিনা করিম। শুরু হয় কেমোথেরাপির মাধ্যমে অর্পিতার চোখের টিউমার নিয়ন্ত্রণে রাখার কাজ।
বোস্টনের বিশিষ্ট চিকিৎসক নিয়ে গঠিত মেডিক্যাল টিম অর্পিতার চোখের এমআরআই স্ক্যান, প্যাথলজি রিপোর্ট পর্যালোচনা করে। পরে মেডিক্যাল টিম সিদ্ধান্ত নেয় অর্পিতাকে বোস্টনে নিয়ে ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল ও ম্যাসাচুসেটস আই অ্যান্ড ইয়ার ইনফারমারিতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার। একই সঙ্গে ভারতের হায়দরাবাদের বিশিষ্ট চক্ষু চিকিৎসক সন্তোষ হেনোভার এবং তাঁর টিম অর্পিতার চিকিৎসায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অর্পিতার চিকিৎসা উদ্যোগের অন্যতম সমন্বয়কারী বোস্টন ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. বিমলাংশু দে, যিনি বাংলাদেশে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট চিকিৎসা চালুর ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন।
ডা. বিমলাংশু দে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অর্পিতার চিকিৎসার এই উদ্যোগ খুব সহজ নয়, অনেক কঠিন ও জটিল একটি কাজ। আমরা একটা উদাহরণ তৈরি করতে চাই। সম্ভাবনাময় এই শিশুর জীবন ও দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করতে চাই। অর্পিতার বাবার পক্ষে এ কাজ একেবারে অসম্ভব। আমরা সবাই মিলে উদ্যোগটি সফল করার চেষ্টা করছি।’
তিনি জানান, এরই মধ্যে বাংলাদেশের বিকাশ, গ্রামীণফোন ও আয়াত এডুকেশন অর্পিতার চিকিৎসা সহায়তা উদ্যোগে সাড়া দিয়েছে। -কালেরকন্ঠ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান