একটি সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ
পৃথিবীতে অনেক সংগঠন আছে যেগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ইতিহাস। সেই সংগঠনের তালিকায় বাংলাদেশে প্রথম স্থান পাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবগুলো ল্যান্ডমার্কের সঙ্গে উজ্জ্বলভাবে জড়িয়ে আছে ছাত্রলীগের নাম। ভাষা, স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং সর্বোপরি বঙ্গবন্ধু নিহত হলে জাতির চরমতম দুর্দিনে যে সংগ্রাম করতে হয়েছিল, সেখানেও সামনের সারিতে ছিল ছাত্রলীগ। এ ছাড়া দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, বন্যাসহ নানান মহামারিতেও অতীতে এই সংগঠনের ছেলেমেয়েরা অনেক বড় ভূমিকা রেখে গেছেন। এবং তাদের অনেকে জাতীয় জীবনের স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হয়েছেন। অন্যদিকে রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে ব্যবসা ক্ষেত্রে, প্রশাসক, সামরিক ব্যক্তিত্ব, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, বিচারক, সাংবাদিক, লেখকসহ নানান সেক্টরে সুনাম করেছেন এই সংগঠন থেকে আসা ছেলেমেয়েরা। এবং তারা সকলেই স্বীকার করেন, একটি সৎ সংগঠন করার অভিজ্ঞতা তাদের নিজ নিজ পেশায় দক্ষতা অর্জনেও কাজ করতে সাহায্য করেছে। তাই স্বাভাবিক যেকোনো সংগঠনের থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি আলাদা ঐতিহ্যের সংগঠন।
এ ধরনের সংগঠনের কাছে দেশের মানুষের দুটি চাহিদা সব সময়ই থাকে। এক, কোনোমতেই যেন এ ধরনের সংগঠনের বিলুপ্তি না ঘটে। কারণ, যেকোনো মানুষকে তার জীবনে সফল হতে হলে তাকে অর্জন করতে হয় নেতৃত্বের গুণাবলি। আর যেকোনো সৎ সংগঠন করার ভেতর দিয়ে এই গুণাবলি অর্জিত হয়। তাই ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ জীবন চিন্তা করে সব সময়ই যেকোনো সৎ সংগঠনের সঙ্গে তরুণ বয়সে জড়িত থাকা ভালো। যেমন যারা বয় স্কাউট বা গার্লস গাইডের সঙ্গে বাল্য ও কৈশোরে জড়িত থাকে, তাদের ভেতর আলাদা পরিশ্রম করার একটা গুণাবলি দেখা যায়। তারা কর্মজীবনের অফিস-আদালতে টানা আট ঘণ্টার ক্ষেত্রে বারো ঘণ্টা পরিশ্রম করলেও ক্লান্ত হয় না। শুধু পরিশ্রম করার গুণ নয়, নানান মানবিক গুণও কিন্তু সংগঠন করার ভেতর দিয়ে তরুণ বয়সে মানুষ অর্জন করে। দ্বিতীয় চাহিদা থাকে, এ ধরনের সংগঠন যেন চরিত্র না হারায়।
কিন্তু এখন বাস্তবতা হলো, ছাত্রলীগ আজ যখন তার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে তখন এ প্রশ্ন সকলেরই, শুধু দলীয় রাজনীতির স্বার্থে ও ক্ষমতার স্বার্থে ছাড়া এখন কেউ কি ছাত্রলীগ করতে আসে? দেশ ও জাতির কল্যাণের ব্রত নিয়ে, নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলব- এই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এখন কেউ কি ছাত্রলীগ করে? করে না। বরং অনেকেই ছাত্রলীগ থেকে দূরে থাকতে চায়। ছাত্রলীগের কেন এই পরিণতি? কেউ কেউ বলেন, বাস্তবে কোনো আদর্শের চর্চা নেই বলে এ পরিণতি। আবার কেউ বলেন, সামগ্রিক সমাজের নৈতিকতা যেখানে নেমে গেছে, সেখানে ছাত্রলীগ ভালো থাকবে কীভাবে? দুটোর কোনোটাই অসত্য নয়। তবে ছাত্রলীগকে তার ঐতিহ্যে ফিরতে হলে মনে রাখতে হবে, যখন সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পে এই উপমহাদেশ ভরে গিয়েছিল, সেই দুর্দিনে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে অসাম্প্রদায়িক, আধুনিক এই সংগঠনের জন্ম হয়েছিল। আর তারা সেদিন সেই অসাম্প্রদায়িকতা ও আধুনিকতার পথে হেঁটেছিল। ছাত্রলীগের জন্মের মাত্র দুই বছর আগে এই ভূখণ্ডে ভাই ভাইকে হত্যায় মেতে উঠেছিল। এক ভাই আরেক ভাইয়ের বোনের শ্লীলতাহানি করেছিল। আর তার মাত্র দুই বছর পরে এরই বিপরীতে ছাত্রলীগের জন্ম হয়েছিল। এবং তারা তাদের জন্মের উদ্দেশ্যকে সফলও করেছিল। তাই তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন সফল হবে যদি তারা তাদের ঐতিহ্যে ফেরার পথ খোঁজে। -সারাক্ষণ
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন