দেশের সংবাদ ফিচার্ড

একাকিত্বে ভুগছিলেন সাদী মহম্মদ

একাকিত্বে ভুগছিলেন সাদী মহম্মদ

নিয়মিত সংগীত চর্চা করতেন বরেণ্য রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী সাদী মহম্মদ। একটি দিনও চর্চা ছাড়া কাটেনি তার। বুধবারও ইফতারের পর তানপুরা নিয়ে সংগীত চর্চা করছিলেন। আর তারপরই যেন স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে বেছে নেন এ শিল্পী। সংগীত চর্চার একটা সময় দরজা বন্ধ করে দেন। অনেকক্ষণ বন্ধ দেখে পরিবার দরজা ভেঙে দেখতে পায় সাদী মহম্মদের ঝুলন্ত মরদেহ। পরিবারসহ কাছের মানুষদের ধারণা, গত বছর জুলাইতে মায়ের মৃত্যুর শোক সহ্য করতে পারছিলেন না তিনি। একাকীত্বেও ভুগেছেন। পাশাপাশি অনেক অভিমানও জমে ছিল। সব মিলিয়েই ৬৯ বছর বয়সে জীবন থামিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন শিল্পী।

পুলিশেরও প্রাথমিক ধারণা আত্মহত্যা করেছেন সাদী মহম্মদ। এদিকে গতকাল সাদী মহম্মদের জানাজা বাদ জোহর মোহাম্মদপুর জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর তাকে মোহাম্মদপুর জামে মসজিদ কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

শেষবার তাকে দেখতে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সংগীতশিল্পী খুরশীদ আলম, ফরিদা পরভীন, শামীম আরা নিপা, অভিনেতা খায়রুল আলম সবুজ, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, গাউসুল আলম শাওন, কবির বকুল, অনিমা রায়সহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বহু পরিচিত মুখ। সাদী মহম্মদের ভাই ও প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ বলেন, আমার ভাই মনে কষ্ট নিয়ে চলে গেছে। সে মনে করতো তাকে মূল্যায়ন করা হয়নি। কতো মানুষ কতো পদক পাচ্ছে, এসব তাকে খুব ভাবাতো। সে বড্ড অভিমানী ছিল। আমরা তাকে বুঝাতাম, আমাদের মানুষ ভালোবাসে। পদক দিয়ে কি হবে? কিন্তু তার মনে চাপা কষ্ট ছিল। সেই কষ্ট নিয়েই চলে গেল।

বুধবার সন্ধ্যার পরের ঘটনা প্রসঙ্গে শিবলী বলেন, ইফতার করে ভাই নিজের রুমে গিয়ে গানের রিহার্সেল করছিলেন তানপুরা নিয়ে। তার সহকারীকে বলেছেন বাইরে যেতে। কিছুক্ষণ পর আমি তার রুমের সামনে গিয়ে দেখতে পাই ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। যেটা আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়। কারণ তিনি কখনোই রুমের দরজা বন্ধ করেন না রিহার্সেলের সময়। এরপর কড়া নাড়লেও ভেতর থেকে কোনো শব্দ মেলে না। পরে আমি বলি দরজা ভাঙো। এরপর তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই। শিবলী অভিমানের সুরে আরও বলন, আমার ভাই রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি পেলে একটু তৃপ্তি পেতো। সাদী মহম্মদ তো আমার বড়, তার সামনে যখন আমি একুশে পদক পাই সেটা ছিল আমার জন্য বিব্রতকর। আমি ভাইকে বলি, একুশে পদক নেবো না। কিন্তু সে আমাকে বলে, কেন নিবি না? তুই তো নাচের জন্য বাংলাদেশে কম কিছু করিসনি। পরে তাকে যখন একুশে পদক অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য কার্ড দিলাম, বললো-না থাক রে। তুই যা। আমি সেখানে যাবো না। গেলে অনেকেই প্রশ্ন করবে, আমি কেনো পদক পাই না। এগুলো আমাদের বিব্রত করবে। প্রসঙ্গত, সাদী মহম্মদ রবীন্দ্র সংগীতের ওপরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৯ সালে তার ‘শ্রাবণ আকাশে’ ও ২০১২ সালে তার ‘সার্থক জনম আমার’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। এ ছাড়াও তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তার বাবা সলিমউল্লাহকে হত্যা করে। তার শহীদ বাবার নামে ঢাকার মোহাম্মদপুরে সলিমউল্লাহ রোডের নামকরণ করা হয়েছে। সূত্র: মানবজমিন

 

এসএস/সিএ

সংবাদটি শেয়ার করুন