দেশের সংবাদ ফিচার্ড

ওসমানীনগরে প্রবাসী পরিবার, ট্র্যাজেডি বিষ মেশানো খাবার ঘিরে তদন্তে পুলিশ

ওসমানীনগরে প্রবাসী পরিবার, ট্র্যাজেডি বিষ মেশানো খাবার ঘিরে তদন্তে পুলিশ

ওয়েছ খছরু ও জয়নাল আবেদীন, সিলেট থেকে ।। ওসমানীনগরে যুক্তরাজ্য প্রবাসী পরিবারের ট্র্যাজেডির ঘটনায় নানামুখী তদন্তে নেমেছে পুলিশ। সঙ্গে রয়েছে একাধিক সংস্থাও। খাবারে বিষ মেশানো নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে সব সংস্থা। স্বজনদের দিকেই সন্দেহের তীর। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাদের। গতকাল বিকাল পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি পুলিশ কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সংস্থার সদস্যরা। তবে সিলেট    রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমদ গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে সহসাই ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে ওসমানীনগরের তাজপুরের স্কুল রোডের বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় এক পরিবারের ৫ সদস্যকে উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে মারা যান প্রবাসী পরিবারের কর্তা রফিকুল ইসলাম ও প্রতিবন্ধী ছোট ছেলে মাহিকুল ইসলাম। এদিকে ঘটনায় কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর মিলছে না।

স্বজনরাও এ ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু জানাতে পারছেন না। প্রশ্ন হচ্ছে- ঘটনার দিন রাতে ওই বাসায় দুই পরিবারের ১০ জন ছিলেন। এর মধ্যে লন্ডনি রফিকুলের পরিবারের সবাই আক্রান্ত হন। অন্যরা অক্ষত। ঘর ছিল তছনছ করা। দুই লাশ সহ আহত ৩ জনের দেহ ছিল এলোমেলো রাখা।

পুলিশের ধারণা- ওই পরিবার বাঁচার জন্যই এসব করে থাকতে পারেন। এ ছাড়া, বাইরের দিকে জানালার একাংশ খোলা ছিল। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গতকাল দুপুরে কথা হয় নিহত শফিকুলের শ্বশুর আনফর আলীর সঙ্গে। ঘটনার পর পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দিয়েছে। তিনি মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ওসমানী হাসপাতালে ছিলেন। গতকাল নিজ বাড়ি ওসমানীনগরের ধীরারাই গ্রামের সাংবাদিকদের কাছে এ নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন- ‘রাতে তার মেয়ে, জামাই, দুই নাতি ও এক নাতনি সহ ৫ জনই ভাত খাননি। তারা বাজার থেকে আনা বার্গার এবং লন্ডন থেকে জুস জাতীয় খাবার খেয়েছেন। আর তাদের পরিবারের ৫ জনই রান্না করা ভাত খেয়েছেন। পরদিন চক্ষু হাসপাতালে যাওয়ার জন্য রাত ১০টার মধ্যে সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। এরপর তিনি আর কিছু বলতে পারেননি। সকালে ঘুম থেকে যখন ডাকাডাকি করেন তখন দেখতে পান ঘরের ভেতরে সবাই অচেতন।’ তিনি আরও জানান- বাবা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মারা যাওয়া ছোট ছেলে মাহিকুল ইসলাম ছিল কিছুটা প্রতিবন্ধী। মাহিকুলকে চিকিৎসা করাতে রফিকুল ইসলাম পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেশে এসেছিলেন।

ঢাকায় ৬ দিন অবস্থানের পর লন্ডনে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন। পরে স্ত্রী হুসনা আরা বেগমের চাপাচাপিতে সিলেটে আসেন। ওঠেন ওসমানীনগরের স্কুল রোডের চেয়ারম্যান ঝলকের বাসায়। এবার বন্যার কারণে তারা বাড়িতে উঠেননি বলে দাবি করেন।’ আলোচিত এ ঘটনায় পুলিশের হাতে আটক আছেন তিন জন। এরা হলেন- নিহত রফিকুলের শ্যালক দেলোয়ার হোসেন, তার স্ত্রী শুভা বেগম ও দেলোয়ারের আরেক ভাই। তিন জনকে দু’দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তবে গতকাল পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এর বাইরে রফিকুলের পক্ষের কয়েকজন আত্মীয়স্বজনকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সিলেটের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, ‘মারা যাওয়া দুই জনের ডেডবডির সুরতহাল করা হয়েছে। যারা হাসপাতালে ভর্তি আছেন তাদের আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। যারা পাশের রুমে ছিল তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা আশাবাদী এ ঘটনার রহস্য খুব দ্রুত উদ্‌ঘাটন হবে। এখনো বলার মতো কিছু হয়নি। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন- ‘এ ঘটনায় মামলা হবে। যদি অপরাধ প্রমাণিত হয় তাহলে নিয়মিত মামলা করা হবে। একঘরে ১০ জনের মধ্যে ৫ জন অসুস্থ। ৫ জন সুস্থ। এ কারণে ঘটনাস্থলে আসা।

আমরা ঘটনার বিশ্লেষণ করছি। এবং ডাক্তারি রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি।’  এদিকে ঘটনায় এখনো শঙ্কামুক্ত নন মারা যাওয়া রফিকুলের স্ত্রী হুসনা আরা বেগম ও মেয়ে সামিরা বেগম। তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তবে সুস্থ হওয়ার পথে রয়েছে বড় ছেলে সাদিকুল ইসলাম। তাকে এখনো ঘটনা সম্পর্কে জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের উপ- উপাচার্য ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. শিশির চক্রবর্তী জানিয়েছেন ‘হুসনা আরা ও তার মেয়ের অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। চিকিৎসকরা তাদের প্রাণ বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তবে ছেলে সাদিকুল ইসলাম সুস্থ হয়ে উঠছে।’  তিনি জানান, ‘ঘটনাটি বিষক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আমরা কিছু আলামত পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি। তবে কী ধরনের বিষক্রিয়া সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রিপোর্ট আসার পর  বোঝা যাবে।

এ ছাড়া, যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল সহ তার পরিবারের ৪ জনই রাতে ভাত খেয়েছিলেন। একমাত্র বড় ছেলে সাদিকুল ইসলাম অন্যকিছু খেয়েছিলেন। এ কারণে সে সুস্থ হওয়ার পথে রয়েছে বলে জানান তিনি।’ এদিকে মারা যাওয়া রফিকুল ইসলাম গত ২৫ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। একই সঙ্গে তার আরও দুই ভাই শফিকুল ইসলাম, বিজেকুল ইসলাম, বোন শাহিনা বেগম ও তাদের বৃদ্ধা মা জরিনা বেগম যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। দেশে তাদের পুরনো যৌথ বাড়ি রয়েছে। নিজের আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই। মাঝে মধ্যে রফিকুল ইসলাম দেশে এলে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করে চলে যেতেন। তবে নিজের কিংবা শ্বশুরের পক্ষের আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দৃশ্যমান কোনো বিরোধ ছিল না। ঘটনার খবর পেয়ে গতকাল বিকালে যুক্তরাজ্যের কার্ডিফে থাকা ভাইরা, বোন ও বৃদ্ধা মা দেশে এসেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে বিকালে মারা যাওয়া রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে মাহিকুল ইসলামের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ওসমানীনগর থানার এসআই সুবিনয় বৈদ্য জানিয়েছেন, পরিবার লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পুলিশ তাদের সহযোগিতা করছে। মারা যাওয়া রফিকুল ইসলামের চাচাতো ভাই কামরুল ইসলাম ঘটনার পর থেকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন। তিনি সহ সব আত্মীয়স্বজন মিলে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। কামরুল ইসলাম গতকাল দুপুরে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, তিনি দেশে এসেছেন; সে খবর জানি না। গত শুক্রবার হঠাৎ করে কবর জিয়ারত করতে বড় ভাই রফিকুল ইসলাম বাড়ি যান। তখনই তার সঙ্গে দেখা। তিনি বেশ আন্তরিকভাবেই কথাবার্তা বলেন। প্রতিবন্ধী ছোট ছেলের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসেছিলেন।’ তিনি জানান, প্রতিবন্ধী ছেলে একা চলতে পারে। রাতে বাথরুমে যেতে হলে তাকে দুইজন ধরে নিয়ে যেতে হয়। এ কারণে হয়তো তার ভাই মারা যাওয়া রফিকুল ইসলাম পরিবারের সবাইকে নিয়ে এক ঘরেই থাকতেন। তবে ঘরের মধ্যে দুটি খাট ছিল।’

-মানবজমিন

এসএস/সিএ

 


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন