কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরের একি হাল!
শুভ্র দেব ।। জুতা পায়ে মূল বেদিতে দলে দলে মানুষের বিচরণ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরের একি হাল! বেদিতেই হকাররা বিক্রি করছে হরেক রকম পণ্য। কুকুর-বিড়ালের বিচরণ রাত-দিন। দর্শনার্থীদের খাওয়া বাদামের খোসা, চা-কফির খালি কাপ, সিগারেট-পানির বোতল পড়ে আছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। ভবঘুরেরা ঘুমাচ্ছে আরামে। আশপাশে ময়লা-আর্বজনার দুর্গন্ধ। রাত হলেই মাদকসেবী-বিক্রেতা ও দুর্বৃত্তদের আড্ডা জমে। এমন চিত্র ভাষা শহীদদের সম্মানার্থে নির্মিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের।
অবহেলা অযত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বছরজুড়েই থাকে এমন বেহাল দশা। ২১শে ফেব্রুয়ারির আগে শুধু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। তা থাকে কয়েক দিন।
সরজমিন দেখা গেছে, শহীদ মিনারের সীমানার ভেতরে পথচারীরা ময়লা- আবর্জনা ফেলছেন। মূল বেদির আশে পাশে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট পড়ে আছে। ময়লা ফেলার সবক’টি বিন ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভাসমান মানুষেরা গোসল করে কাপড় শুকাচ্ছে। সীমানা এলাকায় অবৈধভাবে বসানো হয়েছে দোকানপাট। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী পূর্ত মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ৬ জন নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করার কথা। কিন্তু বাস্তবে নামমাত্র দু’জন নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করেন। দিনভর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দর্শানার্থীদের বিচরণ থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে দৃশ্যপট বদলায় শহীদ মিনারের। সন্ধ্যার পরপরই মাদকসেবী ও বিক্রেতা, ছিনতাইকারী, অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্তদের দখলে চলে যায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। রাতের বেলা মূল বেদিতে বসেই মাদকসেবীরা মাদক সেবন করে।
এদিকে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নিয়ে হাইকোর্টে করা এক রিটের শুনানির রায় হয় ২০১০ সালের ২৫শে অক্টোবর। রায়ে বিচারপতি মো. মমতাজ উদ্দিন ও বিচারপতি নাঈমা হায়দারের উপস্থিতিতে রায়ে বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়। সেখানে ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভাবগাম্ভীর্য মর্যাদা রক্ষার জন্য সরকারকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্ধারিত এলাকায় সার্বক্ষণিক পাহারার ব্যবস্থা গ্রহণ করে উক্ত এলাকায় যাতে কোনো ভবঘুরে ঘোরাফেরা বা অবস্থান, অসামাজিক কার্যকলাপ চলতে না পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলা হয়। মূল বেদিতে কোনোরকম মিছিল, মিটিং, পদচারণা, আমরণ ধর্মঘট করা থেকে বিরত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রেসপনডেন্টদিগকে নির্দেশ দেয়া হয়। ওই নির্দেশে এটিও বলা হয়- মূল বেদিতে ফেব্রুয়ারি মাসে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং শহীদ মিনারের মূল বেদিতে ভাষা সৈনিকসহ জাতীয় ব্যক্তিত্বদের মরদেহ সর্বস্তরের জনগণের সম্মান প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার, বিশেষ দিনে ফুল দিতে কোনো রকম বিধি-নিষেধ থাকবে না। শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষায় কমপক্ষে তিনজন নিরাপত্তাকর্মী পূর্ত মন্ত্রণালয়কে ও আরো তিনজন নিরাপত্তাকর্মীকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে নিয়োগ দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হলো।
হাইকোর্টের ওই নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি সাঁটিয়ে রেখেছেন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সর্ব সাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, যে ভাষা আন্দোলনের মহান শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভাবগাম্ভীর্য ও মর্যাদা রক্ষায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্ধারিত এলাকায় কোনো ভবঘুরে যাতে ঘোরাফেরা করতে বা অবস্থান করতে না পারে এবং অসামাজিক কার্যকলাপ চলতে না পারে এবং মূল বেদিতে কোনো রকমের মিটিং-মিছিল, পদচারণা, আমরণ ধর্মঘট করা থেকে বিরত রাখতে মহামান্য হাইকোর্ট নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এ ব্যাপারে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করা যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. একেএম গোলাম রব্বানী মানবজমিনকে বলেন, আমরা শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে- সেটা জানি কিন্তু অনুশীলন করতে চাই না। সব স্থাপনা যদি পাহারা দিয়ে রাখতে হয় তবে স্থাপনার সৌন্দর্য্য ও অংশগ্রহণটা সীমিত হয়ে যায়। হাইকোর্টের নির্দেশনার পর আমরা একটি নোটিশ বোর্ড টাঙিয়ে রেখেছি। সেখানে কি কি কাজে কীভাবে শহীদ মিনার ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু কেউ সেটি মানছে না। তিনি বলেন, সব মানুষের জমায়েত শুধু শহীদ মিনারে। এক জায়গায় জমায়েত না হয়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়লেই হয়। এটাকে রক্ষণাবেক্ষণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দরকার আছে। যদি সব মানুষের একসেস থাকে তবে এ ধরনের সিচুয়েশন তৈরি হবে। কারণ আমরা একসেসটা সীমিত করি নাই। তারপরেও আমরা মাঝে-মধ্যে মোবাইল টিম গিয়ে মাইকিং করছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে দু’জন কেয়ারটেকার আছে। কিছুদিন আগে গিয়ে দেখি একজন কেয়ারটেকার নিজেই মাদক সেবন করে। তারা যদি প্রতিদিন মাইকিং করে মানুষকে সচেতন করতো তাহলে বিষয়টা আরো সুন্দর হতো। কারণ যতটা সুন্দর ও পরিচ্ছন্নভাবে শহীদ মিনার ব্যবহার করা হবে ততই এটি স্থায়িত্ব লাভ করবে। নোংরা আবর্জনা ও দোকানপাটের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বেশকিছু দোকানপাট তুলে দিয়েছি। তারপরও চেয়ার টেবিল নিয়ে বসে পড়ে।
-মানবজমিন থেকে
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন