প্রবাসের সংবাদ

জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে যেন নিউইয়র্ক

জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে যেন নিউইয়র্ক ।। যে নগর কখনো ঘুমায় না, সেই নগর আজ জেগে আছে ঠিকই, কিন্তু সব যেন এক অদৃশ্য শত্রুর কাছে পরাজিত। এক কথায় বলতে গেলে জেগে জেগে ঘুমানো নগরের নাম এখন নিউইয়র্ক। এই নগরকে এখন ভুতুড়ে নগর বললেও ভুল হবে না!

স্বপ্নের আমেরিকার সবচেয়ে জনবহুল নগর নিউইয়র্ক মানেই একটা সময় ছিল স্ট্যাচু অব লিবার্টি, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, টাইমস স্কয়ার, রকফেলার সেন্টার, সেন্ট্রাল পার্ক, আম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং, ব্রুকলিন ব্রিজ, মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম, জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়।

৯০ দশকের শুরুতে ওপি ওয়ান ও ডাইভার্সিটি ভিসায় আগত বাংলাদেশি অভিবাসীদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে এখন ৪ লাখের ওপরে। সেই বাঙালিদের ওপরের নামগুলোর কোনো একটি বাদ পড়লেও চলে। কিন্তু তাঁদের কাছে জ্যাকসন হাইটসের নাম বাদ পড়লে নিউইয়র্কের পরিচয় যেন পূর্ণতা পায় না। জ্যাকসন হাইটসে নিউইয়র্ক নগরের বাঙালিদের তীর্থস্থান বললেও ভুল হবে না।
শত শত বাঙালির কলরবে মুখর জ্যাকসন হাইটস এখন করোনায় বিধ্বস্ত। জ্যাকসন হাইটসসহ পুরো নিউইয়র্ক নগর যেন এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। কোনো লোকজন নেই। রেস্তোরাঁ, দোকানপাট—সব বন্ধ। চারদিকে শুধু শোনা যায় অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের আওয়াজ। প্রতিদিনই কয়েক শ করোনা রোগী মারা যাচ্ছে হাসপাতালে। হাসপাতালের সামনেই সারি সারি লাশ। সামনে ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে সর্বক্ষণ। লাশ উঠছে আর উঠছে।

আমেরিকার মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোর কর্মীরা প্রায় সারা দিনই এলমহার্স্ট হাসপাতালের সামনে রয়েছেন। আশপাশের অ্যাপার্টমেন্টগুলো ভয়ে জানালা পর্যন্ত খুলছে না। আরোগ্য লাভের আশা নিয়ে পরিবারের সদস্যকে গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পৌঁছে দেওয়ার পর অনেকের ক্ষেত্রে সেটাই শেষ দেখা। এরপর শুধু একটি নম্বর। আবার সে নম্বরটি ধরে মরদেহ খুঁজতে হবে। তার জন্য আবার অপেক্ষা। কারও কারও ক্ষেত্রে এক থেকে দুদিন দেরি হচ্ছে মরদেহ পেতে। শেষ দেখাটি দেখারও সুযোগ নেই। পুরো শরীর সিল করা।
করোনায় মৃত যাদের আত্মীয়-স্বজন রয়েছে, তাঁদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হচ্ছে কবর ও শেষকৃত্যের জন্য। নতুবা নগরের গণকবরে সমাহিত করছে হাজার হাজার মরদেহ। শুধু এলমহার্স্ট হাসপাতাল নয়, নিউইয়র্ক নগরের জ্যামাইকার কুইন্স হাসপাতাল, ব্রুকলিনের কনি আইল্যান্ড হাসপাতাল, ফ্ল্যাশিং হাসপাতাল ও ম্যানহাটনের বেলভিউসহ সব হাসপাতালের একই চিত্র।
এভাবে বিশ্বের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্কে করোনার ছোবলে মারা গেছেন প্রায় ২০০ বাংলাদেশি আমেরিকান। একেকটি মৃত্যু সংবাদ যেন আতঙ্ক আর স্বজন হারানোর বেদনা। করোনা এমনভাবে গ্রাস করছে যেন শুধু স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা ছাড়া কিছুই করা ক্ষমতা নেই কারও। নিউইয়র্কের হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাস রোগীদের নিয়ে প্রতিনিয়ত লড়ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।
অবস্থা এতটাই করুণ যে, হাসপাতালগুলোর ভলান্টিয়ার সার্ভিসগুলো বিজ্ঞাপন দিয়ে সংগ্রহ করছে নানা সরঞ্জামাদি। মাস্ক, গ্লাভস, প্রটেক্টিভ হেড শিল্ড বিভিন্ন বাংলাদেশি সামাজিক সংগঠন থেকে শুরু করে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ডোনেট করছে হাসপাতাল ও বিপদগ্রস্ত মানুষদের।
কবে শেষ হবে এই মহামারির গল্প, কবে ফিরবে স্বরূপে তার নগর সেই আশা ও অন্ধকারের দোলাচলে বুক বেঁধে নিউইয়র্ক তথা আমেরিকাবাসী কোয়ারেন্টিনে বসে দিন গুনছেন একটি ভালো দিনের।

-সূত্র: প্রথম আলো

 

সিবিএনএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন