জানা অজানা ফিচার্ড বিশ্ব

ন্যাটো কি? ন্যাটো কেন গঠিত হয়? ন্যাটোর সদস্য দেশ কয়টি?

nato

বাংলাভাষী মানুষ ন্যাটো কে অনেক সময় নেটো লিখে থাকেন। আজ আমরা জানব ন্যাটো কি? ন্যাটো কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়? ন্যাটো কেন গঠিত হয়? ন্যাটোর সদস্য দেশ কয়টি? ন্যাটোর সদর দপ্তর কোথায়? নেটোর সদস্য হওয়ার শর্ত কী? ন্যাটোর দাপ্তরিক ভাষা কয়টি এবং কি কি? ন্যাটোর অপারেশন ও মিশন, ন্যাটোর প্রধান ৪ টি ভিত্তি, ন্যাটোর কার্যক্রম,  ন্যাটো সদস্যভুক্ত দেশগুলোর নাম এছাড়াও আরো অনেক অজানা তথ্য।

ন্যাটো কি : উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট বা ন্যাটো North Atlantic Treaty Organization বা NATO একটি সামরিক সহযোগিতার জোট।

আটলান্টিক মহাসাগরের দুই পাড়ে অবস্থিত উত্তর আমেরিকা মহাদেশের ২ টি দেশ এবং ইউরোপ মহাদেশের ২৮ টি দেশের আন্তঃসরকারি সামরিক সহযোগিতার জোট হলো দ্য নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অরগানাইজেশন (The North Atlantic Treaty Organisation)।

ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর পারস্পরিক সামরিক সহযোগিতা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ।

ন্যাটো কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয় : ১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল ন্যাটো প্রতিষ্ঠিত হয়।

ন্যাটোর সদর দপ্তর কোথায় : ন্যাটোর বর্তমান সদর দপ্তর বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে। পূর্বে এর সদর দপ্তর ছিলো ফ্রান্সের প্যারিসে।

ন্যাটোর দাপ্তরিক ভাষা কয়টি এবং কি কি : ন্যাটোর দাপ্তরিক ভাষা দুইটি, ইংরেজি ও ফ্রেন্স। এই দুইটি ভাষাকে ন্যাটো দাপ্তরিক ভাষা (Official Language) হিসেবে গ্রহণ করেছে। তবে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় প্রচলিত প্রধান ২০ টি ভাষাকেও বেশ গুরুত্বের সাথে দেখে ন্যাটো। ন্যাটোর ওয়েবসাইট ৪ টি ভাষায় কন্টেন্ট সরবরাহ করে ইংরেজি, ফ্রেন্স, ইউক্রেনিয়ান ও রাশিয়ান।

ন্যাটো কেন গঠিত হয় :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই ইউরোপের ১০টি দেশ এবং উত্তর আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা এই ১২ টি দেশ মিলে আন্তঃসরকার সামরিক সহযোগিতা জোট দ্য নর্থ আটল্যান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা ন্যাটো গঠন করে। ন্যাটোর মূল উদ্দেশ্য ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসন ঠেকানো।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের অন্যতম বিজয়ী সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধে জয় লাভ করার কারণে পূর্ব ইউরোপ জুড়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপুল পরিমাণ সেনা রয়ে যায়। যে কারণে পূর্ব জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশের উপর আধিপত্য বিস্তার করে সোভিয়েত ইউনিয়ন।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শেষ হবার পর জার্মানির রাজধানী বার্লিন (Berlin) দখলে নেয় বিজয়ী দেশগুলো। এর পরে ১৯৪৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধানমন্ত্রী জোসেফ স্ট্যালিন (Joseph Stalin) পশ্চিম বার্লিনের (West Berlin) বিরুদ্ধে অবরোধ শুরু করেন; আর সে সময়ে পশ্চিম বার্লিন এলাকা ছিল তৎকালীন মিত্রশক্তি যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু পুরো এলাকাটি অবস্থিত ছিল সোভিয়েত নিয়ন্ত্রিত পূর্ব জার্মানিতে। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবার কথা, তবে সেখানে যে ধরনের সংঘর্ষ হবার শঙ্কা করা হচ্ছিল তা এড়ানো গিয়েছে। কিন্তু ওই সংকট সোভিয়েত শক্তিকে রুখে দেবার জন্য বেশ কিছু দেশকে সামরিক সহযোগিতার ব্যাপারে একত্র হতে ভূমিকা রেখেছিল, যা একটি রাজনৈতিক ও সামরিক জোট সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

এর প্রেক্ষিতে ১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল উত্তর আমেরিকার ১২ টি দেশ ও ইউরোপের ১০ টি দেশ মিলে এই রাজনৈতিক ও সামরিক জোট গঠন করে।

ন্যাটোর সদস্য হওয়ার শর্ত কী : বর্তমানে যে কোনো ইউরোপিয়ান দেশের জন্য সদস্যপদ গ্রহণ উন্মুক্ত রয়েছে যদি সে দেশগুলো নিরাপত্তা ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে ন্যাটোর নীতিমালার সাথে সম্মত থাকে। এক্ষেত্রে বিশেষ কোনো চেকলিস্ট নেই।

ন্যাটোর অপারেশন ও মিশন : বেসামরিক জরুরি অপারেশনসহ সংকট ব্যবস্থাপনা অপারেশন এবং মিশনে বিস্তৃত পরিসরে নেটো সক্রিয় ভূমিকা নেয়। এর উদাহরণ লক্ষ করা যায়- আফগানিস্তান, কসোভো, ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা এবং আফ্রিকান ইউনিয়নে সহযোগিতার ক্ষেত্রে।

ন্যাটোর প্রধান ৪ টি ভিত্তি :
১. রাজনৈতক ও সামরিক সহযোগিতা

২. সমন্বিত প্রতিরক্ষা

৩. দ্য ট্রান্সআটলান্টিক লিংক

৪. কৌশলগত ধারণা

ন্যাটোর কার্যক্রম :
ন্যাটো প্রধানত ৪ টি কাজ করে থাকে, এগুলো হলো-

১. সিদ্ধান্ত এবং পরামর্শ

২. অপারেশন এবং মিশন

৩. অংশিদারত্ব

৪. হুমকি মোকাবেলার সক্ষমতা বৃদ্ধি

ন্যাটোর সদস্য দেশ কয়টি? সদস্যভুক্ত দেশগুলোর নামঃ

ন্যাটোর প্রতিষ্ঠাকালীন ১২ টি দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা, নরওয়ে, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, আইসল্যান্ড এবং লুক্সেমবার্গ। ১৯৫২ সালে তুরস্ক এবং গ্রিসকে সদস্য করার মাধ্যমে জোটটি আরও প্রসার লাভ করে। এরপর ১৯৫৫ সালে যুক্ত হয় পশ্চিম জার্মানি (বর্তমান: জার্মানি)। ১৯৮২ সালে ন্যাটোর সদস্য হয় স্পেন। ১৯৯৯ সালে তিনটি দেশ- চেক রিপাবলিক, হাংগেরি এবং পোল্যান্ড যোগ দেয়। ২০০৪ সালে ৭ টি দেশকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া হয়। দেশগুলো হলো- বুলগেরিয়া, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া এবং স্লোভেনিয়া। ২০০৯ সালে আলবানিয়া ও ক্রোয়েশিয়া সদস্যপদ লাভ করে এবং ২০১৭ সালে মন্টিনিগ্রো। ২০২০ সালে সদস্য হয় উত্তর মেসিডোনিয়া।

বর্তমানে ন্যাটো জোটভুক্ত মোট দেশ ৩০ টি।

তালিকাঃ

ক্র: নম্বর দেশ রাজধানী সদস্যপদ পাওয়ার সন
বেলজিয়াম ব্রাসেলস ১৯৪৯
কানাডা ওটাওয়া ১৯৪৯
ডেনমার্ক কোপেনহেগেন ১৯৪৯
ফ্রান্স প্যারিস ১৯৪৯
আইসল্যান্ড রেইকজাভিক ১৯৪৯
ইতালি রোম ১৯৪৯
লুক্সেমবার্গ লুক্সেমবার্গ সিটি ১৯৪৯
নেদারল্যান্ডস অ্যামস্টারডাম ১৯৪৯
নরওয়ে অসলো ১৯৪৯
১০ পর্তুগাল লিসবন ১৯৪৯


১১ যুক্তরাজ্য লন্ডন ১৯৪৯
১২ যুক্তরাষ্ট্র ওয়াশিংটন ডিসি ১৯৪৯
১৩ গ্রিস অ্যাথেন্স ১৯৫২
১৪ তুরস্ক আংকারা ১৯৫২
১৫ জার্মানি বার্লিন ১৯৫৫
১৬ স্পেন মাদরিদ ১৯৮২
১৭ চেক রিপাবলিক প্রগ ১৯৯৯
১৮ হাংগেরি বুডাপেস্ট ১৯৯৯
১৯ পোল্যান্ড ওয়ার-স ১৯৯৯
২০ বুলগেরিয়া সোফিয়া ২০০৪


২১ এস্তোনিয়া তালিন ২০০৪
২২ লাটভিয়া রিগা ২০০৪
২৩ লিথুয়ানিয়া ভিলনিয়াস ২০০৪
২৪ বুকারেস্ট ভিলনিয়াস ২০০৪
২৫ স্লোভাকিয়া ব্রাতিস্লাভা ২০০৪
২৬ স্লোভেনিয়া লুবিয়ানা ২০০৪
২৭ আলবানিয়া তিরানা ২০০৪
২৮ ক্রোয়েশিয়া জাগরেব ২০০৯
২৯ মন্টিনিগ্রো পোদগোরিচা ২০১৭
৩০ উত্তর মেসিডোনিয়া স্কোপজি ২০২০
CBNA24 অনলাইন ডেস্ক প্রতিবেদন (এফএইচ/বিডি)

সংবাদটি শেয়ার করুন