প্রবাসে করোনায় প্রাণ গেল ৪০ বাংলাদেশির ।। করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৪০ প্রবাসী বাংলাদেশি মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন আরও অনেকে।
গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে চীনের উহান শহরে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পর বিদেশে থাকা বাংলাদেশের নাগরিকেরাও এতে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ঠিক কত, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে দিতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পক্ষ থেকে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত প্রকাশিত রিপোর্ট ও আমাদের প্রতিনিধিদের কাছে থেকে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, প্রবাসে করোনায় ৩৬ বাংলাদেশি মারা গেছেন। যুক্তরাজ্য, ইতালি, যুক্তরাস্ট্রই সব চেয়ে বেশী প্রবাসীরা প্রাণ হারিয়েছেন।
মৃত্যুপুরী ভর করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে। করোনাভাইরাসের নরকীয় তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হওয়ার উপক্রম নিউইয়র্কের বাঙালি অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকাগুলো। এমন নগরী হয়তো কেউ আগে দেখেনি। যে নগর জেগে থাকে নিত্য কোলাহলে। ভোরের আলো দেখার আগেই রাস্তায় হাজারো গাড়ির শব্দ, সেখানে আজ লাশের সারি। এক দিনে নিউইয়র্ক নগরীর লাশের মিছিলে যোগ হয়েছেন আটজন স্বদেশি। এ ছাড়া মিশিগানের ড্রেটয়েট সিটি ও নিউজার্সির প্যাটারসনে দুই বাংলাদেশি নারীর মৃত্যুসংবাদ পাওয়া গেছে।
নাইন–ইলেভেনের পর এমন নির্মমতার সাক্ষী হবে নিউইয়র্কবাসী, সেটা হয়তো কেউ কল্পনা করেনি। মৃত্যুর মিছিলে এখন বাংলাদেশিরা। বাড়ছে আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা। চারদিকে শুধু চাপা কষ্ট, কখন কী হয়ে যায়?
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় নিউইয়র্কে আটজন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিউইয়র্কে ২১ বাংলাদেশির মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। দেশটিতে সর্বমোট ২৩ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে।
প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৮ মার্চ মৃত্যু হয়েছে কায়কোবাদ, শফিকুর রহমান মজুমদার, আজিজুর রহমান, মির্জা হুদা, বিজিত কুমার সাহা, মো. শিপন হোসাইন, জায়েদ আলম ও মুতাব্বির চৌধুরী ইসমত। এ ছাড়া মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ড্রেটয়েট সিটি ও নিউজার্সির প্যাটারসনে দুই বাংলাদেশি নারীর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। তাঁদের দুজনের দেশের বাড়ি বৃহত্তর সিলেটে বলে জানা গেছে।
এক দিনে প্রবাসে করোনায় এত বাংলাদেশির মৃত্যুর ঘটনায় কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোকে স্তব্ধ কমিউনিটিতে অনেক প্রবাসীর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাংলা সংবাদমাধ্যমের ইলিয়াস খসরু, ফরিদ আলম, স্বপন হাই ছাড়াও চিকিৎসক ওসমানী, সাবেক ছাত্রনেতা শাহাব উদ্দিন, কমিউনিটি নেতা ফরহাদ আহমেদ চৌধুরীসহ অনেকের জন্য স্বজনেরা দোয়া প্রার্থনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে সর্বশেষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ২৫ জন। মারা গেছে ২ হাজার ৫০৯। নিউইয়র্ক রাজ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত করোনায় নিউইয়র্কে আক্রান্ত হয়েছে ৫৯ হাজারেরও বেশি মানুষ। মারা গেছে৯৬৫ জনের অধিক। (সূত্রঃ ঠিকানা)
ইতালি প্রতিনিধি জানান, করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত ইতালিতে মারা গেছেন এক বাংলাদেশি। গত ২০ মার্চ রাতে করোনাভাইরাসে ইতালির মিলান শহরের বিজুত্তেরিয়ায় ৫০ বছর বয়স বয়সী বাংলাদেশি প্রাণ হারান। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চিকিৎসার পর তিনি মারা যান। পরিবারের সবাইকে নিয়ে মারা যাওয়া ওই ব্যক্তি মিলানে বসবাস করছিলেন।
আকবর হোসেন সুমন নামে আরও একজন রোমে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। রোমের মন্তেভেরদে এলাকায় থাকতেন তিনি। গত ৮ দিন আগে তার শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে।
কামাল হোসেনের দেশের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি এলাকায়। পরিবার নিয়ে লন্ডন থাকেন। ব্যবসায়ীক কাজে রোম এসেছিলেন। সরকারি জরুরি অবস্থায় রোমে অবস্থান করছিলেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে রোমের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়া লোম্বার্দিয়া, তরিনো, ভারেজে, বেরগামোসহ আরও কিছু শহরে বাংলাদেশীদের আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রবাসীদের মাঝে এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।
রোববার যুক্তরাজ্যের লন্ডন হাসপাতালে ৫০ বছর বয়সী এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। তিনি মৌলভীবাজারের বাসিন্দা ছিলেন। এ নিয়ে সেদেশে মারা গেছেন অন্তত সাত বাংলাদেশি।
আরেক বিপর্যস্ত স্পেনের মাদ্রিদে মৃত্যু হয়েছে এক বাংলাদেশির।
কাতারে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যু হয়েছে মৌলভীবাজারের বাসিন্দা বাংলাদেশি নাগরিকের।
এছাড়া আফ্রিকার দেশ লিবিয়া ও গাম্বিয়ায় বাংলাদেশি মারা গেছেন একজন করে।
(সূত্রঃ সমকাল)
সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে গত দুইদিনে সিলেটের আরও চার প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজন যুক্তরাজ্য ও দুইজন যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন। সেই সঙ্গে সিলেটী প্রবাসীদের মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১০ জনে।
গত দুইদিনে মারা যাওয়া প্রবাসীরা হলেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার ইউনিয়নের খাজা কালু গ্রামের মো. মদরিস আলী ও বরইকান্দি গ্রামের সোহেল আহমদ, গোলাপগঞ্জের রনকেলী দক্ষিণভাগের মোদাব্বীর চৌধুরী ইছমত ও হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার মিনহাজপুর গ্রামের আজিজুর রহমান। তাদের প্রত্যেকই ষাটোর্ধ্ব ও করোনাভাইরাস ছাড়াও অন্যান্য রোগে ভুগছিলেন।
রোববার বিকেলে মদরিস আলীর অসুস্থতা বাড়লে তাকে লন্ডানের স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। গত রবিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টআর দিকে লন্ডনের এনফিল শহরের একটি হাসপাতালে মারা যান দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি গ্রামের সোহেল আহমদ। প্রায় এক সপ্তাহ আগে তিনি জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে তার শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে।
গোলাপগঞ্জের প্রবাসী মোদাব্বির চৌধুরী ইছমত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সোমবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১১টার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ইন্তেকাল করেন। তিনি গোলাপগঞ্জ সমিতি নিউইয়র্কের ট্রাস্টিবোর্ডের সদস্য ছিলেন।
গত রবিবার নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার আজিজুর রহমান। করোনাভাইরাস সংক্রমন ছাড়াও তিনি কিডনি রোগে ভুগছিলেন। গত ১৮ মার্চ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
কানাডার টরন্টো ও মন্ট্রিয়লে বেশ ক’জন করোনা ভাইরাসে আত্রান্ত হবার সংবাদ পাওয়া গেছে। ভয়ে, আতংকে আর উৎকন্ঠায় কাটছে প্রবাসীদের প্রতিটি প্রহর। আজ প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে কানাডা প্রবাসীরা ঘরবন্দি।
সি/এসএস