শফিউল্লা যেভাবে লিবিয়া গেলেন, যেভাবে তাকে নির্যাতন করেছিলো
সৌদি প্রবাসী শফিউল্লা ইসলাম, ৩১ বছর বয়সের এ যুবকের বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুর থানায়। তিনি ঐ এলাকার মৃত আব্দুল লতিফ শেখ ও লালমতি বেগমের সন্তান। তার আরও চারটি ভাই ও ১টি বোন আছে। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা শফিউল্লা ইসলাম একসময় প্লাম্বারের কাজ করতেন। তারপর অর্থনৈতিক উন্নয়ন আনতে সৌদি আরবে পাড়ি দেন। সেখানে ৬ বছর থাকার পর তার মনে হয়েছে ইউরোপের কোনো দেশে গেলে হয়তো তার অর্থনৈতিক অবস্থার আরও উন্নতি হবে। তাই সেখানে থেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু করেন ইতালি যাওয়ার। বৈধভাবে কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে এক বন্ধুর মাধ্যমে খোঁজ পান মাদারীপুরের বাদশা মিয়ার। সেই বাদশা মিয়ার মাধ্যমে ১৩ লাখ টাকা চুক্তি করে নগদ সাত লাখ টাকা দিয়ে তার মাধ্যমে ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
তিনি আগে থেকেই জানতেন কয়েকটি দেশ ঘুরিয়ে তাকে ইতালি পৌঁছে দেয়া হবে।
আর সেখানে পৌঁছার পর বাকি টাকা পরিশোধ করতে হবে। গত মাসের ৪ তারিখ তিনি স্বপ্নের দেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।
প্রথমে দুবাই, তারপর সিরিয়া এবং পরে মিসরাত ভালোভাবেই যেতে পেরেছিলেন। লিবিয়ার মিসরাত যাওয়ার পর শফিউল্লা’র ভাগ্যে কি অপেক্ষা করছিল সেটি তিনি জানতেন না। ইতালি যাওয়া তো দূরের কথা ১৬ দিনের ক্ষুধার্ত শরীর, মিসরাতের মানব পাচারের দালালদের ইলেক্ট্রিক শক, লাথি ঘুষি, মাথা দিয়ে দেওয়ালে ঠুকে অমানবিক নির্যাতনের একেকটা দিন তার কাছে মৃত্যুপুরীর মতো মনে হয়েছে। দালালদের উদ্দেশ্য ছিল মারধর ও নির্যাতন করে তার কাছ থেকে টাকা আদায় করা। তাইতো কখন সেখান থেকে মুক্তি পাবেন আর প্রিয়জনের কাছে ফিরে আসবেন সেই কান্নাজড়িত আকুতিতে তার প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ পার হয়েছে। অবশেষে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগের হস্তক্ষেপে লিবিয়ার টর্চার সেল থেকে মুক্তি মিলে শফিউল্লা’র।
ডিবি’র তেজগাঁও ডিভিশন শফিউল্লাকে লিবিয়া পাঠিয়ে নির্যাতন করা ও তাকে পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে দু’জন দালালকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলো- বাদশা এবং রাজিব মোল্লা। তারা দু’জন সম্পর্কে চাচাতো ভাই।
ডিবি তেজগাঁও ডিভিশনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আনিচ উদ্দীন বলেন, অন্তত ৫শ’ মানুষকে তারা লিবিয়ায় পাচার করেছে। মানব পাচার করে নির্যাতন করে যে টাকা আদায় করেছে এসব টাকা দিয়ে তারা বিলাসী জীবনযাপন করতো।
সুত্রঃ মানবজমিন