ফিচার্ড লেখালেখি

সাংবাদিকতায় কমলগঞ্জ :গৌরবের অতীত ও বর্তমান  —সৈয়দ মাসুম 

সাংবাদিকতায় কমলগঞ্জ :গৌরবের অতীত ও বর্তমান  সৈয়দ মাসুম 

সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার চারণভূমি খ্যাত কমলগঞ্জের সাংবাদিকতার ইতিহাস তেমন পুরোনো না হলেও চারণভূমি বলা যাবে না কোন ভাবেই। ব্রিটিশ শাসনের শেষ ভাগে এসে এই এলাকার বেশ কয়েকজন স্বনামধন্য মানুষ সাংবাদিকতার মত কাজকে পেশা হিসাবে বেছে নেন।স্বাধীনতা পূর্ব ও পরবর্তী সময়ও এই ধারা অব্যাহত থাকে। 
বর্তমান সময়েও কমলগঞ্জে জন্ম নেওয়া এমন কিছু সাংবাদিক রয়েছেন যারা জাতীয় পর্যায়ে যে সকল সাংবাদিক সংবাদপত্রে কাজ করছেন কর্মক্ষতায় ও মর্যাদায় এদের চেয়ে এরা কোন অংশেই কম নয়। 
ব্রিটিশ শাসনামলে এই এলাকায় সাংবাদিকতার যে একটি বুনিয়াদ গড়ে উঠে এই ধারাটি এখনও অব্যাহত রয়েছে। 
মুন্সিবাজার ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামের নগেন্দ্র চন্দ্র শ্যাম যিনি বিগত শতাব্দীর ত্রিশের দশকে আসামের শিলচর থেকে ‘মাসিক ভবিষ্যৎ’ নামে একটি জনপ্রিয় পত্রিকা সম্পাদনা করতেন এই শ্যাম বাবু হচ্ছেন অত্র এলাকার সাংবাদিকতা পেশায় আত্মনিয়োগকারী প্রথম ব্যক্তি। মূলপেশা আইন ব্যবসা হলেও শিলচরে বসবাসকরা কমলগঞ্জের শ্যাম বাবু  সংবাদপত্র সেবাটাকেও আঁকড়ে ধরে থাকেন। ১৯৩৬খ্রিস্টাব্দে এসে তিনি শিলচর থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক সুরমা ’ পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। এই সময়ে ‘সাপ্তাহিক সুরমা’ শুধু আসামের বাঙালিদের মধ্যেই নয় বাংলার পূর্বাংশের বাঙালিদের মধ্যেও ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি পত্রিকা। শ্রী কমুদ রঞ্জন ভট্টাচার্য্য প্রণীত ‘সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় শ্রীহট্টের অবদান ’শীর্ষক গ্রন্থ থেকে জানা যায় ’ শিলচরের লব্ধ প্রতিষ্ঠিত এ্যাডভোকেট নগেন্দ্র চন্দ্র শ্যাম ছিলেন সেই অঞ্চলের সাহিত্য ও সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক। ইনি আনুমানিক ১৮৯০খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এল. পাশ করে আইন ব্যবসা আরম্ভ করেন- – -‘সুরমা’ ‘জনশক্তি’প্রভৃতি প্রভাবশালী সাপ্তাহিকের সম্পাদকমন্ডলীতে তাঁহার স্থান ছিল।’ গবেষক অধ্যক্ষ রসময় মোহান্তের বিভিন্ন লেখায় বাবু নগেন্দ্র চন্দ্র শ্যামকে কমলগঞ্জের প্রথম সাংবাদিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে ।
ঠিক তাঁর সমসাময়িক সময়ে মুন্সি আশরাফ হোসেন সাহিত্যরত্ন যিনি লোক সাহিত্য সংগ্রাহক হিসাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত তিনিও সংবাদপত্রে লেখালেখি করতেন। পরবর্তী সময়ে গোলাম আকবর সাহিত্য ভূষণকেও সাংবাদিকতায় দেখা যায় তবে পেশাদার সাংবাদিক বলতে যা বুঝায় এই দুই কিংবদন্তিতুল্য লোক সাহিত্যিক তা ছিলেন না। 
উপমহাদেশের স্বাধীনতাত্তোর সময়ে ‘শ্রীহট্ট সাহিত্য পরিষদ ’ পত্রিকার খুব নাম ডাক ছিল আর এই পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন কমলগঞ্জের আরও একজন কৃতি সাংবাদিক কৃষ্ণ বিহারি রায় চৌধুরী। 
আমরা মূলত ব্রিটিশ শাসনামলে কমলগঞ্জ উপজেলার বাবু নগেন্দ্র চন্দ্র শ্যাম ও কৃষ্ণ বিহারি রায় চৌধুরী এই দুইজনকে এতদঅঞ্চলের সাংবাদিকতার পথিকৃৎ হিসাবে ধরে নিতে পারি।
পাকিস্তানি শাসন শুরু হওয়ার পরপরই কমলগঞ্জ এলাকায় বড় কোন সাংবাদিকের দেখা না গেলেও সেই সময়ের ছাত্র নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াস ও মফিজ আলী প্রমুখ মাঝেমধ্যে পত্রিকায় লেখালেখি করতেন বলে জানা যায়। 
পঞ্চাশের দশকে বিশিষ্ট চা শ্রমিক নেতা সীতারাম বর্মা ‘শোষিত পোকার ’নামক একটি পত্রিকা একাধারে তিন বছর সম্পাদনা করেন। 
এই সময় কমলগঞ্জ এলাকার যারাই সাংবাদিকতা করতেন তাঁদের প্রত্যেকেই ছিলেন বাম ঘরানার। পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ ,নির্যাতন বিরোধী আর প্রগতিশীল খবরা খবর দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাংবাদিকদের মত এদেরও লেখায় প্রাধান্য পেত। 
স্বাধিকার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনে আমাদের ধাবিত করে ষাট দশকের সাংস্কৃতিক বিপ্লব,সাহিত্য ও সংবাদ মাধ্যম আর এই সময়ে এসে কমলগঞ্জ উপজেলায় দুই প্ৰতিথযশা সাংবাদিকের উপস্থিতি আমরা দেখতে পাই যাদের পরিচিতি ছিল শুধু এলাকায়ই নয় বৃহত্তর সিলেটসহ দেশের প্রায় সর্বত্র। তাঁদের একজন হচ্ছেন বরেণ্য সাংবাদিক সৈয়দ মতিউর রহমান। তিনি তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসাবে কাজ করতেন। ন্যাপের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত সৈয়দ মতিউর রহমানের লেখা কলাম সমূহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে মানুষদের উজ্জীবিত করত। অন্যজন হচ্ছেন ডাঃ আবু কায়সার খান। কবি ও লেখক জনাব খান সিলেট অঞ্চলে একজন শক্তিশালী সাংবাদিক হিসাবেও পরিচিত ছিলেন। জনাব আবু কায়সার খান এক সময় কলকাতা থেকে প্রকাশিত ’কম্পাস’ নামক একটি পত্রিকার সহকারী সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেন । এই সময় আরও একজন মানুষ লেখালেখি আর রাজনীতির পাশাপাশি সাংবাদিতার সাথেও জড়িত ছিলেন তিনি হচ্ছেন কমলগঞ্জ পৌরসভাধীন গোবর্দ্ধন পুর গ্রামের কবি নওয়াব আহমেদ। পাকিস্তানী শাসনামল থেকেই তিনি পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখতেন। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে এই কাজ থেকে শারীরিক কারনে একটু বিচ্ছিন্ন হলেও তাঁরই সম্পাদনায় ১৯৮৫খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রকাশিত কমলগঞ্জের প্রথম সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ধলাইর ডাক’ প্রকাশিত হয়। তিনি বেশ কিছুদিন এই পত্রিকার সাথে জড়িত ছিলেন। 
আমাদের সুমহান মুক্তিযুদ্ধেও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত এই অঞ্চলের সাংবাদিকদের রয়েছে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান। মুজিবনগর সরকার কর্তৃক স্বীকৃত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সৈয়দ মতিউর রহমান সেই সময় শুধু কলম দিয়েই কাজ করেননি একজন বলিষ্ঠ মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক হিসাবে শুধু কমলগঞ্জেই নয় পুরো চার নম্বর সেক্টরে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
স্বাধীনতাত্তোর কালে এই অঞ্চলে যে কয়েকজন মানুষ পেশাদার সাংবাদিক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন সুধেন্দু শেখর দেবরায় বাবুল,  ইসহাক কাজল, মীর লিয়াকত আলী মতি ,আব্দুর রশিদ চৌধুরী মাখন, ফজলুর রহমান, রানা দত্ত, মাহমুদুর রহমান বাচ্চু, আজহার উদ্দীন বাদশা। 
এদের মধ্যে ইসহাক কাজল এক সময়ের সাড়া জাগানো পত্রিকা ’বাংলা বাজার ’ এর মৌলভীবাজার প্রতিনিধি ও যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেন।মৌলভীবাজার জেলার প্রথম দৈনিক পত্রিকা ’খোলা চিঠি’র বার্তা সম্পাদক ছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ’জনমত’ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক হিসাবেও কাজ করেন। বর্ণাঢ্য সাংবাদিকতা জীবনে এই সাংবাদিক 
বিভিন্ন সময় সিলেট প্রেসক্লাব ,লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব ও কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
মীর লিয়াকত আলী সিলেট ও ঢাকায় বেশ কয়েকটি পত্রিকায় কাজ করেছেন। তিনি কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়া তাঁরই নেতৃত্বে ১৯৮২খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ’জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা।’
এই সময় আরও দুইজন শক্তিশালী সাংবাদিকের আবির্ভাব হয় কমলগঞ্জে তাঁদের একজন হলেন অমলেন্দু রায় আর অন্যজন আহমদ সিরাজ।
কমলগঞ্জের সাংবাদিকতার ইতিহাসে আরও একটি অনন্য নাম হচ্ছে সৈয়দ আবু জাফর আহমদ। বাম রাজনীতিবিদ সৈয়দ আবু জাফর আহমদ আশির দশকে নিয়মিত কলাম লিখতেন।মৌলভীবাজার  থেকে এক সময় জেলার স্বনামধন্য পত্রিকা ’মনুবার্তা’ তাঁরই সম্পাদনায় প্রকাশিত হত।
আশির দশকের শুরুতে কমলগঞ্জের আকাশ যে কয়জন গুণী সাংবাদিকের সাংবাদিকতায় আলোকিত হয়ে উঠে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন সত্যব্রত দেব রায় শংকর যিনি সদেরা সুজন নামেও পরিচিত। কমলগঞ্জের  তৃণমূল সাংবাদিতার পথিকৃৎ বলা হয় এই প্ৰ্তিতযশা সাংবাদিককে। ১৯৯১খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রবাসে অবস্থানরত এই সাংবাদিকের সম্পাদনায় এক সময় উত্তর আমেরিকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় পত্রিকা ‘দেশদিগন্ত’প্রকাশিত হত। বর্তমানে কানাডার মন্ট্রিয়লে অবস্থান করা সাংবাদিক সত্যব্রত দেবরায় শংকর কানাডা-বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সির প্রধান নির্বাহী হিসাবে কাজ করছেন। শুধু সাংবাদিকতাই নয় একজন লেখক ,অসংখ্য সংকলন ও সাময়িকীর সম্পাদক হিসাবেও তিনি পশ্চিমা বিশ্বে বাঙালি সমাজের কাছে সম্মানিত ও সমাদৃত।
এই সময়ের আরও কয়েকজন উল্লেখযোগ্য সাংবাদিক হচ্ছেন সাইয়িদ ফখরুল, রঞ্জন সিনহা, এড.আজাদুর রহমান আজাদ, প্রণয় দত্ত  প্রমুখ।
এই দশকের শেষ দিকে এসে যারা সংবাদিতায় আসেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্বজিৎ রায়,আব্দুল হান্নান চিনুও সিকন্দর আলী। বিশ্বজিৎ রায় দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসাবে আঁকড়ে আছেন। তারই বধান্যতায় প্রাপ্ত একখন্ড ভূমির উপর দেশ বিদেশে অবস্থানরত কমলগঞ্জবাসীর অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের স্থায়ী ভবন। 
আব্দুল হান্নান চিনু জন্মগতভাবে রাজনগর উপজেলার মানুষ হলেও তাঁর কর্মক্ষেত্র হচ্ছে কমলগঞ্জ উপজেলা। 
এই উপজেলার মানুষের সাথে তাঁর নাড়ির সম্পর্ক না হলেও রয়েছে আত্মার সম্পর্ক আর এজন্য এতদঞ্চলের মানুষ তাঁকে তাঁদের নিজেদের মানুষ হিসাবেই বিবেচনা করে।
নব্বইর দশককে কমলগঞ্জ উপজেলার সাংবাদিকতায় এক অতি উজ্জ্বল সময়কাল হিসাবে বিবেচনা করা হয়। একঝাঁক মেধাবী মুখের উপস্থিতি এই সময় দেখতে পাওয়া যায়।কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত ’কমলগঞ্জ উপজেলা পরিচিতি’গ্রন্থে কমলগঞ্জের সাংবাদিকতা,সংবাদপত্র ও সাময়িকী শীর্ষক প্রবন্ধে এই সময়ের সাংবাদিকতা সম্পর্কে লেখা হয় ,’বিংশ শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুতেই এক ঝাঁক তরুণ সাংবাদিকতার মহান পেশায় এগিয়ে আসেন। এরা হলেন -সাব্বির এলাহী,  সৈয়দ মছব্বির আলী মাসুম (সৈয়দ মাসুম ), রিংকু মিত্র, সাজিদুর রহমান সাজু,সানোয়ার হোসেন, অলক দেব, এম এ মুকিত, মোশাহিদ আলী মুসু, আব্দুর রাজ্জাক রাজা, এম এ ওয়াহিদ রুলু, প্রণীত রঞ্জন দেবনাথ, মুজিবুর রহমান রঞ্জু, আবুল হোসেন, এস কে সিংহ সংগ্রাম, এম এ মুক্তাদির। এই দশকের মধ্যভাগে সাংবাদিকতা শুরু করেন কে এস খসরু হেলাল, আনসার শোকরানা মান্না, সালেহুর রহমান বুলবুল, সজীব দেবরায়, এস এম হাবিব, বদরুল ইসলাম, এস এম এন মোহিন প্রমুখ। এই দশকের শেষ প্রান্তে সাংবাদিকতায় এগিয়ে আসেন পিন্টু দেব নাথ, তুহিন আহমদ জহির,শৈলেন কুমার দাস, প্রমথ পাল পিনাক, মাহমুদুর রহমান আলতা ও এম এ বারী জালাল। এছাড়া তখন সেলিনা বারী সেলু নামে একজন মহিলা ‘সাপ্তাহিক মনুবার্তা’ পত্রিকায় নিয়মিত সংবাদ প্রেরণ করতেন। পরবর্তীতে শিরীন শীলা নামক আরও একজন এই পেশায় সম্পৃক্ত হন।’(কমলগঞ্জ উপজেলা পরিচিতি পৃষ্ঠা ১৪৩) নব্বইর দশকে সাংবাদিকতায় আসা এই সব তরুণদের মধ্যে দুই একজন এই পেশা থেকে সরে গেলেও বাদবাকি সকলেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এখনও সাংবাদিকতার সাথে জড়িয়ে আছেন। 
এছাড়া এই একই দশকে সাংবাদিকতায় আসেন পতন ঊষারের আলাউর রহমান খান শাহীন। জনাব শাহীন এক সময় সিলেট বেতারে কাজ করলেও বর্তমানে বেশ কয়েকটি অনলাইন মিডিয়ার পাশাপাশি লন্ডনস্থ ইক্বরা টিভির সংবাদ বিভাগে কর্মরত আছেন। 
একবিংশ শতকের শুরুতেই প্রিন্ট মিডিয়ার পাশাপাশি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া সংবাদ ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে পরিণত হয়। দ্রুত মূলধারার ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বৃদ্ধির পাশাপাশি অসংখ্য অনলাইন পত্রিকা ও অনলাইন টিভির সৃষ্টি হয়। 
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও সংবাদপত্র সরবরাহের অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। 
এই পর্যায়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত কমলগঞ্জেরও অসংখ্য তরুণ তরুণী সাংবাদিকতার সাথে জড়িত হয়ে যান। যাদের বেশির ভাগই পেশা হিসাবে নয় নিতান্ত শখের বশে এই কাজে আসেন। 
কেউ কেউ ধারাবাহিকতা রক্ষা করছেন আবার অনেকেই ঝরে পড়ছেন। 
একবিংশ শতকের শুরু থেকেই যারা বলিষ্ঠভাবে এই পেশাকে আঁকড়ে আছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন নুরুল মোহাইমিন মিল্টন, মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, জয়নাল আবেদীন, নজরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান মিস্টার, বুলবুল আহমেদ, এবাদুল হক রুহেল,আব্দুল হাই ইদ্রিসী, সালাহ উদ্দিন শুভ, মোনায়েম খান প্রমুখ। 
কমলগঞ্জ থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে তাঁর মধ্যে অন্যতম হলো ‘ধলাইর ডাক’ ও ‘কমলগঞ্জ সংবাদ ‘পত্রিকা। দুঃখের বিষয় হচ্ছে এর কোনটিই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেনি। দুই একটি এখন অনলাইনে প্রকাশিত হচ্ছে বলে জানা যায়। সদেরা সুজনের সম্পাদনায় কানাডা বাংলাদেশ নিউজ এজন্সি সিবিএনএ যা একমাত্র কানাডার বাংলাদেশি সংবাদ সংস্থার পাশাপাশি খুবই জনপ্রিয় অনলাইন সংবাদপত্র সিবিএনএ২৪ডটকম এর পাশাপাশি  এই উপজেলার এখনকার প্রজন্মের সাংবাদিক তুহিন আহমেদ জহিরের সম্পাদনায় বর্তমানে যুক্তরাজ্য থেকে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ’কমলগঞ্জ বার্তা’ আর বুলবুল আহমেদের সম্পাদনায় যুক্তরাজ্য থেকে ‘দি সিলেট পোষ্ট’ নামে আরও একটি নিউজ পোর্টাল প্রকাশিত হচ্ছে। কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জুয়েল আহমদও এক সময় সাংবাদিকতায় জড়িত ছিলেন। বর্তমানে এই পেশায় না থাকলেও তিনি সর্ব মহলে সাংবাদিক বান্ধব হিসাবে পরিচিত। 
তথ্যসূত্র: 
সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় শ্রীহট্টের অবদান :কমুদ রঞ্জন ভট্টাচার্য্য 
সিলেটের শতবর্ষের সাংবাদিকতা -মহিউদ্দিন শিরু 
সাপ্তাহিক সিলেট সংবাদ (কমলগঞ্জ সংক্রান্ত বিশেষ সংখ্যা -১৯৯১ আ ফ ম সাঈদ সম্পাদিত 
কমলিকা -১৯৮৬ সত্যব্রত দেবরায় শংকর সম্পাদিত 
কমলগঞ্জ উপজেলা পরিচিতি ২০১৫ কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত 
কমলগঞ্জ :আমার দেখা চার দশক -সৈয়দ মাসুম বাংলামেইল জুলাই ২০১৯ যুক্তরাজ্য।
সংবাদটি শেয়ার করুন