ফিচার্ড মত-মতান্তর

‘কাশ্মীর ফাইলস’, কেরালা স্টোরী পর অপেক্ষা ‘বেঙ্গল ট্র্রুথ’ দেখার! ।।।। শিতাংশু গুহ

বাংলাদেশের-ভবিষ্যৎ-কি

কাশ্মীর ফাইলস’, কেরালা স্টোরী পর অপেক্ষা ‘বেঙ্গল ট্র্রুথ’ দেখার! ।।।। শিতাংশু গুহ

বড় পর্দায় ‘দি কেরালা স্টোরী’ দেখার পর আমার মনে হয়েছে, এতে নুতন কি আছে, সব ঘটনা সবার জানা, ‘লাভ-জ্বিহাদ’ বা আইসিস’র নৃশংসতা ‘ওপেন সিক্রেট’, একশ’ শতাংশ সত্য, ম্যুভি’র নির্মাতারা একটু বড় পরিসরে প্রকাশ করেছেন মাত্র। তাঁরা বলেছেন, সত্য ঘটনা অবলম্বনে ছবিটি নির্মিত, যাঁদের নিয়ে এই ছবি তাঁদের বর্তমান অবস্থানও জানিয়েছেন। সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে, তবে ঘটনা ‘হাসিয়া উড়াইয়া’ দেয়ার মত কোন কারণ নেই? ম্যুভি হলে বসে ছবিটি দেখতে দেখতে আমার শুধু বাংলাদেশে ‘ফাঁদে পড়ে’  ধর্মান্তরিত হতভাগ্য হিন্দু মেয়েদের কথা মনে হচ্ছিলো।

‘দি কেরালা স্টোরী’-কে অনেকেই অতিরঞ্জিত বলছেন, কেউ কেউ ‘ইসলামোফোবিয়া’ বলবেন, কিন্তু হিজাবী নায়িকার কথাগুলো আমরা বা বাংলাদেশের হিন্দুরা কি প্রতিনিয়ত শুনছে না? ওয়াজে হুজুররা তো এসব কথা বলেই চলেছেন। বাংলাদেশে যে হাজারো নাবালিকা হিন্দু মেয়ে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত হচ্ছে, কেরালা স্টোরীর কাহিনী কি এরসাথে সাদৃশ্য নয়? গ্রাম্য চক্রান্ত, মাতব্বর-হুজুরের ভূমিকা কি খুবই ভিন্ন? মেয়েদের প্রেগন্যান্ট করে ধর্মান্তর ও বিয়ের ঘটনা বাংলাদেশ বা ভারতীয় উপমহাদেশে অজস্র। কেরালা স্টোরিতে লাভ-জ্বিহাদ ও ধর্মান্তকরণ প্রক্রিয়া বাংলাদেশের সাথে মিল আছে, আইসিস অংশে মিল্ নেই।

অনেকেই হয়তো আমার সাথে একমত হবেন না, প্রয়োজনও নেই, তবু তাঁদের জন্যে বলছি, বাংলাদেশের বিনোদন জগতে ‘পূর্ণিমা সেন থেকে অপু বিশ্বাস পর্যন্ত সকল নায়িকাকে ধর্মান্তরিত হতে হয়েছিলো’ এবং এটি অশিক্ষিতরা করেনি, সমাজের উচ্চস্তরের মানুষ করেছে। বাস্তবতা হচ্ছে, আজকে বাংলাদেশে হিন্দু মেয়ের মা-বাবা ‘লাভ-জ্বিহাদ’ নামক এক আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করেন, কারণ তাঁরা জানেন, কিছু ঘটে গেলে কেউ এগিয়ে আসবেন না! এ কারণে এ ম্যুভি সবার দেখা উচিত। ধারণা করি, কেরালা স্টোরী কিছুটা হলেও সামাজিক সচেতনতা আনবে, অনেক মেয়ে রক্ষা পাবে।

কেরালা রাজ্যকে ইসলামী রাজ্যে পরিণত করার পরিকল্পনা অশ্রুতপূর্ব কোন ঘটনা নয়, পশ্চিমবঙ্গের জন্যেও একই কথা প্রযোজ্য। এটি একটি চলমান পরিকল্পিত প্রক্রিয়া। এজন্যে  বিরাট অর্থ ব্যয় হয়? মেয়েদের ধর্মান্তকরণ এর একটি ক্ষুদ্র অংশ, এজন্যে মুসলিম দেশগুলোতে ‘নও মুসলমান’ ফান্ড থাকে। কেরালা স্টোরিতে কেরালাকে ইসলামীকরণ চক্রান্ত তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের দেশে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অর্ধ-শতাব্দীতে আদিবাসীরা ৯৮% থেকে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছেন, আরো কিছুটা সময় পর হয়তো তাঁরা হারিয়ে যাবেন এবং এ কাজটি সকল সরকার, প্রগতিশীল-প্রতিক্রিয়াশীল সবাই মিলেই করছেন।

ম্যুভি হিসাবে ‘দি কেরালা স্টোরী’ দর্শক ধরে রাখতে সক্ষম। এটি দেখতে দেখতে আমার বাংলাদেশের কথাই বারবার মনে হয়েছে। কাশ্মীর ফাইলস দেখার পর আমার মনে হয়েছিলো, ভারতীয়রা এতটা ‘নির্বোধ’ ক্যামনে হয়? এখন অপেক্ষায় আছি ‘বেঙ্গল ট্র্রুথ’ দেখার, কারণ বাংলার ঘটনা কাশ্মীর বা কেরালা থেকে অনেক ভয়াবহ। বাংলার হিন্দুরা ১৯০৫ থেকে অত্যাচারিত হয়ে আসছে। ১৯৪৬’র ডাইরেক্ট একশান ডে, নোয়াখালী রায়ট, বরিশাল, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ দাঙ্গা বা ১৯৭১-এ হিন্দুদের টার্গেট করে হত্যা, এবং গত ৫২ বছরের নির্যাতনের ঘটনা মানুষের জানার অধিকার আছে।

ম্যুভিটি দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, বাংলাদেশের নাবালিকা হিন্দু রমণী ধর্মান্তরিতকরণের সাথে কেরালা বা পশ্চিমবঙ্গ, বা পুরো ভারত, অথবা ইউরোপ-আমেরিকা বা সর্বত্র বিধর্মী মেয়েদের ধর্মান্তরিতকরণের কি কোন তফাৎ আছে? চিন্তা, মনন তো একই, প্রক্রিয়া হয়তো ভিন্ন। লাভ জ্বিহাদ সত্য, এনিয়ে কারো সংশয় থাকার কথা নয়! ‘দি কেরালা স্টোরি’ মূলত: লাভ-জ্বিহাদ এবং আইসিস। ঘটনা জমজমাট। আইসিস, আল-কায়দা, বা ইত্যাকার ইসলামী সন্ত্রাসী সংগঠনের অত্যাচারের বীভৎসতা মানুষ জানে। এ ধরণের আরো ম্যুভি হোক, মানুষ জানুক, নুতন প্রজন্ম ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিক, ধর্মের নামে অধর্ম বন্ধ হোক।

সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরী এ ম্যুভি দর্শক মনোরঞ্জনের কারণে হয়তো কিছুটা অতিরঞ্জিত, যা সিনেমায় সচরাচর ঘটে থাকে, কিন্তু কেরালার ইসলামীকরণ এবং সেই লক্ষ্যে  লাভ-জ্বিহাদ অতিশয় সত্য। একই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের জন্যে সত্য। বাংলাদেশের জন্যে সত্য। পুরো পৃথিবীর জন্যে সত্য। কেরালার সব মেয়ে লাভ-জ্বিহাদের শিকার তা নয়, লোভ-লালসা, যৌনতা, উচ্চাকাঙ্খা সবই আছে, কিন্তু হিন্দুমেয়ে মুসলমান কনভার্ট করে বেহেশতে যাওয়া, বা ভারতসহ, পুরো বিশ্বকে ইসলামীকরণের সুপ্ত আকাঙ্খা তো মিথ্যা নয়! হুজুররা তো এসব কথা প্রকাশ্যেই বলে বেড়াচ্ছেন।

মমতা ব্যানার্জী পশ্চিমবঙ্গে  ‘দি কেরালা স্টোরি’ নিষিদ্ধ করেছেন। এজন্যে মমতা ব্যানার্জীকে সাম্প্রদায়িক ভাবার কোন কারণ নেই, তিনি ‘ফারুক আবদুল্লাহর’ মতই মহান অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্ব। মমতা ম্যুভিটি নিষিদ্ধ করেছেন তাঁর ভোটব্যাঙ্ক ‘দুধেল গাই’-দের সন্তুষ্ট রাখতে। ভারতবর্ষের প্রগতিশীলরা কাশ্মীর থেকে পন্ডিতদের খেদিয়ে দিলে, কেরালা ইসলামী রাজ্য হলে, বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা বিতাড়িত হলে কিচ্ছু মনে করেন না, কারণ তাঁদের পূর্ব-পুরুষরা মোঘলদের দাসত্ব করে এসেছেন, তারাও তাই করছেন! মমতা ব্যানার্জী, মহুয়া মৈত্র বা স্বরা ভাস্বর-রা এই ম্যুভি নিষিদ্ধের পক্ষে থাকবেন এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু কতকাল সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রাখা যাবে? ‘দি কেরালা স্টোরি’ সফল হোক।  [email protected];

 



এসএস/সিএ
সংবাদটি শেয়ার করুন