সুগন্ধার তীরে স্বজনদের আর্তনাদ
নূরে আলম জিকু ও একেএম মোতালেব হোসেন, ঝালকাঠি থেকে ।। সুগন্ধা নদীর তীরে চলছে স্বজনহারা মানুষের আর্তনাদ। নদীতে কিছু ভেসে যাচ্ছে কিনা সেদিকে দৃষ্টি তাদের। দৃশ্যমান কোনো বস্তু দেখলেই ট্রলারযোগে ছুটে যাচ্ছেন সেখানে। খুঁজছেন প্রিয়জনকে। এই বুঝি ভেসে গেল কারও বাবা-মা কিংবা কারও ছেলেমেয়ে। কেউ কেউ সদ্যজাত নাড়ি ছেঁড়া সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায়। শেষবারের মতো দেখতে চাচ্ছেন প্রিয় মানুষের মুখ। ঝালকাঠি জেলার সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ৪১ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে।
শুক্রবার বিকালের পর থেকে শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত নতুন করে উদ্ধার হয়নি কেউ। এদিকে সময়ের সঙ্গে দীর্ঘ হচ্ছে নিখোঁজের তালিকা। প্রিয়জনের কোনো খোঁজ না পেয়ে বরগুনা থেকে ঝালকাঠিতে ছুটে আসছেন সবাই। কেউ কেউ ছবি কিংবা কোনো স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে ঘুরছেন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে। নদীর পাড়, পুড়ে যাওয়া লঞ্চ, হাসপাতাল, থানা, ফায়ার সার্ভিস সহ সম্ভাব্য স্থানে যে যেভাবে পারছেন খুঁজে বেড়াচ্ছেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের। কোথাও মিলেনি তাদের সন্ধান। গত ২ দিন খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত সবাই। তবুও হাল ছাড়েননি তারা। এই যদি মিলে যায় কোনো আশার খবর। কিন্তু না গতকাল সন্ধ্যা নামতেই স্বজনদের অনেকেই ফিরেছেন শূন্যহাতে। তাদের মধ্যে অনেকেই শোকে পাথর। হারিয়ে ফেলেছেন কথা বলার ভাষাও। কয়েকজন আত্মচিৎকার করে স্বজনদের অন্তত লাশটি ফিরে পেতে চাইছেন।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন আরও অনেকে। গতকাল ভোরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযানে নেমেও নতুন কোনো লাশ কিংবা জীবিত কাউকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি।
বরিশাল থেকে আসা ফায়ার সার্ভিস বিভাগের ৫ সদস্যের ডুবুরি দলের নেতা হুমায়ুন কবির গতকাল বিকালে মানবজমিনকে বলেন, শনিবার সকাল ৯টা থেকে উদ্ধার অভিযানে নেমে কাউকে পাওয়া যায়নি। আমরা বার বার ঝালকাঠি লঞ্চঘাট থেকে দুর্ঘটনাস্থল পর্যন্ত পুরো নদীতে আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। কোথাও কোনো লাশ পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, নিখোঁজদের কেউ যদি পানিতে ডুবে থাকে তাহলে তারা ভেসে উঠবে। এখন শীতের কারণে ভেসে উঠতে বিলম্ব হচ্ছে। পানি বেশি ঠাণ্ডা হওয়ার কারণে ২/৩ দিন পানির নিচে ডুবে থাকতে পারে। যদি কেউ থেকে থাকে তাহলে শনিবার রাত কিংবা রোববার সকালে ভেসে উঠতে পারে। আমাদের অভিযান চলমান থাকবে। কোনো মরদেহ ভেসে উঠলে আমরা তা উদ্ধার করবো।
এদিকে শনিবার সকাল থেকে স্বজনহারা ব্যক্তিরা ট্রলারযোগে সুগন্ধা নদীর দুই তীরে খুঁজতে থাকেন তাদের আপনজনকে। না পেয়ে পুড়ে যাওয়া লঞ্চের কাছে আহাজারি করেন তারা। তবে উদ্ধারকারীদের কাজে সন্তুষ্ট নন তারা। নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজে আসারা বলছেন, শুক্রবার রাতে কোনো উদ্ধার সংস্থার তৎপরতা দেখা যায়নি। রাতে কিংবা পরদিন কাউকে উদ্ধার করতে পারেনি দায়িত্বে থাকা বাহিনী। তবে ঘটনাস্থলে থাকা বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক বেলাল উদ্দিন বলেন, আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ঘটনার পর থেকে আমরা উদ্ধার অভিযানে আছি। শনিবার সারাদিনও অভিযান অব্যাহত ছিল।
এদিকে এমভি অভিযান ১০-এ হতাহতের ঘটনায় শুক্রবার রাতে ঝালকাঠি থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। মামলার নম্বর ২৯। মামলার বাদী হয়েছেন পোনাবালিয়া ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ মো. জাহাঙ্গীর। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল সন্ধ্যায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মামলার আর্জিতে কি কি তথ্য আছে তা আমার জানা নেই। ওসি আমাকে মামলার কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেছেন, আমি করেছি। তবে হতাহতের পরিবারগুলো বলছে এই মামলা রহস্যজনক। বড় একটি দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষ মারা যাওয়া ও নিখোঁজ থাকার পরেও অপমৃত্যুর মামলা হতে পারে না বলে দাবি করেন তারা। শুক্রবার রাতে ঝালকাঠি থানার ওসি মো. খলিলুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, লঞ্চ দুর্ঘটনার ঘটনায় পোনাবালিয়া ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর একটি অপমৃত্যু মামলা করেছে।
এদিকে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শাজাহান খান শনিবার সকালে পুড়ে যাওয়া লঞ্চটি পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তিনি বলেন, আমার মনে হচ্ছে ‘অভিযান-১০’ নামের লঞ্চে আগুন ক্যান্টিন থেকে নয়, ইঞ্জিনের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে সংবাদগুলো আমরা দেখেছি, সেগুলো আমলে নিয়ে পর্যালোচনা করে এবং লঞ্চটি পরিদর্শন করে কাজ করছে তদন্ত কমিটি।
দুপুরে ঘটনাস্থলে আসেন নৌ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক যুগ্ম সচিব তোফায়েল আহমেদ। তিনি জানান, যা কিছু দেখছি, সবই প্রাথমিক তদন্ত। চূড়ান্ত ভাবে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। ওই সময় নৌ মন্ত্রণালয়ের ৭ সদস্য, ফায়ার সার্ভিসের ৫ সদস্য এবং জেলা প্রশাসনের ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যরা লঞ্চটি পরিদর্শন করে। ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান উপ-পরিচালক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, লঞ্চের ছয়টি সিলিন্ডারের মধ্যে একটিতে বিস্ফোরণ হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।
লঞ্চে কতো যাত্রী ছিল?: ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ ও আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। নিখোঁজদের সন্ধানে বরগুনা-ঝালকাঠি ছুটাছুটি করছেন স্বজনরা। ক্রমেই বাড়ছে স্বজনের সংখ্যা। ফলে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন লঞ্চের যাত্রী সংখ্যা নিয়ে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা এমভি অভিযান লঞ্চে এক হাজার থেকে ১২শ’ যাত্রী ছিল। লঞ্চের স্টাফ সংখ্যা ছিল ৪৬ জন। নাম প্রকাশ করা না শর্তে লঞ্চের এক কর্মকর্তা এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, সরকারি ছুটির দিন হওয়ার কারণে লঞ্চে যাত্রী সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। শীতকাল হওয়ার কারণে সবাই ঘুমিয়ে ছিল। কেবিনগুলো ছিল পরিপূর্ণ। যাত্রীদের চাপের কারণেই স্টাফ কেবিনগুলোও ভাড়া হয়েছিল। সেলিম নামের এক যাত্রী বলেন, এই রুটে নিয়মিতভাবে প্রতিটি লঞ্চে হাজারের বেশি যাত্রী থাকে। বৃহস্পতিবারও লঞ্চটি কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। আগুন লাগার পর মানুষ ঠেলাঠেলি করছে। নামার মতো জায়গা ছিল না। ফলে অধিকাংশ যাত্রী নামতে পারেনি। আমার মতো যারা পানিতে লাফিয়ে পড়ছেন তাদের অনেকেই উদ্ধার হয়নি। বেঁচে ফেরা লঞ্চের আরেক যাত্রী মিজান মল্লিক বলেন, লঞ্চের ডেকেই ৭/৮ শ’ যাত্রী ছিল। আমি ২য় তলায় জায়গা না পেয়ে নিচ তলায় বিছানা করে ছিলাম। ইঞ্জিন রুম থেকে আগুন দাউ দাউ করে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়ে। আমি পানিতে লাফিয়ে পড়ি। কয়েক মিনিট পানিতে ভেসে ছিলাম। ২ তলা থেকে কয়েক শতাধিক মানুষ পানিতে লাফিয়ে পড়েছে। আমি কাউকে বাঁচাতে পারিনি। উপরে উঠে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এদিকে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া ফায়ার সার্ভিস বলছে, লঞ্চটিতে কতো সংখ্যক যাত্রী ছিল তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। পুড়ে যাওয়া লঞ্চের যাত্রী সংখ্যারও কোনো তথ্য নেই মালিক পক্ষের কাছেও। তবে ফায়ার সার্ভিসের একটি সূত্র বলছে, লঞ্চের কেবিনগুলোতে তেমন একটা মরদেহ পাওয়া যায়নি। কেবিনে থাকা যাত্রীরা পুড়ে টাইলস-এর সঙ্গে মিশে গেছে।
এত মৃত্যু কেন?
এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে মৃত্যুসংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন অনেকে। নিখোঁজের সংখ্যাও রয়েছে অজানা। ঢাকা-ঝালকাঠি-বরগুনা এই রুটের একাধিক লঞ্চ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই নৌ-রুটে স্মরণকালের একটি বড় দুর্ঘটনা। বিগত সময়ে এমন অগ্নি দুর্ঘটনা আর ঘটেনি। দুর্ঘটনায় বেঁচে ফেরা একাধিক যাত্রী বলেন, এ জন্য দায়ী লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। ত্রুটিপূর্ণ বাহন চালিয়ে এত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। লঞ্চের ইঞ্চিন রুম থেকে পুরো লঞ্চে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ দিগ্বিদিক ছুটতে থাকলে লঞ্চের স্টাফরা গেট আটকিয়ে রাখে। তারা তখনো ভাড়া কাটছিলো। মানুষ নেমে যেতে চাইলে তারা টিকিটের জন্য আটকিয়েছে। এতে মানুষ পানিতেও ঝাঁপ দিতে পারেনি। ফলে অনেক মানুষ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ইঞ্চিন বন্ধ থাকায় স্রোতের কারণে লঞ্চ পেছনের দিকে চলে গেছে। একপাশ থেকে আরেক পাশে ঘুরছে। অল্প কিছু সংখ্যক মানুষ লাফিয়ে পাড়ে নেমেছে। বাকিরা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। লঞ্চের ধোঁয়া ও কুয়াশায় মানুষ নদীর কুল কিনারা খুঁজে পায়নি। অনেকেই উঠতে পারেনি। অনেকেই সাঁতার না জানায় ডুবে গেছে। এ ছাড়া কেবিনে থাকা যাত্রীরা তেমন একটা বের হতে পারেনি। ফলে কেবিনেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এদিকে গতকাল বিকালে লঞ্চের কেবিনের চাবি ফেরত দিতে আসছেন বরগুনার আবুল কালাম। তিনি ঘটনার দিন ওই লঞ্চের তৃতীয় তলায় ৩২৮ নম্বর কেবিনে ছিলেন। তবে লঞ্চের কাউকে না পেয়ে চাবি নিয়ে ফিরে যান। তিনি বলেন, লঞ্চ কর্তৃপক্ষ চাইলে সেইদিন সব যাত্রীকে বাঁচাতে পারতো। তাদের অবহেলার কারণে বহু মানুষ বিপদের মুখে পড়েছে। সেইদিন আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে যদি লঞ্চটি থামিয়ে দেয়া হতো। এবং নদীর কিনারে ঘাট দিতো। তাহলে এত হতাহতের ঘটনা ঘটতো না। হাকিম শরীফ। চাকরি করতেন রাজধানীর একটি ঔষধ কোম্পানিতে। দুই ছেলে আর দুই মেয়ে নিয়ে ছিল সুখের সংসার। পরিবারের বড় মেয়ে হাফসার বিয়ের প্রস্তুতি চলছিল। মেয়ের বিয়ের জন্য নতুন পোশাক কিনে স্ত্রী পাখি বেগম ও পুত্র নাজিরুল্লাকে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বরগুনার উদ্দেশ্যে অভিযান-১০ লঞ্চে ওঠেন। লঞ্চের সামনের দিকে স্টাফ কেবিন ভাড়া নিয়ে তিনজন এক রুমেই ঘুমিয়ে পড়েন। তবে তারা জানতে পারেননি এই ঘুমই তাদের শেষ ঘুম। মধ্যরাতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তারা পুড়ে ছাই হয়ে যান। তাদের ফেরা হয়নি বরগুনায়। মেয়ের বিয়ে দিতে পারেননি হাকিম শরীফ। শনিবার দুপুরে তাদের সন্ধানে আসেন পাখি বেগমের মা ফরিদা বেগম। লঞ্চে পড়ে থাকা নাতির পোড়া পোশাক নিয়ে বিলাপ করছিলেন তিনি। আর বারবার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন তিনি। কাতর কণ্ঠে তিনি বলেন, কয়েকদিন পর নাতনি হাফসার বিয়ে। বিয়ের কেনাকাটা করতে তার মেয়ে ও নাতি ঢাকায় যান। সেখানে কেনাকাটা করে জামাই সহ ৩ জন বরগুনার লঞ্চে উঠেন। লঞ্চে উঠার সময় আমার সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল। আহারে মেয়েটার বিয়ে দিতে পারলো না তারা। আনন্দগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেল। লাশও খুঁজে পেলাম না। আর বুঝি জীবনে দেখতে পাবো না। ইস রে মরার সময় কি যে কষ্ট পেয়েছে আমার জাদুরা। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে পুড়ে যাওয়া লঞ্চে ছোট বোন রিনা বেগম (৩২) ও ভাগ্নি নুসরাত বেগম লিমা (১৩)কে হন্যে হয়ে খুঁজছেন বড় ভাই ফোরকান সিকদার। গতকাল সকাল থেকে এখন পর্যন্ত তাদের সন্ধান দিতে পারেনি কেউ। আহাজারি করতে করতে বলেন, আগুন লাগার পর বোন আমাকে কল দিয়েছে। আমি রিসিভ করতে পারিনি। লঞ্চে আমার বোন, ভাগিনা ও ভাগ্নি ছিল। ভাগিনা পানিতে লাফিয়ে পড়েছে। সে বেঁচে ফিরেছে। সেই আমাদেরকে প্রথম খবর দিয়েছে। এখন কোথাও তাদের খোঁজ পাচ্ছি না। তিনি বলেন, সবাই তাদের আপনজনকে খুঁজছে। অনেকের কাছে ছবিও আছে। আমার কাছে কোনো ছবি নাই। যে যেখানে বলছে সেখানেই যাচ্ছি। কোথাও আদরের বোন, ভাগ্নি নাই। স্বজনের সন্ধানে সুগন্ধা নদীর পাড়ে পাগলের মতো ঘুরছেন বরগুনার মো. সুমন হোসেন। আগুন লাগা লঞ্চে ছিল তার স্ত্রী ও দুই সন্তান। অগ্নিকাণ্ডের দ্বিতীয় দিনেও তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাই মুঠোফোনে মায়ের কাছে বিলাপ করে তিনি বলছিলেন, ‘আমার আর কেউ রইলো না মা। আমার সব শেষ। দুই সন্তান ও স্ত্রী তসলিমাকে খুঁজে পাচ্ছি না’। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় স্ত্রী তাসলিমা আক্তারের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে। তখন তারা লঞ্চে রওনা হয়েছিল। এখন আমি কাদের নিয়ে বাঁচবো। এদিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ যাত্রীবাহী লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজদের সন্ধানে দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। সকাল ৯টায় বরিশাল নৌ-ফায়ার স্টেশনের ডুবুরি দল উদ্ধারকাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন নৌ-ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক বেলাল উদ্দিন। সারাদিন এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে ভোর থেকেই নিখোঁজদের সন্ধানে স্বজনরাও ট্রলার নিয়ে নদীর পাড়ে পাড়ে ঘুরছেন। কেউ ভিড় করছেন পুড়ে যাওয়া লঞ্চের পাশে। লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ ও আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। রাজধানীর একটি ব্যাংকের করপোরেট শাখার ডিজিএম তাজউদ্দিন আহমদ। বৃহস্পতিবার অন্যদের মতো স্ত্রী ও দুই কন্যাকে নিয়ে বরগুনার উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে এমভি অভিযান-১০ এ উঠেন। লঞ্চের দ্বিতীয় তলার একটি কেবিনে ঘুমিয়ে ছিলেন তারা। মধ্যরাতে যাত্রীদের চিৎকারে তার স্ত্রী ফেরদৌস আরার ঘুম ভেঙে যায়। এই ঘুম ভেঙে যাওয়ার কারণেই বেঁচে ফিরতে পেরেছে তার পরিবার। তবে অভিযানের সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি প্রতিটি মুহূর্তেই তার চোখে ভাসছে। তিনি জানান, স্ত্রী ফেরদৌস আরা, দুই কন্যা তাহসিনা ও তাহিরাকে নিয়ে লঞ্চের দ্বিতীয় তলার কেবিনে উঠেন। রাত সাড়ে তিনটার দিকে ফেরদৌস আরার ঘুম ভেঙে যায়। তখন লঞ্চের অর্ধেকটা জুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। কি করবেন ঠিক বুঝতে পারছেন না। ধোঁয়ার কারণে চারদিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন। কেবিন থেকে বেরিয়ে বাইরে দাঁড়ান। আগুনের তাপ ও ধোঁয়ার কারণে সেখানে থাকতে পারছিলেন না। বাধ্য হয়ে রেলিং ধরে লঞ্চের নিচ তলায় চলে আসেন। তখন সবাই তার সঙ্গে। মাঝ নদীতে লঞ্চ। ইঞ্জিন বন্ধ থাকায় লঞ্চ এদিক সেদিক ঘুরছে। হাতের কাছে একটি বয়া পেয়ে তা নিয়েই স্ত্রী ও ছোট মেয়েকে নিয়ে পানিতে ঝাঁপ দেন। বড় মেয়ে তখনো ঝাঁপ দেয়নি। কয়েক মিনিট পানিতে ভাসতে ছিলাম। লঞ্চ কিছুটা পাড়ে আসলে বড় মেয়ে তাহসিনাও পানিতে ঝাঁপ দেয়। পরবর্তীতে সাহস রেখে তাদেরকে উপরে তুলি। তিনি বলেন, অনেক মানুষ আগুনের কারণে পানিতেও নামতে পারেনি। আগুনে পুরে মরছে। যারা পানিতে ঝাঁপ দিয়েছেন তারা অনেকেই ডুবে গেছেন। -সূত্রঃ মানবজমিন
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান