দেশের সংবাদ ফিচার্ড

সুগন্ধার বাতাসে লাশের গন্ধ, কাঁদছে বরগুনা

সুগন্ধার বাতাসে লাশের গন্ধ, কাঁদছে বরগুনা

নূরে আলম জিকু, ঝালকাঠি থেকে ।। চিরশান্ত সুগন্ধা। কালেভদ্রেও এখানে ঢেউ নেই। এর আগে বিষখালী পরে কীর্তনখোলা। দূর থেকে সুগন্ধাকে দেখে মনে হবে মায়াময় দীর্ঘ জলের প্রলেপ। আইলা-সিডরেও একে কেউ অশান্ত হতে দেখেনি। গতকাল সর্বনাশা এক বিস্ফোরণ কলঙ্ক লেপে দিলো সেই সুগন্ধায়। সেখানকার বাতাসে এখন কেবলই লাশের পোড়া গন্ধ আর স্বজনদের আহাজারি। রাতের অন্ধকারে সেই শান্ত সুগন্ধায় নেমে আসে বিভীষিকা।

দাউ দাউ আগুনে বাঁচার আকুতি নিয়ে শত শত মানুষ লাফিয়ে পড়ে সুগন্ধা নদীর দিয়াকুল নামক স্থানে। অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে ঝাঁপ দিলেও হারিয়ে যায় চিরতরে। কেউ হারিয়েছেন সন্তান, কেউ পিতা-মাতা।

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হতাহতদের  খোঁজে নদীর পাড় ও হাসপাতালে ভিড় করছেন স্বজনেরা। এ সময় প্রিয়জনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে সেখানকার পরিবেশ। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঝালকাঠি সদরের দিয়াকুল গ্রামের কাছে সুগন্ধা নদীতে লঞ্চটিতে আগুন লেগে যায়।

লঞ্চটি প্রায় ৮০০ যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশে রওনা হওয়ার পথে ঝালকাঠিতে ওই দুর্ঘটনার শিকার হয়। যাত্রীদের অভিযোগ, শুক্র ও শনিবার দু’দিন বন্ধ থাকায় ধারণক্ষমতার চেয়ে  বেশি যাত্রী ছিল লঞ্চে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত লঞ্চটি থেকে ৩৬ জনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ বাহিনী। এ ঘটনায় দগ্ধ প্রায় ৭৫ জনকে বরিশালের শের-ই-বাংলা  মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ১৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।

ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। দুর্ঘটনার পর থেকে পৌর মিনিপার্কে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে পোড়া মরদেহ। কান্নায় ভারি হচ্ছে চারপাশের পরিবেশ। কেউ বা শোকে পাথর। অনেকই আপনজনের খোঁজে ছুটছেন লাশের স্তুপ থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত। কেউ সুগন্ধা নদীর তীরে খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্বজনদের। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে এমনটাই দাবি স্বজনদের। এ দৃশ্য দেখে ঘটনাস্থলে ভীড় করা সাধারণ মানুষের চোখেও ঝরছে পানি।

গতকাল দুপুর ৩টায় পার্কে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া মরদেহগুলো নদীর পার্শ্বের অংশে সারিবদ্ধভাবে রাখা। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘিরে রেখেছে লাশ। রেড ক্রিসেন্টসহ বন্ধুসভার স্বেচ্ছাসেবী সদস্যারা স্বজন হারানো ব্যক্তিদের বিভিন্নভাবে তথ্য দিচ্ছেন ও নিচ্ছেন। মৃতদের অধিকাংশ পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়ায় অনেকেরই পরিচয় শনাক্ত হয়নি। স্বজনরা পোড়া দেহ দেখতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাগ খুলে দেখাচ্ছেন। এ সময় পোড়া গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। অনেকেই তা সহ্য করেই খুঁজে বেড়াচ্ছেন প্রিয় মানুষটিকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন দায়িত্বে থাকা বাহিনীর সদস্যরা।
এদিকে, সাজিয়ে রাখা মরদেহের মধ্যে একটি ব্যাগে দুটি লাশ রাখা হয়েছে। সাজিয়ে রাখা ২৬ নম্বর মরদেহটি বয়স্ক কোনো নারী কিংবা পুরুষের। তার বুকের উপর একটি শিশুর মরদেহ দেখা গেছে। যার নম্বর ৩৬। সেখানে দেখা যায়, ২৬ নম্বর ব্যক্তি ৩৬ নম্বরধারী শিশুটিকে জড়িয়ে ধরেছেন। দুজনের শরীর পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। তাদেরকে শনাক্ত করার মতো কোনো উৎস খুঁজে পাচ্ছেনা দায়িত্বে থাকা লোকজন।

নিখোঁজদের ছবি নিয়ে বিলাপ করছেন কারও মা,বাবা, ভাই-বোন। তাদের একজন রুহুল আমিন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, গতকাল ঢাকা থেকে বরগুনার পাথরঘাটার উদ্দেশ্যে ছেলে মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে লঞ্চে উঠি। মধ্যরাতে চিৎকারে ঘুম থেকে উঠে দেখি লঞ্চে আগুন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার স্ত্রী ও মেয়েকে দেখি লঞ্চের মধ্যে ছোটাছুটি করছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তারা ধোয়ায় হারিয়ে যায়। তাদেরকে আর দেখতে পাইনি। কোনো কিছু ভেবে না পেয়ে ছেলেকে নিয়ে পানিতে লাফ দেই। কিন্তু মেয়ে ও স্ত্রীকে আর পাইনি। এখন তাদের খুঁজে বেড়াচ্ছি। কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। খোঁজ নিয়েছি কোনো হাসপাতালে নাই। আল্লাহ জানে তারা কি বেঁচে আছে নাকি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আল্লাহ আর সহ্য করতে পারছি না। জানিনা ভাগ্যে কি আছে।

এদিকে, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৬ জনের মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। তবে কারও মরদেহ হস্তান্তর করা হয়নি।

এদিকে সন্তানকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন বরগুনার বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা গীতা রানী। বিভিন্ন জায়গায় ছুটে বেড়ালেও সন্তানকে খুঁজে না পেয়ে আহাজারি করছিলেন গীতা। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, আমার দুই সন্তান স্বপ্নীল চন্দ্র হালদার ও প্রত্যয় (৬) কে নিয়ে বরগুনায় গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলাম। আগুন লাগার কিছু আগে স্বপ্নীল লঞ্চের টয়লেটে যায়। এরপরই আগুন লাগে। যাত্রীরা আত্মরক্ষায় বিভিন্নদিকে ছুটতে থাকে। আগুনের তাপ সহ্য করতে না পেরে প্রত্যয়কে নিয়ে নিচে নামার চেষ্টা করি। এক পর্যায়ে মানুষের ধাক্কায় ছেলে আমার হাত থেকে ছুটে যায়। আর তাকে পাইনি। ঘটনাস্থল থেকে শুরু করে বিভিন্ন হাসপাতালে খুঁজেও তাকে পাইনি।

সূত্রে জানা যায়, এর আগে বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৩টায় ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলাধীন সরই এলাকা সংলগ্ন সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিন রুম থেকে আগুন লাগে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অগ্মিদগ্ধ হয়ে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭০ জন। এরমধ্যে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে ১৬ জনকে।
শেবাচিম হাসপাতালের সব চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের ছুটি বাতিল

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, লঞ্চ দুর্ঘটনার কারণে ভর্তি হওয়া অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামক লঞ্চের ইঞ্জিন থেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে দগ্ধ হয়েছেন বহু মানুষ। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৪০ জন। অগ্নিদ্বগ্ধ প্রায় শতাধিক। ভোর ৫টা থে?কে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লঞ্চে আগুনে দগ্ধ রোগীরা আসতে শুরু করে। কিন্তু শেবাচিম হাসপাতালে বার্ন ইউনিট থাকলেও কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিল না। সাধারণ চিকিৎসক ও নার্স দিয়েই চলছে চিকিৎসা। হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, ৭০ জন দগ্ধ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া আশঙ্কাজনক ১৬ দগ্ধ রোগীকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসার সুবিধার্থে সব চিকিৎসক ও নার্সের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এদিকে, সন্ধ্যায় হাসপাতালে অগ্নিদ্বগ্ধ রোগীদের দেখতে ঢাকা থেকে ছুটে আসেন সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, স্বাস্থ্যসচিব মো. লোকমান হোসেন। তারা রোগীদের সুচিকিৎসার সব ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

দুই বছর পর তালা খুললো শেবাচিম বার্ন ইউনিটের: ওদিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ শতাধিক রোগী বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর প্রায় বাধ্য হয়েই বার্ন ইউনিটের তালা খোলা হলো। দুই বছর আগে এ বার্ন ইউনিটটি উদ্বোধন করা হলেও কোনো চিকিৎসক না থাকায় অব্যবহৃতই ছিল এটি। গতকাল শুক্রবার সকালে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর এ ইউনিটে ভর্তি হওয়া বিপুলসংখ্যক অগ্নিদগ্ধ রোগী নিয়ে বিপাকে পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শেষ পর্যন্ত ঢাকা থেকে রোগীর চিকিৎসায় আনা হলো চার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। গতকাল বিকালে ফ্লাইটযোগে তারা বরিশাল আসেন। দেশের ১৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সঙ্গে পোড়া রোগীদের চিকিৎসার ব্যাপারে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হচ্ছে। সকালে ঘটনা শোনার পর ঢাকা থেকে সড়কপথে বার্ন ইউনিটের চারজন চিকিৎসককে বরিশাল পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। সড়কপথে ফেরি পারাপারসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে তাদের ফ্লাইটযোগে বরিশাল পাঠানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মালদ্বীপে সফররত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও তার সঙ্গে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে পোড়া রোগীদের চিকিৎসায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে আলোচনা ও নির্দেশনা প্রদান করেন বলে তিনি জানান।

বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট দুই বছর আগে খোলা হলেও বর্তমানে কেন সেটি বন্ধ রয়েছে- এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডা. সামন্ত লাল সেন মিডিয়াকে জানান, ইউনিটটি চালুর সময় একজন চিকিৎসক ছিলেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক পরে আত্মহত্যা করলে নতুন করে আর কাউকে সেখানে নিয়োগ দেয়া হয়নি। বার্ন চিকিৎসককে নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে একাধিকবার প্রচেষ্টা নিলেও চিকিৎসক পদায়নে সফল হওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টায় ঝালকাঠী সংলগ্ন সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪০ জন নিহত হন। শতাধিক যাত্রী অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের বেশিরভাগই বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সন্তানদের খুঁজে না পেয়ে পাগলপ্রায় দুই মা: ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজ দুই সন্তানকে খুঁজে না পেয়ে পাগলপ্রায় দুই মা।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে ঢাকা উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী স্বপ্নিল চন্দ্র হাওলাদার (১৬)।  সে তার মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি বরগুনার বামনায়  বেড়াতে যাচ্ছিল। নিখোঁজ অপর শিশুসন্তান হচ্ছে- আড়াই বছরের তাবাস্‌সুম। তার বাবা বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ছোট পাথরঘাটা গ্রামের একটি মসজিদের ইমাম মুহাম্মদ নাছরুল্লাহ্‌ (২৭)।

ওই দুই সন্তানের মা-বাবা তাঁদের সন্তানদের খোঁজে কখনো সুগন্ধার পাড়ে, আবার কখনো সদর হাসপাতালে ছুটছেন। তাদের কান্নায় হাসপাতাল ও সুগন্ধার পাড়ের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। প্রশাসন বলছে, নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে সর্বাত্মক  চেষ্টা চলছে।

মসজিদের ইমাম মুহাম্মদ নাছরুল্লাহ বলেন, ‘লঞ্চের মধ্যে ধোঁয়ায় টিকতে না পেরে আমি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনতলার ছাদে উঠে যাই।  সেখানে কুয়াশার মধ্যে নদীর কিছু দেখা যাচ্ছিল না। এ অবস্থায়ই আমরা মেয়েসহ নদীতে ঝাঁপ দিই। পরে তীরে ওঠার আগেই মেয়েকে হারিয়ে  ফেলি।’ একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে স্ত্রী সোনিয়াও বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, ‘আমার মেয়েকে যেন প্রশাসন খুঁজে বের করে দেয়। আমার সোনার মানিককে আপনারা আইনা দেন।’
শিক্ষার্থী স্বপ্নিল চন্দ্র হাওলাদারের মা স্বপ্না হাওলাদার বলেন, ‘লঞ্চে আগুন লাগার আগমুহূর্তে আমার ছেলে স্বপ্নিল  শৌচাগারে যায়। পরে আগুন ছড়িয়ে পড়লে আমি আমার  ছোট ছেলেকে নিয়ে কেবিন  থেকে লঞ্চের সামনে যাই। পরে স্থানীয়রা আমাদের উদ্ধার করলেও আমার ছেলেকে খুঁজে পাইনি।’
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা  থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে এখন পর্যন্ত ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া বরিশালের শের-ই-বাংলা  মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে শতাধিক যাত্রী দগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন। বৃদ্ধ, শিশুসহ অনেকে নিখোঁজ। লঞ্চে আট শতাধিক যাত্রী ছিল।

কাঁদছে বরগুনা

স্মরণকালের ভয়াবহ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কাঁদছে বরগুনা। জেলাজুড়ে বইছে শোক। এ দুর্ঘটনার শিকার অধিকাংশ যাত্রীদের বাড়ি বরগুনা জেলায়। নিহত সকলের পরিচয় এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। অগ্নিদগ্ধে অনেকেরই চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। মৃতদেহ দেখে কাউকেই শনাক্ত করা যাচ্ছে না। অগ্নিদগ্ধদের পরিচয় শনাক্তের জন্য ডিএনএ টেস্ট প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অগ্নিদগ্ধদের বেশিরভাগ রোগী বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আহতদের খোঁজখবরসহ নিহতদের লাশ গ্রহণের জন্য বরগুনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি টিম ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের পর নিখোঁজ যাত্রীদের সঙ্গে স্বজনদের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজে বরগুনার নৌবন্দরে এসেও তাদের কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনরা। নিখোঁজ যাত্রীদের তথ্য দেয়ার মতো কোনো ব্যবস্থাও নেই বরগুনা নৌবন্দরে।
বরগুনা নৌবন্দরের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ বলেন, লঞ্চটিতে সব বয়সের প্রায় ৩০০-৪০০ জন যাত্রী ছিলেন।
ক্যান্সার আক্রান্ত শ্বশুরকে ডাক্তার দেখাতে মেয়ে তাইফা আফরিনকে (১০) সঙ্গে নিয়ে ঢাকা গিয়েছিলেন বরগুনা সদর উপজেলার কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের রোডপাড়া গ্রামের বশির উদ্দিন। কিন্তু ঢাকা থেকে ফেরার পথে এম?ভি অভিযান-১০ যাত্রীবাহী ল?ঞ্চে আগুন লাগে। ঘটনার সময় জীবন বাঁচাতে লঞ্চ থেকে ঝাঁপ দেন তাইফার নানা। তাকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাইফার বাবা ও তাইফা লঞ্চের ডেকে আটকে পড়েন। তাইফা অগ্নিদগ্ধ হয়ে লঞ্চেই মারা যায়, তার বাবা বশির গুরুতর দগ্ধ হন। বর্তমানে তাইফার বাবা বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাইফার মৃত্যুতে এলাকায় শোক নেমে এসেছে।
লঞ্চ দুর্ঘটনায় মা-ছেলেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরা হলেন- জিয়াসমিন আক্তার (২৮) ও তার ছেলে তামিম হাসান (১০)। গতকাল শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে অ্যাম্বুলেন্স যোগে তারা ঢাকায় পৌঁছান। ঢাকায় আসার পথে মাওয়া ফেরিঘাটে মারা যায় জিয়াসমিনের মেয়ে মাহিনুর (৬)। জিয়াসমিন তার স্বামী-সন্তান নিয়ে বরগুনা সদরে থাকেন। তার বাবার বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জে সুবাড্ডা এলাকায়। ১০-১২ দিন আগে জিয়াসমিনের নানীর মৃত্যুর খবর শুনে দুই সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি আসে জিয়াসমিন। গত বৃহস্পতিবার রাতে আবার সন্তানদের নিয়ে বরগুনা ফিরছিলেন। তখন লঞ্চে অগ্নি দুর্ঘটনার শিকার হন।
হাসপাতালের মেঝেতে অগ্নিদগ্ধ দুই হাত উঁচু করে বসে আছেন স্ত্রী হনুফা বেগম। পাশেই শুয়ে পুড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন মেয়ে রুবি আক্তার। আর স্বামীর মরদেহ বরিশাল হাসপাতাল মর্গে। দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রী হনুফা বেগমের শারীরিক নানা অসুস্থতার কারণে ঢাকায় চিকিৎসা করিয়ে মেয়ে রুবি আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। ঘটনার পরেই মা-মেয়ে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় বরিশাল মেডিকেলে চিকিৎসাধীন থাকলেও স্বজনরা শিক্ষক আ. রাজ্জাককে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। দুপুর ২টার দিকে ওই শিক্ষকের মরদেহ শনাক্ত করেন স্বজনরা।
আবদুর রাজ্জাক পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা দাখিল মাদ্রাসার ইংরেজি শিক্ষক। তার বাড়ি পাথরঘাটা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। তার মেয়ে রুবি আক্তার বরিশাল বিএম কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ১০ দিন আগে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে স্ত্রীকে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন স্বামী আ. রাজ্জাক।
লঞ্চের যাত্রীদের হন্যে হয়ে খুঁজছেন স্বজনরা: এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগার খবর শুনে বরগুনা সদরের ঢলুয়া ইউনিয়নের খাজুরা গ্রামের রিপন এসেছেন জেলার নৌবন্দরে। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে আগুন লাগা লঞ্চটিতে ছিলেন তার ফুপাতো ভাই, তার (ফুপাতো ভাইয়ের) ছেলে এবং এক শ্যালিকা। তিনজনকে খুঁজতে এসে রিপন জানান, তারা সবাই নিখোঁজ। হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলে খোঁজ নিয়েও পাওয়া যায়নি হদিস।
রিপন বলেন, দুর্ঘটনার পর আমার ফুপাতো ভাই মইন এবং তার ছেলে আবদুল্লাহ ও শ্যালিকা আছিয়া নিখোঁজ রয়েছেন। হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলে খোঁজ নিয়েও তাদের পাইনি। তাদের মতো বরগুনার আরও অনেক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন।
বেঁচে ফেরা বামনা উপজেলার যাত্রী গোবিন্দ সাহা বলছেন, এ লঞ্চের অনেক যাত্রীই ছিলেন বরগুনার। আগুনে হতাহতদের অধিকাংশই এ জেলার বাসিন্দা। তারা বিভিন্ন প্রয়োজনে বাড়িতে ফিরছিলেন। রাত পৌনে ৩টার দিকে ইঞ্জিন রুম থেকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ হয়। মুহূর্তে গোটা লঞ্চ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এ সময় ডেকে থাকা ঘুমন্ত যাত্রীরা জেগে ওঠে ছোটাছুটি শুরু করেন। কেউ কেউ নদীতে ঝাঁপ দেন, আবার অনেকে চিৎকার করতে শুরু করেন। তিনি আরও বলেন, একপর্যায়ে যাত্রীদের উদ্ধারে কয়েকটি ট্রলার এগিয়ে আসে এবং তারা ট্রলারে উঠে তীরে নামেন। মূলত আগুন লাগার পর লঞ্চটি তীরে নোঙর করার মতো কেউ ছিল না। লঞ্চ জোয়ারের তোড়ে ভাসতে থাকে।
নিখোঁজ স্বজনরা জানিয়েছেন, তারা বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলে খোঁজ নিয়েও নিখোঁজদের বিষয়ে কিছু জানতে পারেননি।
স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন বরগুনার মাইঠা এলাকার ইদ্রিস খান, নলী এলাকার আবদুল হাকিম, পাথরঘাটা টেংরার পপি আক্তার, পাথরঘাটা পৌরসভার তালতলার আবদুর রাজ্জাক, কালমেঘার কালীবাড়ির রাকিব মিয়া, বরগুনা সদরের হাফেজ তুহিনের মেয়ে (নাম অজ্ঞাত), সদরের ছোট আমতলীর জয়নব বেগম।
এ ছাড়াও রয়েছেন বরগুনা সদরের পরীরখাল এলাকার মা রাজিয়া, তার মেয়ে নুসরাত, ঢলুয়া এলাকার মোল্লারহোড়া গ্রামের একই পরিবারের মা তাসলিমা ও তার মেয়ে মিম তানিশা, ছেলে জুনায়েদসহ অজ্ঞাত চারজন রয়েছেন। এছাড়া বরগুনায় বেড়াতে আসা চাঁদপুরের মনোয়ারা, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার রিনা বেগম ও তার মেয়ে রিমা নিখোঁজ রয়েছেন।
বরগুনার বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা গীতা রানী। দুই সন্তান স্বপ্নীল চন্দ্র হালদার ও প্রত্যয়কে (৬) নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন গীতা রানী। লঞ্চে বড় ছেলে স্বপ্নীল নিখোঁজ হয়। স্বপ্নীল ঢাকার উত্তরা স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র। গীতার স্বামী চন্দ্র হালদার ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তারা থাকেন রাজধানীর উত্তরায়। গীতা রানী বলেন, আগুন লাগার কিছু আগে স্বপ্নীল লঞ্চের টয়লেটে যায়। এরপরই আগুন লাগলে যাত্রীরা আত্মরক্ষায় দিগ্বিদিক ছুটতে থাকেন। স্বপ্নীলের জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ছোট ছেলেকে নিয়ে নিচে নামি। এক পর্যায়ে যাত্রীদের ধাক্কায় ছোট ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে আমি লঞ্চ থেকে নেমে আসি এবং তাকেও হারিয়ে ফেলি। আবার লঞ্চে উঠে প্রত্যয়কে পেয়ে তাকে সঙ্গে নিয়ে স্বপ্নীলকে খুঁজতে থাকি। কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পাইনি। সেখানকার লোকজন আমাকে মেডিকেলে খবর নিতে বললে আমি সেখানেও যাই। সব ওয়ার্ডে খোঁজ করেছি কিন্তু আমার স্বপ্নীলকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।
প্রাণে বেঁচে ফেরা জেলার তালতলি উপজেলার সোনিয়া বেগম (২৫) জানান, লঞ্চে আগুন লাগার সময় তিনি ইঞ্জিন রুমের ওপরে দোতলার ডেকে অবস্থান করছিলেন। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ডেক গরম হয়ে চারদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এরপর লঞ্চের সঙ্গে বাঁধা দড়ি বেয়ে ছোট ছেলেকে নিয়ে নিচে নেমে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে তীরে ওঠেন। তবে তার মা রেখা বেগম এবং ৫ বছরের বড় ছেলে জুনায়েদ সিকদার এখনো নিখোঁজ।
মা, স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ছুটিতে গ্রামের বাড়ি বরগুনায় ফিরছিলেন বায়িং হাউস কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন। ছুটি কাটাতে গ্রামে ফিরছিলেন তিনি। লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের মুহূর্তে উদ্ধারকারীদের একজন লাথি দিয়ে নদীতে ফেলে দেয় এক মেয়ে লামিয়াকে। পরে নদী থেকে উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গুরুতর দগ্ধ হয় লামিয়া। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আর ইসমাইলের মা মমতাজ বেগমকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। তবে অগ্নিকাণ্ডের মুহূর্তেই ইসমাইল হোসেন হারিয়ে ফেলেছেন তার স্ত্রী রাজিয়া ও ছোট মেয়ে নুসরাতকে। সপরিবারে ঢাকার উত্তর বাড্ডার সাঁতারকুল থাকেন ইসমাইল হোসেন। গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নে। মেয়ে লামিয়া ৮ম শ্রেণি আর নুসরাত ২য় শ্রেণিতে পড়ে।
ইসমাইল হোসেন বলেন, রাত পৌনে ৩টার দিকে চিৎকার চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে যায়। সবাই ছোটাছুটি করছে। আমি তখন বোধশূন্য অবস্থা। একদিকে বৃদ্ধ মা, সঙ্গে শিশুকন্যা ও স্ত্রী। দ্রুত ছুটে যাই নিচে। লাইফ বয়া নিয়ে ফিরে এসে দেখি আমার মা ছাড়া আর কেউ সেখানে নেই। তখন আগুন ছেয়ে গেছে গোটা লঞ্চ। মাকে নিয়ে কোনোমতে উদ্ধারকারী ট্রলারে উঠে তীরে আসি। মাকে তীরে রেখে ট্রলারে করে খুঁজতে যাই আমার স্ত্রী ও সন্তানদের। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাইনি। সকালে হাসপাতালে খুঁজে পাই মেয়ে লামিয়াকে। লামিয়ার মুখমণ্ডল আগুনে ঝলসে গেছে। আর মায়ের দুই হাত আগুনে পুড়ে বাঁকা হয়ে গেছে। তারা দু’জন চিকিৎসাধীন। ছোট মেয়ে নুসরাত আর স্ত্রী রাজিয়াকে এখনো খুঁজে পাইনি।
নারায়ণগঞ্জ থেকে বরগুনায় বা?ড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল ১৩ বছরের রাকিবুল। তবে বা?ড়ি আর যাওয়া হয়?নি তার। লঞ্চে আগুনের খবর পেয়ে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে একমাত্র ছেলেকে হনে?্য হয়ে খুঁজছেন বাবা শাহজালাল। আগুনে পুড়ে যাওয়া লঞ্চ অ?ভিযান-১০ বা হাসপাতাল, কোথাও মিলছে না তার ছেলের খোঁজ।
জেলার পাথরঘাটা উপজেলার বা?সিন্দা শাহজালাল বলেন, প্রতিবেশী লোকমানও একই ল?ঞ্চে করে বরগুনা আস?ছিলেন। তার হাত পুড়ে গেছে। তিনিই সকালে আমাকে দুর্ঘটনার কথা জানান। এরপরই আ?মি দৌড়াতে দৌড়াতে ছুটে এসেছি। সন্ধ্যার দিকে সদরঘাট থেকে অ?ভিযান-১০ ল?ঞ্চে ওঠে রাকিবুল। এরপর আর কথা হয়?নি। আমার ছেলে নারায়ণগঞ্জে মাদ্রাসায় পড়তো। ওর কপালের ডান পাশে তিল রয়েছে।
বরগুনা সদরের রাজু আহমেদ ঢাকার খিলগাঁওয়ে ব্যবসা করেন। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ঢাকাতেই থাকেন। জমিজমার ভাগবাটোয়ারা সংক্রান্ত কাজে বৃহস্পতিবার রাতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে বাড়ির পথে রওনা দেন। লঞ্চের দোতলার ডেকে বিছানা পেতে রাতে চারজনই ঘুমিয়ে পড়েন। আশা ছিল ঘুম ভেঙে সকালে বাড়ি পৌঁছাবেন। কিন্তু বাড়ি যাওয়া আর হলো না।
পথে লঞ্চে মর্মান্তিক অগ্নি দুর্ঘটনায় কোনোরকমে প্রাণে বেঁচে শীতের রাতে নদী সাঁতরে কোনোরকমে তীরে উঠেছেন একজন। তিনি বলেন, বিকট শব্দে ঘুম ভাইঙ্গা যায়। আগুন লাগার ১৫ মিনিট পর লঞ্চ একটা চরে ভিড়ছিল। তখনো মাইনষের গায়ে আগুন লাগে নাই। সবাই দৌড়াদৌড়ি, কান্নাকাটি করতে আছিল। ওই সময় ইঞ্জিনরুমে কেউ ছিল না। চরে নোঙর করার লোক না থাকায় জোয়ারের তোড় লঞ্চ ভাসাইয়া মাঝগাঙ্গে লইয়া যায়। প্রায় এক ঘণ্টা ভাসতে ভাসতে অপর পাড়ের কাছাকাছি চইলা যায়। তহন পুরা লঞ্চে আগুন। আমি ওই সময় তিনতলা থেকে আমার মাইয়া লইয়া আর আমার বউ-পোলাডা লইয়া গাঙ্গে লাফ দেই। মরতে মরতে হাতুইড়া পারে উঠছি।

সূত্রঃ মানবজমিন

 

 





সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন