স্কুলছাত্রী মুক্তি বর্মণকে হত্যা সবাই মিলে নৃশংসতা প্রতিরোধের ডাক
নেত্রকোনার বারহাট্টায় স্কুলছাত্রী মুক্তি রানী বর্মণকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত কাউছার মিয়ার (১৯) দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী প্রতিবাদ সমাবেশ এবং ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। এসব মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা সবাইকে মিলে নৃশংসতা প্রতিরোধের আহ্বান জানান।
মঙ্গলবার বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে মুক্তিকে কুপিয়ে জখম করে কাউছার মিয়া। বিকেলে হাসপাতালেতার মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ কাউছারকে গ্রেপ্তার করে। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মুক্তিকে হত্যা করে কাউছার। মুক্তি উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী বারহাট্টা শাখার সদস্য নির্মল কুমার বর্মণের মেয়ে ও উপজেলার প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
শাহবাগের প্রতিবাদ সমাবেশে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘শুধু মুক্তি রানী নয়, আগেও নির্যাতন ও নারীর প্রতি অসংখ্য নৃশংস ঘটনা আমরা দেখেছি। এসব নৃশংসতা সবাই মিলে প্রতিরোধ না করলে নারী কখনোই নিরাপদ হবে না।’
সভাপতির বক্তব্যে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান বলেন, ‘মুক্তির ছবি দেখে জানলাম তাকে হত্যা করা হয়েছে। এই সমাজব্যবস্থা, হত্যাকাণ্ড ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, সহসভাপতি মাহমুদ সেলিম, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মাহফুজা খানম প্রমুখ।
নেত্রকোনায় আজ বারহাট্টা উপজেলা প্রেস ক্লাবের সামনে নিহতের সহপাঠী ছাড়াও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি বারহাট্টা উপজেলা শাখার ব্যানারে মানববন্ধন হয়। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি বারহাট্টা শাখার সভাপতি আফজল হোসেনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান, বারহাট্টা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, প্রেমনগর উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী, বাউসী ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল হক প্রমুখ।
একই স্থানে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাসিব ইবনে হান্নান রিদম, নেত্রকোনা সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ আল রাকিব, আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র তাসাব্বির হাসান খান প্রমুখ। বক্তারা বখাটে কাউছারকে দ্রুত গ্রেপ্তার করায় পুলিশকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার দাবি জানান।
‘আর কত খুন হলে জীবন নিরাপদ হবে?’ স্লোগান ব্যানারে লিখে মানববন্ধন হয়েছে ময়মনসিংহ নগরীর শশীলজ জাদুঘরের সামনে। মানববন্ধনে অধ্যক্ষ নূর জাহান পারভীন বলেন, ‘সমাজ থেকে শাসন উঠে যাওয়ায় মুক্তি রানীর মতো অসংখ্য হত্যার ঘটনা ঘটছে। সমাজকে এভাবে ছেড়ে দিলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার। বাংলাদেশ সোনার বাংলা, ডিজিটাল বাংলা, স্মার্ট বাংলা কিছুই হতে পারবে না।’
ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবুল কালাম আল আজাদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত, নজরুল ইসলাম চুন্নু, শিব্বির আহম্মেদ লিটন, আবদুল কাদির চৌধুরী মুন্না প্রমুখ।
এদিকে, আজ এক বিবৃতির মাধ্যমে মুক্তি রানীর হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট। ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ ও সাধারণ সম্পাদক শোভন রহমান বলেন, শিক্ষার্থীকে দিনের আলোয় কুপিয়ে আসামি পালিয়ে গেলু এখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আছে, তা বোঝার কোনো উপায় নেই! সামাজিক অবক্ষয়, নারীর অবাধ চলাচল ও জীবনের নিরাপত্তায় যে প্রতিবন্ধকতা বিরাজ করছে, তার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তাঁরা।