লেখালেখি

স্বাগত নতুন বছর

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন

স্বাগতম নববর্ষ ২০২০। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই। স্বস্তিতে-শান্তিতে জীবনের দিনগুলো আলোয় স্নাত থাকুক। এই নববর্ষ বিশ্বজুড়ে সব মানুষের সামনে নতুন বছরের আনন্দ ফুল হয়ে ফুটে উঠেছে। উচ্ছ্বাসের জোয়ারে কেটে যাবে কয়েকটি দিন। এই দিন দেশের সীমান্ত অতিক্রম করে পৌঁছে যায় অপরের কাছে। অনেকেই নববর্ষের বার্তা পাঠায় বিভিন্ন দেশের প্রিয়জনের কাছে। তখন ভাবতে পারি এই দিনকে সঙ্গে নিয়ে কেটে যাবে প্রিয়জনের বার্তা। দূরদেশের রঙিন কার্ড হাতে এলে আনন্দে মন ভরে যায়।

একটি বছর শেষ হওয়া মানে বেঁচে থাকার সূত্রে একটি বছর যুক্ত হওয়া। প্রতিবছর শিশুদের বড় হওয়ার হিসাব। বয়সীরা বিশ্ব থেকে বিদায় গণনা করে। নতুন বছর এমনি করে সামনে আনে জীবন-মৃত্যুর সত্যকে। তবে এই বছরকে আমরা সাংস্কৃতিক আবেগে উদযাপন করি না। হিসাব-নিকাশের বিভিন্ন সূত্র সামনে রেখে এই বছরের দিকে তাকাই।

বাঙালির জীবনেও এই দিন বছরের শুভ সূচনার দিন। বাংলা নববর্ষের মতো আনন্দ-উচ্ছ্বাসের জায়গা তৈরি করে না খ্রিস্টীয় নববর্ষ। রমনার বটমূলে এ নববর্ষকে আহ্বান জানাতে আয়োজন করা হয় না অনুষ্ঠানের। কারণ এর সঙ্গে জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক বোধের যোগ নেই। কিন্তু যোগ আছে আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে। বিশ্বের মানবিক বোধের সঙ্গে। তাই শুভেচ্ছা বার্তা উড়ে যায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সীমান্ত অতিক্রম করে। যা কিছু শুভ, তাকে সত্যি বলে মেনে নেয় বিশ্বের মানুষ।

আরও পড়ুনঃ সোহাগের বিয়ে ঠিক করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

মানবকল্যাণবোধ এর মধ্যে অন্যতম দিক। বাংলাদেশও মানবিক বোধের চেতনা থেকে স্বাগত জানায় নতুন বছরকে। স্বাগত ২০২০। নতুন বছরের প্রথম দিন যে সূর্য উঠবে সেই সূর্যটি নতুন নয়। হাজার হাজার বছরের বেশি সময় ধরে পৃথিবীতে আলো বিকিরণ করে যাচ্ছে এটি। কিন্তু নতুন বছরে নতুন হয়ে জেগে ওঠে মানুষের প্রত্যাশা। এ প্রত্যাশা সূর্যের মতো আলো বিকিরণ করে ব্যক্তির জীবনে, জাতির জীবনে। প্রত্যাশাই নতুন বছরের সূর্য। দেশের প্রতিটি মানুষ চায় প্রত্যাশার সূর্য জ্বলে উঠুক জাতির জীবনে জ্বলে উঠুক মানুষের ভালোভাবে বেঁচে থাকার মৌলিক আকাঙ্খায়।

দেশীয় প্রেক্ষাপটে দেশের মানুষ বিগত বছরে জাতির জীবনে পাওয়া না পাওয়ার খতিয়ান করে। যে প্রত্যাশা বিগত বছরে পূর্ণ হয়নি, সেটি পূর্ণ হওয়ার আকাক্সক্ষা থাকে মানুষের মনে। এ প্রত্যাশার সূর্য বিকিরণ করে আলো। এ আলো চোখ বাঁধিয়ে দৃষ্টি আড়াল করে দেবে না, এ আলো পথ দেখাবে। ২০২০ আমাদের সামনে প্রত্যাশার আলো ছড়িয়ে যাবে। গণমানুষের প্রত্যাশার জায়গা থেকে প্রবল আকাক্সক্ষা যে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রিত হোক। জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসুক। মানুষের ভাতের থালায় পুষ্টিকর খাবার থাকুক। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর শুধু ডাল-ভাতের জীবন আর কেউ চায় না। বঙ্গবন্ধু তার রাজনীতি শুরু করেছিলেন গণমানুষের কষ্টের জীবন বুকের মধ্যে নিয়ে। তিনি তার জীবনের প্রায় সব বক্তৃতায় ‘দুঃখী মানুষ’ শব্দ অনবরত উচ্চারণ করেছেন। এমনকি তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ থেকেও ‘দুঃখী মানুষ’ শব্দ বাদ পড়েনি। প্রত্যাশিত বছর ২০২০ এসব মানুষের জীবনে আলো জ্বালাবে এই প্রত্যাশা। আলো ফেলতে হবে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে, এককভাবে সরকারের কাছ থেকে নয়। সেজন্য প্রয়োজন দুর্নীতিমুক্ত মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ।

প্রয়োজন এক কথা, কিন্তু প্রয়োজন না পাওয়া আরেক কথা, যেটা সমাজের মানুষের বর্বরতাকে কঠিনভাবে প্রদর্শন করে। ফিরে দেখা যাক গত বছরের চিত্র। যে হারে নারী নির্যাতন ও শিশু নির্যাতন হয়েছে তা দেশবাসীকে মর্মাহত করেছে। নির্যাতনের অসংখ্য ঘটনা প্রতিদিনের সংবাদপত্রে এসেছে। এই দুর্বিষহ সামাজিক পরিস্থিতি ম্লান করে দেয় জাতির বিবেক ও মূল্যবোধ।

নতুন বছরে সবার প্রতিজ্ঞা হোক, আর কোনোদিন বাংলাদেশে নারী-শিশু নির্যাতন হবে না। আমরা মর্যাদার জায়গা থেকে মানবিকবোধকে সমুন্নত রাখব। আমরা অন্যায়ের কাছে নতি স্বীকার করব না। নতুন বছরের সূচনায় আনন্দের সঙ্গে দীপ্ত চেতনায় সবার শপথ হোক এ দেশে আর কখনো নারী-শিশু নির্যাতন হবে না। শুভ নববর্ষ!!

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখেতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 1 =