অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন কর্তৃক স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৩ উদযাপন
অটোয়া, ০২ মে ২০২৩ অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন আজ যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে স্থানীয় একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ৫২তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করে। হাইকমিশনের আমন্ত্রণে কানাডার মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংসদীয় সচিব কানাডা সরকারের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ অনুষ্ঠানে কানাডার হাউজ অব কমনস এর সংসদ সদস্যবৃন্দ, সিনেটর এবং অটোয়ায় অবস্থিত বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রধানসহ ১৫০ জনের অধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ও কানাডার জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সূচনা করা হয়। এ সময় আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ দাঁড়িয়ে দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেন। এরপর মান্যবর হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে শুরুতে মান্যবর হাইকমিশনার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহিদ ও সম্ভ্রম হারানো ২ লক্ষ মা–বোনকে বিনম্র চিত্তে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন কানাডিয়ান সরকার ও কানাডার জনগণ এবং কানাডা কর্তৃক স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতি ও সমর্থনের কথা স্মরণ করে হাইকমিশনার স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকে বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে শক্তিশালী দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান বলে মত প্রকাশ করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ও সামাজিক অগ্রগতিতে কানাডা ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে মান্যবর হাইকমিশনার উল্লেখ করেন।
১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে নারকীয় হত্যাকান্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশে মৌলবাদ ও সন্ত্রাসের বীজ বপন হয় বলে মান্যবর হাইকমিশনার মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন যে, পরবর্তীতে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে বাংলাদেশকে গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা, শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে আসেন।
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ও মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার নিশ্চিতের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে তিনি কানাডাসহ অন্যান্য যে সকল দেশ তাদেরকে আশ্রয় দিচ্ছে সে সকল দেশকে তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে সংলাপের জন্য আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশে সহিংস চরমপন্থী ও মৌলবাদে অবদান রাখে এমন তথ্য এবং বানোয়োট সোশ্যাল মিডিয়া প্রোপাগান্ডা দ্বারা বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য উপস্থিত সকলকে আহ্বান জানান। একটি অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ জাতি হিসেবে বাংলাদেশের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে বাংলাদেশের প্রতি তিনি কানাডাসহ সকল উন্নয়ন অংশীদারদের অব্যাহত সমর্থন কামনা করেন।
মান্যবর হাইকমিশনারের বক্তব্যের পর জনাব রবার্ট অলিফ্যান্ট প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই কানাডা ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে অবহিত করেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে কানাডার জনগণ ও সরকারের অকুন্ঠ সমর্থন এবং মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পরপরই কানাডা কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি এই দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তি বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা হতে বাংলাদেশের সফল উত্তরণ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের চলমান উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি মিয়ানমার হতে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১.৩ মিলিয়ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং আইসিজেসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রয়কৃত রোহিঙ্গাদেরকে নিজ দেশে নিরাপদ, টেকসই এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ৫২তম বার্ষিকীতে সকলকে অভিনন্দন জানিয়ে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন। উল্লেখ্য, উক্ত অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের ওপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
আমন্ত্রিত অতিথিদের সম্মানে আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত হয়।
উল্লেখ্য যে, পবিত্র রমজানের কারণে ২৬ মার্চ ২০২৩ তারিখের পরিবর্তে ২ মে ২০২৩ তারিখ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করা হয়।