অমর একুশে বইমেলা ঘিরে ব্যস্ত বাংলাবাজার প্রকাশনী পাড়া
দরজায় কড়া নাড়ছে অমর একুশে বইমেলা ২০২৪। ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে ঐতিহ্যবাহী এ মেলা আবার শুরু হচ্ছে। মেলার আয়োজনে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বাংলা একাডেমি। বইমেলা ঘিরে উচ্ছ্বাস বাংলাবাজারের প্রকাশকদের মাঝে। রীতিমতো ব্যস্ত তারা।
ছাপাখানাতেও রয়েছে যথেষ্ট ব্যস্ততা। তবে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়াতে গতবছরের তুলনায় এবার বইয়ের দাম একটু বেশি রাখতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা। আর্থিক বিষয় বিবেচনা করে কিছু কিছু ছোট প্রকাশনী এবার স্টল নিবে না।
প্রকাশনীগুলো থেকে জানা যায়, বড় কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে বই বাজারে আসে। বাজারে বই আনার কার্যক্রমের সাথে বেশ কয়েকটি খাত জড়িত রয়েছে। এ খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে পুস্তক প্রকাশক, পুস্তক বিক্রেতা, কম্পিউটার অপারেটর, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, প্রুফ রিডার, পেস্টিং, কাগজ, কালি, মুদ্রণ, বাঁধাই ও লেমিনেটিং এবং সব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক-কর্মচারী। দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিতে সব মিলিয়ে প্রকাশনীর খরচ আরও বেড়েছে। বাজার বিবেচনা করেই প্রকাশনী বই আনে।
সরেজমিনে পুরান ঢাকার বাংলাবাজার, পাতলা খান লেন, শিরিষ দাস লেন, প্যারিদাস লেন ও রূপচান লেন ঘুরে প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
বইমেলাকে কেন্দ্র করে যাবতীয় কাজ নিয়ে ব্যস্ত কথা প্রকাশ প্রকাশনী। এখানে কর্মরত (সেলস) মোয়াজ্জেম হোসাইন জানান, এ সময়টাতেই প্রকাশনীতে সবথেকে বেশি ব্যস্ততা থাকে, আমরাও ব্যস্ত। দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিতে এবছর বইয়ের দাম একটু বেশি হবে।
আর্থিক লাভের বিষয়টি হিসাব করে আমরা বই বাজারে আনছি। কারণ অপরিচিত বা নতুন লেখকের বই অনেকেই পড়তে চায় না ফলে ব্যবসা কম হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। সেখানে পরিচিত ও ভালো লেখকদের বই আনলে ব্যবসাও ভালো হয়। লেখকদের সাথে সমন্বয় করেই সবকিছু নির্ধারণ করা হয়।
খরচ বেশি থাকায় নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, খরচ বাড়লেও আগের কাগজই রয়েছে। ভালো কাগজ আর স্পষ্ট লেখা হলে বইয়ের প্রতি পাঠকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। বইমেলা থেকে বই কিনে পড়ার পর এটাতো আর ফেলে দিবে না, যত্ন করে সংরক্ষণ করে রাখবে। আমরাও যত্ন করে বই বানাচ্ছি।
এ বিষয়ে আদী প্রকাশন থেকে বিপ্লব খান জানান, বইমেলায় আগে আমাদের যে লাভ হতো এখন তা অনেক কম। করোনা পরবর্তী সময় থেকে এমন হচ্ছে। কাগজ, কালি ও আনুষঙ্গিক বিষয়ের দাম বেশি থাকায় বইয়ের দামও আমাদের বেশি রাখতে হচ্ছে। বইয়ের দাম বেশি থাকায় পাঠকরা বই কিনতে কম আগ্রহী। যেখানে একজন পাঠক বইমেলা থেকে ৫-৬টি বই ক্রয় করেন কিন্ত সেখানে দেখা যাচ্ছে এখন ৩-৪টি বই কিনছে। বইয়ের দাম বেড়েছে বলে আমাদের লাভও বেড়েছে এমন না, খরচ বেশি হচ্ছে ওটা বহন করার জন্যই দাম বাড়ানো হচ্ছে।
মম প্রকাশের ম্যানেজার সৌরব ইসলাম জানান, এবার আমরা বইমেলায় যাচ্ছি না, প্রকাশনীর আর্থিক অবস্থা এখন খুব একটা ভালো না। ঘরে অনেক বই পড়ে আছে। বিক্রি হচ্ছে না।
নূর প্রিন্টার্স থেকে মোঃ নুর আলম রাজু বলেন, এখন বই ছাপানোর কাজ একটু কম পাই। সবকিছুর দাম বাড়াতে প্রকাশনী থেকে কাজ কম আসে। দুইটি প্রকাশনী আমার এখানে বই ছাপাই। একটি প্রকাশনী বই ছাপিয়েছে আরেটির কাজ এখনো পায়নি। তবে বই ছাপানোর জন্য এখনো যথেষ্ট সময় আছে।
এসএম ব্রাদার্স (বাঁধাই) থেকে শাহরুল ইসলাম বলেন, ছাপাখানা থেকে ছাপ দেয়া কাগজ আমাদের এখানে আসে। এরপর বাইন্ডিংয়ের কাজ শুরু হয়। এবছর কাজ ভালোই পাচ্ছি, হাতে অনেক কাজ আছে। সামনে আরও কাজ বাড়বে।
সূত্র: সময়ের আলো