অসুস্থ অসহায় শিক্ষকের পাশে কমলগঞ্জের ইউএনও
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ প্রায় ২০ বছর আগে অবসরগ্রহণ করে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আশিকুর রহমান চৌধুরী।
সম্প্রতি তাঁর ছাত্রদের মাধ্যমে এ বিষয়টি সমাজিক মাধ্যমে ভিডিও ও তথ্য ভাইরাল হলে তাঁর ছাত্ররা আশিক স্যার সহায়তা তহবিল গঠন করে ব্যাংক একাউন্ট খোলে। এসব তথ্য জেনে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন গত মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিকেলে রমজানের জন্য কিছু খাদ্যসামগ্রী ও আর্থিক সহায়তা নিয়ে এসে হাজির হন শিক্ষক আশিকুর রহমান চৌধুরীর শমশেরনগর ইউনিয়নের ভাদাইর দেউল গ্রামের বাড়িতে।
মানসিকভাবে অসুস্থ্য শিক্ষক আশিকুর রহমান চৌধুরীর এক ছেলে বিয়ে করে স্ত্রীসহ ঢাকায় বসবাস করলে খোঁজ নেয় না বাবা-মা ও দুই বোনের। বাড়িতে স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে মাত্র ৯ হাজার টাকার পেনশন ভাতা নিয়ে কোন রকমে সংসার চলছে। বড় মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার সময় মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে ঘরে পড়ে আছে। দ্বিতীয় মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ঘরে বসা। শিক্ষক আশিকুর রহমান চৌধুরী ২০০৫ সালে শমশেরনগর ইউনিয়নের সতিঝির গাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তার কয়েক বছর আগে তারই ছোট ভাই রফিকুর রহমান চৌধুরী গ্রামের বাড়ি মুন্সীবাজারে খুন হওয়ার পর থেকে আশিকুর রহমান চৌধুরী আরও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
অতি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শিক্ষক আশিকুর রহমান চৌধুরীর মামবেতর জীবন যাপনের ভিডিও ভাইরাল হয়। তার পর থেকে তাঁর প্রাক্তন ছাত্ররা শমশেরনগর ইউনিয়নের ভাদাইর দেউল গ্রামে শিক্ষক আশিক চৌধুরীর বর্তমান বাড়িতে এসে খোঁজ খবর নিতে শুরু করে। প্রাথমিকভাবে ওই শিক্ষকের পরিবারে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা পৌছে দেয়। এরপর সভা করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট আশিক স্যার সহায়তা কমিটি গঠন করে এ নামে যৌথ স্বাক্ষরিত ব্যাংক একাউন্ট খোলে তহবিল গঠন শুরু করে।
আশিক স্যার সহায়তা কমিটির সদস্য সচিব আব্দুস সালাম বলেন, ফেসবুকে না দেখলে প্রিয় এ স্যারে মানবেতর জীবনযাপন সম্পর্কে জানা যেত না। ৫শতক জায়গা থাকলেও এক শতক জমিতে দুই কক্ষের একটি বাড়িতে খেয়ে না খেয়ে তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে বসবাস করছিলেন। এখন তহবিলে কাংখিত অর্থ জমা হলে তাঁর ৫ শতক জমিতে শিক্ষকের জন্য একটি বসবাস উপযোগী একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া ও পরিবারের জন্য ব্যাংক বা ডাকঘরে অর্থ জমা করে রাখার চিন্তা ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যেই দেশ বিদেশ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। আশা করা যায় সহায়তা তহবিলে ভালো অর্থ জমা হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন বলেন, ফেসবুকে শিক্ষক আশিকুর রহমান চৌধুরী সম্পর্কে জেনে গত মঙ্গলবার বিকেলে নিজে এসে এ শিক্ষকের সাথে দেখা করে তাঁর ও পরিবার সদস্যদের খোঁজ খবর নেন। শিক্ষকের জন্য কিছু খাদ্য সামগ্রী ও কিছু আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। তিনি আরও বলেন, শিক্ষকের প্রতিবন্ধী মেয়ের ভাতা প্রাপ্তি ও পরিবারে আরও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের চেষ্টা করবেন।