আমার আশা ছিল আকাশচুম্বী
কাজল ঘোষ ।। সময়টা ২০১০ সাল। নির্বাচনের রাত। আমি অ্যাটর্নি জেনারেল পদের দৌড়ে হেরে গিয়েছিলাম। এর ঠিক তিন সপ্তাহ পর আমি জয়লাভ করি।
আমি সেদিন সন্ধ্যায় রীতি অনুযায়ী পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে একটি ডিনারের আয়োজনে যাই। তারপর ছিল নির্বাচনের রাতের পার্টি। যা অনুষ্ঠিত হয় সান ফ্রান্সিসকো ওয়াটার ফ্রন্টে। আর তা ছিল আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিমি সিলবার্টের স্ট্রিট ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়ের পাশেই।
এই ফাউন্ডেশনটি মাদকাসক্তদের কর্মসংস্থানের প্রশিক্ষণ দিতো, নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের প্রশিক্ষণ দিতো, কারামুক্তদের প্রশিক্ষণ দিতো এবং প্রশিক্ষণ দিতো অন্যদের যারা জীবন পাল্টে ফেলতে চায়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যখন ফল আসা শুরু হলো এমন সময় আমরা গিয়ে পৌঁছালাম। মূল কক্ষে সমর্থকরা ভিড় করেছিল পূর্বানুমানের ভিত্তিতে কি ফলাফল হয় তা জানতে। মঞ্চের পাশেই টেলিভিশন ক্যামেরা এবং প্রেসের লোকজন অপেক্ষা করছিল। আমরা পেছন দিয়ে একটি কক্ষে প্রবেশ করি আর এর পাশেই আমার স্টাফরা ভিড় করেছিল। বর্গাকার একটি জায়গায় তারা চারটি টেবিল বসায়। বেশির ভাগই সেখানে বসে তাদের ল্যাপটপ নিয়ে কাজ শুরু করে। রিফ্রেশ দিয়ে ওয়েবসাইট ট্র্যাকিং করে নির্বাচনের ফলাফল গণনা করছিল। আমি সকলকে শুভেচ্ছা জানাই। আমার আশা ছিল আকাশচুম্বী। আমি সকলকে কঠোর পরিশ্রমের জন্য ধন্যবাদ জানাই।
আমার প্রধান কৌঁসুলি কর্মকর্তা এইস স্মিত আমার পাশে বসে।
কেমন দেখছেন, আমি জানতে চাইলাম তার কাছে।
নির্বাচনের ফল পেতে রাত দীর্ঘ হবে। এইস বললো, আমার প্রতিপক্ষ জিতে যাচ্ছে।
আমি বরাবরই জানি, কোনো কিছুরই নিশ্চয়তা নেই। যদিও আমাকে আমার প্রচুর ডেমোক্রেট অনুসারী আমি বিজয়ী হবো বলে দীর্ঘ সময় ধরে অনুমান করছিল, আবার তেমনটা হবে না বলেও অনেকের ধারণা ছিল। ইউসি আরভিনে সমবেত জনতাকে উদ্দেশ্য করে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কৌঁসুলি ঘোষণা করলেন যে, আমার জেতার কোনো উপায় নেই। কারণ আমি ছিলাম, ‘একজন নারী যে অ্যাটর্নি জেনারেল পদের জন্য লড়ছি, আমি একজন সংখ্যালঘু নারী, যে একই সঙ্গে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী এবং বিশৃঙ্খল সান ফ্র্যান্সিসকোতে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি পদে কাজ করেছি। পুরনো ধ্যানধারণা পরিবর্তন এত সহজ নয়। আমাকে আশ্বস্ত করা হলো যে, আমার উদ্দেশ্য এবং অভিজ্ঞতা এই নির্বাচনে আমাকে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করেছে। কিন্তু ভোটাররা এর সঙ্গে একমত কিনা সেটা আমি জানি না। সবশেষ গত ক’সপ্তাহ আমি দরোজায় দরোজায় ভোট চেয়ে ছুটেছি।
রাত দশটা নাগাদ আমরা যা জানলাম তাতে নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করা যায় না। আমি পিছিয়ে ছিলাম কিন্তু এটা জানতাম যে আরো অনেক ফল আসার বাকি আছে।
এইস আমাকে পরামর্শ দিলো বের হয়ে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখার জন্য। সে আমাকে আরো বললো, ক্যামেরাগুলো খুব বেশি অপেক্ষায় নেই। সুতরাং আপনি যদি সমর্থকদের উদ্দেশ্যে কথা বলতে চান এই রাতটাই ভালো সময়। এবং আমি মনে করি আপনার সেটা এখনই করা উচিত। এইসের এই ধারণাটি আমার কাছে বেশি স্মার্ট মনে হলো। স্টাফ রুম থেকে আমি বেরিয়ে গেলাম, কয়েক মিনিট নীরবে চিন্তা করলাম- আমার কি বলা উচিত। তারপর আমার স্যুট জ্যাকেট টেনে পরিপাটি হলাম এবং প্রধান কক্ষে মঞ্চের উপর উপস্থিত হলাম। সমবেত জনতাকে বললাম, ফল পেতে রাত দীর্ঘ হতে পারে। কিন্তু এই রাতটির খবর সুখবরও হতে পারে। তাদেরকে নিশ্চয়তা দিলাম যে, মিনিট খানেক হলো আমার বিরোধী পরাজয়ের দিকে যাচ্ছে। তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিলাম, আমরা প্রচারণা চালিয়েছি কি নিয়ে? এবং আমরা কিসের পক্ষে। ‘এই প্রচারণাটা আমার নিজের থেকে বড়। যেকোনো ব্যক্তির থেকে এটা অনেক বড়।’
কমালা হ্যারিসের অটোবায়োগ্রাফি
‘দ্য ট্রুথ উই হোল্ড’ বই থেকে
-মানবজমিন
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন