বইয়ের পাতা থেকে বিশ্ব

আমাদের শৈশব কেটেছে ভাড়া বাড়িতেই


আমাদের শৈশব কেটেছে ভাড়া বাড়িতেই

কাজল ঘোষ || আমাদের শৈশবের বেশির ভাগ সময় কেটেছে ভাড়া বাড়িতে। বাসা নিয়ে মা অবিশ্বাস্যরকম গর্ব করতেন। তাজা ফুলে আমাদের বাসাটি সাজানো থাকতো সব সময়। আমাদের বাসার দেয়ালগুলো সাজানো হতো হার্লেম স্টুডিও মিউজিয়াম থেকে সংগ্রহ করা লেরয় ক্লার্ক এবং অন্যান্য অনেক শিল্পীর ছবি দিয়ে। হার্লেম স্টুডিও মিউজিয়ামে কাজ করতেন আঙ্কেল ফ্রেডি। ইন্ডিয়া, আফ্রিকা ছাড়াও বাইরে বেড়াতে যাওয়া দেশগুলোর স্ট্যাচু শোভা পেতো বাসায়। আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট বাসাটি সবসময় সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সাজিয়ে রাখা হতো। উষ্ণতায় পূর্ণ থাকতো সবসময়।

আমাদের শৈশব কেটেছে ভাড়া বাড়িতেই   কিন্তু আমি জানতাম মা আরো কিছু চাইতেন। তিনি নিজে একটি বাসার মালিক হতে চাইতেন।

বাস্তব পরিস্থিতিটি মা-ই প্রথম তুলে ধরেছিলেন। এটা ছিল সুযোগ্য বিনিয়োগ। এটা হয়তো এর চেয়েও বেশি ছিল। এটা ছিল তার আমেরিকান ড্রিমের পূর্ণতার একটি অংশ।

আমার মা প্রথম যখন বাড়ি কিনতে চাইলেন তখন আমি আর মায়া দুজনই উঠতি বয়সের। তিনি চেয়েছিলেন আমরা যেন নিজেদের  যোগ্যতায়ই বেড়ে উঠি। কিন্তু ডাউন পেমেন্ট দেয়ার জন্য টাকা জমাতে অনেক বছর সময় লেগে যায়।

আমি যখন হাই স্কুলে পড়ি তখন এটি করতে পারেন তিনি। মায়া এবং আমি স্কুল থেকে ফিরলে মা আমাদেরকে সেই বাড়িটির ছবি দেখান। একটি একতলা গাঢ় ধূসর রঙের কাল-ডে-সেক, এতে ছিল একক ছাদ, সামনে সুন্দর লন, বারবি কিউ করার জন্য ছিল একটি খোলা জায়গা। মা বাড়িটির ছবি আমাদের দেখাতে যেমন উত্তেজনা অনুভব করছিলেন, আমরাও ঠিক তেমনি। উত্তেজনা অনুভব করার কারণ ছিল এই যে, আমরা ওকল্যান্ডে ফিরছি। আর তা নিয়ে মায়ের মুখে এক ধরনের পরিতৃপ্তি দেখতে পাচ্ছিলাম। তিনি উপার্জন করে তা করেছিলেন।

‘এটাই আমাদের বাসা!’ আমি গর্বের সঙ্গে সেই বাড়ির ছবি দেখিয়ে বন্ধুদের বললাম। বিশ্বে এটা আমাদের গর্বের একটি জায়গা।

২০১০ সালে আমি যখন ক্যালিফোর্নিয়ার ফ্রেসনো বেড়াতে যাই তখনকার স্মৃতি আমার মনে আছে। সে বছরের মধ্যভাগে ফোরক্লোজার সংকটে সেখানকার অসংখ্য মানুষের সবকিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
ক্যালিফোর্নিয়ার সান জোয়াকিন ভ্যালির সবচেয়ে বড় শহর হচ্ছে ফ্রেসনো। এই এলাকাটিকে বলা হয়ে থাকে সূর্যের বাগান। সান জোয়াকিন ভ্যালিতে রয়েছে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কৃষি খামার। যেখান থেকে আমেরিকার সবচেয়ে বেশি ফলমূল ও শস্যাদি উৎপন্ন হয়ে থাকে। এর মধ্যে সেখানকার চার লাখ অধিবাসী একরের পর একর জায়গা জুড়ে এলমন্ড, ভিনিয়ার্ড এবং আঙুর চাষ করে থাকে। সেখানকার অধিবাসী হিসাব করলে কানেকটিকাটের জনসংখ্যার প্রায় সমান।

ফ্রেসনোর বাসরত অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যে দেখেছি আমেরিকান ড্রিম। এই স্থানটিকে আমার মনে হয়েছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার স্থান। সেখানকার সাবারবার্ন স্ট্রিটে আমি দেখেছি সত্যিকার অর্থে ছোট পরিবার বাসের সর্বোত্তম জায়গা। সেখানকার মানুষের মধ্যে আমি দেখেছি গতিশীল এক আমেরিকা, যাদের মধ্যে রয়েছে তীব্র প্রাণশক্তি এবং আশাবাদ।

একবিংশ শতকের শুরুর দিকে সান জোয়াকিন ভ্যালির জনসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছিল। তার মধ্যে শতকরা প্রায় চল্লিশ ভাগই লাতিন। এখানে প্রচুর মানুষের বসবাস ছিল। তারা কাজ করতেন সান ফ্রান্সিসকো অথবা স্যাক্রামেন্টা। সেখানে আসা- যাওয়ায় ছয় ঘণ্টার মতো সময় লাগতো। এতে অনেকেই প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলতো। কিন্তু বিনিময়ে তারা যা পেয়েছে তার মূল্য অসীম। সেটা হলো মর্যাদা, গৌরব এবং নিরাপত্তা। আমেরিকান বাড়ির মালিকানা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়গুলো চলে আসে। প্রতি মাসেই সেখানে নতুন নতুন উন্নয়ন পরিকল্পনা নেয়া হতো। এখানকার মাটি ছিল উর্বর। যেন তা ফসল ফলানোর জন্য উপযুক্ত। এ জায়গাটি খুব বেশি দূরে নয়। ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রবণতার কারণে ফ্রেসনোর রিয়েল এস্টেট ব্যবসা ফুলে ফেঁপে ওঠছিল। আর তাতেই সেখানকার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়ে ওঠছিল।
কমালা হ্যারিসের অটোবায়োগ্রাফি
‘দ্য ট্রুথ উই হোল্ড’ বই থেকে

 


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

 

সংবাদটি শেয়ার করুন