দেশের সংবাদ ফিচার্ড

আমার প্রথম কাজ হবে আইন–শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা: ড. ইউনূস

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত

আমার প্রথম কাজ হবে আইন–শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা: ড. ইউনূস

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করাই হবে ড. ইউনূসের প্রথম কাজ। শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকায় ফিরে তাঁর প্রথম বক্তৃতাতেই এ কথা বলেছেন।

এসময় তিনি কারও ওপর কোনো হামলা যাতে না হয় সেই আহ্বান জানিয়েছেন। এর পাশাপাশি তিনি বলেছেন, ‘আমার ওপর আস্থা রাখুন।’ তিনি ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এ স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতেই হবে।’

বিভিন্ন জায়গায় হামলা বা আক্রমণ ষড়যন্ত্রের অংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এগুলো আমাদের কিছু না… আমাদের কাজ সবাইকে রক্ষা করা। প্রতিটি মানুষ আমাদের ভাই, আমাদের বোন। তাদেরকে রক্ষা করা এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা আমাদের প্রথম কাজ।’

বৃহস্পতিবার বেলা ২টা ১০ মিনিটে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফেরেন ড. ইউনূস। তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, অন্য দুই বাহিনীর প্রধান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। এরপর তিনি বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন।

সহিংসতাকারীদের প্রতিরোধে আইন নিজেদের হাতে না তুলে নেয়ার কথাও বলেন তিনি। বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করলে যেন দুটা টাকা দিয়ে ছেড়ে দিলো এমনটা যেন না হয়।’

এই আন্দোলনে তরুণদের ভূমিকার প্রশংসা করে তাদের দেশ পরিচালনার কথাও বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আজকে আমাদের গৌরবের দিন। যে বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন বিজয় দিবস সৃষ্টি করল তরুণেরা সেটাকে সামনে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। যারা এটা সম্ভব করেছে, যে তরুণ সমাজ তাদের প্রতি আমি আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তারা বাংলাদেশকে রক্ষা করেছে। নতুন করে পুনর্জন্ম দিয়েছে।

এ সময় ড. ইউনূস বলেন, আমার আবু সাঈদের কথা মনে পড়ছে। অবিশ্বাস্য এক সাহসী যুবক।’ আবু সাঈদের কথা বলার সময় অধ্যাপক ইউনূস কেঁদে ফেলেন।

তিনি বলেন, ‘আবু সাইদের কথা মনে পড়ছে আমাদের। তার কথা প্রতিটি মানুষের মনে গেঁথে আছে। তারপর থেকে কোনো যুবক হার মানে নাই। তারা এগিয়ে গেছে।’

‘সরকার বলে একটা জিনিস আছে, কিন্তু আস্থা নাই’ উল্লেখ করে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সরকারের কথা শুনলে মনে হয় ভয়ের একটা জিনিস। তাকে সামাল দিয়ে চলতে হবে। কিন্তু এটা হওয়ার কথা না। সরকার মানুষকে রক্ষা করবে, মানুষের আস্থাভাজন হবে। সরকারি লোক দেখলে বলবে আমার লোক।’

অধ্যাপক ইউনূস শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, এ স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হবে। প্রতিটি মানুষের কাছে এর সুফল পৌঁছে দিতে হবে। স্বাধীনতার অর্থ হলো, দেশ তোমাদের হাতে। তোমাদের মনের মতো করে গড়তে পারো। পালটে ফেলতে পারো। পুরোনোদের বাদ দাও। তোমাদের মধ্যে সৃজনশীলতা আছে, তাকে কাজে লাগাও।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সরকার হয়ে উঠেছিল দমনপীড়নের একটি যন্ত্র। এটা সরকার হতে পারে না। সরকারকে দেখে মানুষ উৎফুল্ল হবে। যে সরকার মানুষকে রক্ষা করবে। আমাদের সারা বাংলাদেশ একটি পরিবার। দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, মানুষ মানুষকে আক্রমণ করছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে । সবাইকে রক্ষা করা আমাদের কাজ। প্রতিটা মানুষ আমাদের ভাই। বিশৃঙ্খলা অগ্রগতির বড় শত্রু। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা আমাদের প্রথম কাজ।

ড. ইউনূস বলেন, দেশবাসীর কাছে আবেদন, আপনারা যদি আমার ওপর বিশ্বাস রাখেন তবে দেশের কারও ওপরে হামলা হবে না। বিশৃঙ্খলা থেকে, সহিংসতা থেকে রক্ষা করেন। কোনো গোলযোগ যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

এদিকে, আজ রাত সাড়ে আটটায় নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ হবে বলে জানা গেছে। এই সরকারের সদস্য ১৫ জনের মতো হতে পারে বলে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে জানান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয় গত সোমবার।

-বাংলাদেশ জার্নাল

 


এসএস/সিএ
সংবাদটি শেয়ার করুন