আমি ও আনিস স্যার
পুলক বড়ুয়া
আমার উৎসর্গপত্র থেকে পাতার পর পাতার বিন্যস্ত অক্ষর-মনোকোণ কোমল তরঙ্গের মতো ধ্বনিত- প্রতিধ্বনিত করবে না তোমার কর্ণকুহর : বঙ্গোপ- সাগরের ঢেউয়ের মতন জোয়ারে ঝাঁপিয়ে পড়বে না উপচে পড়বে না ভাটায় টান দেবে না বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতে পর্যটকের মতোন বায়ু বদলে স্বাগত মৌন আর্তনাদগুলি নিশ্চুপ কিসসাগুলি স্তব্ধ উচ্চারণগুলি—তোমার দুবাহু কূল-উপকূলে
দুমলাটের মতোন সযত্ন দুটি হাতের কপাটে একের পর এক পাতার ভাঁজগুলি যেন এক জাদুকরের মোহন জাদুর বাঁশির মতোন বীণার ঐন্দ্রজালিক আঙুলে উল্টেপাল্টে মেলে খুলে যাবে না দেখবে না আলিঙ্গন করবে না কেউ শুরু থেকে শেষাবধি । অগত্যা আমার পুঁথির পেয়ালা হাতে তাতে চুমুক দেবে না চোখে চেখে দেখবে না চোয়ানী—ছোঁয়াবে না যুগল ওষ্ঠ—পান করবে না সুধার মতোন শব্দের শরাব—সুরের সুরা—ধ্বনি থেকে মৌন বয়ানে মণি বুলায়ে—বর্ণমর্মমদে বুঁদ হয়ে কোনো পঙক্তি- মাতাল-কন্ঠ মন্ত্রোচ্চারণসম আবৃত্তি করবে না—সেই ঘোর লাগা অন্ধ-সান্ধ্য কাব্যবন্ধ
শব্দের গভীর সমুদ্র থেকে অক্লান্ত শব্দবাহী রণতরী ভেড়ে বাংলাদেশের বাঙলা ভাষার বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে আমার আঙুলে বাঙলা বর্ণমালার বন্দরে নোঙরে । জমে ওঠে পঙক্তি-পরিশ্রুত পান্ডুলিপি-গোলাঘর । সময় বড় খিন্ন । আমার কাব্যাত্মা হয়ে ওঠে তোমার বিয়োগে বাউল- বিউগল ! ঝলসে ওঠে সাঁজোয়া যানের মতোন কী সুন্দর শূন্যে ফাঁকা আওয়াজ ছুঁড়ে হাওয়ায় তোপধ্বনি তুলে আপাদমস্তক পিপিই হাতে গ্লাভস মুখে মাস্ক আচ্ছাদিত নতুন গদ্যময় কাল তোমাকে আর পুরনো নয়—নয়া অভিবাদনের মোড়কে ! জনান্তিকে, চুপিসারে এই প্রথম আর শেষবারের মতোন ।
তুমি এই মহিয়সি সাহসী মৃত্তিকার বীর মানসপুত্র । ঋদ্ধ ভাবসম্পদ । দীর্ঘ-মহার্ঘ মহাফেজখানা । তুমি আমার কর্পূরের মতোন উবে যাওয়া গোপন আঁখির অশ্রু-দৃষ্টিপাত ! তুমি আমার আঁজলা ভরা আঁখির অক্ষরপাত ।