ইউনেস্কো নির্বাচনে বাংলাদেশের জয়
ইউনেস্কোতে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিষয়ক আন্তঃসরকার পর্ষদের তীব্র প্রতিদন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এ জয়ের মধ্য দিয়ে ২০২২-২৬ মেয়াদে বাংলাদেশ ওই কমিটিতে কাজ করার সুযোগ অর্জন করলো বলে জানিয়েছে প্যারিসের বাংলাদেশ দূতাবাস।
তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি খন্দকার এম তালহা বলেন, বাংলাদেশের এই জয়লাভ বিগত পাঁচ দশকে ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের নিয়মিত উদযাপন ও দূতাবাসের কূটনৈতিক তৎপরতার ফসল।
গত নভেম্বরে সৃজনশীল অর্থনীতি খাতে ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক পুরষ্কার প্রদান উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর সফর বাংলাদেশের জয়লাভের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের এই জয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব ও দিক-নির্দেশনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচালিত কূটনৈতিক কার্যক্রমের প্রতি বিশ্ব নেতৃত্বের আস্থার একটি স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হবে। ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রাক্কালে এই জয়লাভ ইউনেস্কো-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কে একটি ভিন্নমাত্রা যোগ করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ নিয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবুল মনসুর সাংবাদিকদের জানান, ২০০৩ কনভেনশনের আওতায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশের জামদানী বুনন, শীতল পাটি, বাউল সংগীত এবং মঙ্গল শোভাযাত্রা অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে বিশ্ব-দরবারে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে জয়লাভের ফলে বাংলাদেশের আরও যে সকল অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে তা বিশ্বে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় নিবন্ধনের সুযোগ রয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসমূহের পাশাপাশি বিশ্বে অন্যান্য দেশে এই ধরণের ঐতিহ্যসমূহকে প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা প্রদানের গুরুদায়িত্ব বাংলাদেশের উপর অর্পিত হবে। এটিকে সাংস্কৃতিক খাতে বাংলাদেশের একটি কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে মনে করেন এবং এ নির্বাচনে জয়লাভের নেপথ্যে সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য প্যারিসস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ভূয়সী প্রশংসা করেন সংস্কৃতি সচিব।
নির্বাচনে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনাম এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে এ পর্ষদে নিজেদের স্থান নিশ্চিত করে। ৫-৭ জুলাই ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত এ সভায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবুল মনসুর-এর নেতৃত্বে গঠিত ৪-সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি খন্দকার এম তালহা অংশগ্রহণ করেন। দূতাবাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি মতে, সাধারণ সভা চলাকালীন গত ৬ জুলাই ২০২২ তারিখে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আইসিইউ’র ৬ টি নির্বাচনী গ্রুপে সদস্যভুক্ত মোট ১৮০ টি দেশের মধ্যে ১২ টি শূন্যপদে বিভিন্ন দেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৪ টি শূন্যপদে বাংলাদেশ ছাড়াও কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ভারত, মালয়শিয়া ও থাইল্যান্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ইতোপূর্বে উপর্যুক্ত ৬ টি দেশ ছাড়াও আফগানিস্থান, ইরান ও পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা থাকলেও তারা শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়।
উল্লেখ্য, গত ২০২০ সালে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেয়। ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে তা ইউনেস্কো কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। প্যারিসস্থ ইউনেস্কো সদর দপ্তরে আইসিএইচ বিষয়ক ২০০৩ কনভেনশন-এর সদস্য দেশসমূহের অংশগ্রহণে চলমান সাধারণ সভায় এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।