ফিচার্ড মত-মতান্তর

তবু শুভদিন আসুক!

বাংলাদেশের-ভবিষ্যৎ-কি

তবু শুভদিন আসুক!

শিতাংশু গুহ, ২১শে মে ২০২৩, নিউইয়র্ক।। বাংলাদেশকে এর জন্মগত অবস্থানে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব কি? এ সময়ে এমত কিছুটা সম্ভবনা কি দেখা যায়? প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ‘ইনক্লুসিভ’ রাজনীতি করছেন। অর্থাৎ সবাইকে নিয়ে চলার রাজনীতি। এটি ভালো, রাষ্ট্রনায়কোচিত দর্শন। এ দর্শনে জামাত-হেফাজত অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ অবস্থা চলছে, চলবে। শেখ হাসিনা এখন ৭৭, সামনের নির্বাচনে জয়ী হয়ে পাঁচ বছর শাসন করার পর তাঁর বয়স হবে ৮২। এখনই মাঝেমধ্যে তিনি ‘অবসরে’ যাওয়ার কথা বলেন, ২০২৯-এ যদি তিনি রিটায়ার করেন, তখন দেখা যাবে বাংলাদেশের আসল চেহারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৮২ বছর বয়সে নির্বাচন করতে পারলে শেখ হাসিনা পারবেন না কেন? হ্যাঁ, তিনি সুস্থ থাকলে আরো একটি টার্ম (২০৩৪) পর্যন্ত দেশ নিরাপদ থাকবে।

তারপর কি? সেই বিখ্যাত গান, ‘তার আর পর নেই—? অনেকেই বলেন, দেশের বর্তমান চেহারাটা সাময়িক, এবার নির্বাচনে জিতলে দেশ আবার বঙ্গবন্ধু’র আদর্শে ফিরে আসবে। সেই সম্ভবনা কি আদৌ আছে? দেশে এখন রাজনৈতিক দর্শন হচ্ছে, ‘আপোষ’। সংগ্রাম করে জেতার কোন সুযোগ নেই! সংগ্রাম নেই, আগামী আরো কিছু বছর থাকবে না? দরকার নেই, সবাই আপোষ করছেন, সবাই আপোষ করবেন। আপোষ করতে না পারলে দেশ ছাড়তে হবে, দরজা খোলা। এখন তো তবু আপোষ করছেন, মোটামুটি একটি সভ্য শক্তির সাথে, আগামী দিনগুলোতে সেটি আরো ভয়াবহ হবে। যতই দিন যাবে, বাংলাদেশে আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাবে, দেশীয় ষ্টাইল গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ডিএসএ সবই থাকবে।

আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু’র আদর্শ থেকে সরে গেছে। আরো যাবে। এই সরে যাওয়াটা শুরু হয়েছিলো ২০০৬-এ খেলাফত মজলিশ’র সাথে আবদুল জলিল-এর ‘মউ’ (সমঝোতা স্মারক) স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে। তখন প্রতিবাদ হয়েছিলো, সমালোচনার সুযোগ ছিলো। নিউইয়র্কে আমরাও একটি চটি বই বের করেছিলাম। এরপর পদ্মা-মেঘনা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। ২০১৩-তে হেফাজতে ইসলামের উত্থান, এবং শাপলা চত্বরে কঠোরভাবে বিদ্রোহ দমন। আওয়ামী লীগ হেফাজতকে ঠান্ডা করেছে, কিন্তু ওদের ১৩-দফা গ্রহণ করেছে। ১৩-দফায় কি আছে সবার জানা, তবে খেলাফতে মজলিসের ঠিক কি কি দাবি আওয়ামী লীগ মেনে নিয়েছিলো তা অনেকেই জানেন-না। তখন বোঝানো হয়েছিলো যে, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যে এগুলো সাময়িক চুক্তি।

উইকিপিডিয়া জানায়, ২০০৬-র স্মারক সমঝোতায় আওয়ামী লীগ আহমদিয়া সম্প্রদায়কে ‘অ-মুসলিম’ ঘোষণা এবং ইসলাম অবমাননা রোধে ‘ব্ল্যাসফেমি’ আইন  প্রণয়ন করবে, ‘ফতোয়া’-র বৈধতা দেবে। শেখ হাসিনা তখন বলেছিলেন, খেলাফতে মজলিস তাঁর কাছে আসে, এবং আওয়ামী লীগের সাথে জোট বাঁধতে চায়, তাঁরা ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দল আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেবে। দলের ভেতর এনিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। তৎকালীন প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু বলেছিলেন, এনিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হয়নি। ২০০৭-এ সকল বাধা পেরিয়ে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন, ওই চুক্তি পরিত্যক্ত হয়। শেখ হাসিনা তখন বলেছিলেন যে, জামাতকে ঠেকাতে এ চুক্তি করা হয়, এবং নির্বাচনে জয়ের জন্যে দল তাঁকে যেকোন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ ফারাক্কা চুক্তি সম্পাদনের অসাধ্য কাজ সম্ভব করেছিলো। প্রায়ত: আবদুর রাজ্জাক একাজটি সম্পন্ন করেন। একইভাবে হেফাজতকে ঠান্ডা করার কৃতিত্ব সবাই সৈয়দ আশরাফ-কে দেয়। আগে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির রাজনীতি ছিলো ‘ফারাক্কা’, শেখ হাসিনা এটি বন্ধ করতে চেয়েছেন, তিনি সফল হয়েছেন। একইভাবে আওয়ামী লীগ মনে করেছে যে, ইসলাম নিয়ে বিএনপি-হেফাজত-জামাতকে রাজনীতি করতে দেয়া হবেনা, তাই তাঁরা নিজেরাই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু করে? এরফলে যা হবার তাই হয়েছে। আওয়ামী লীগ এর বৈশিষ্ঠ্য হারিয়ে অনেকটা ‘মুসলিম আওয়ামী লীগ’ চেহারা ধারণ করেছে। আওয়ামী লীগ যাঁদের ধর্ম নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করতে চেয়েছে, তাঁরা আগের মতই আছে, মধ্যখান থেকে আওয়ামী লীগ দল হিসাবে ওদের সমগোত্রীয় হয়ে গেছে।

আওয়ামী লীগ সুযোগ পেয়েও ৭২-র সংবিধান গ্রহণ করেনি। অথচ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের অংশটুকু ঠিকই গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে, কিন্তু শহীদ জননী জাহানারা ইমামের আন্দোলন ধ্বংস করে দিয়েছে। শাহবাগ আন্দোলন আওয়ামী লীগ বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ এ দু’টি আন্দোলন না হলে আওয়ামী লীগের পক্ষে ক্ষমতায় আসা বা থাকা কষ্টকর হতো। সরকার ধর্মকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিচ্ছে। হেফাজতের দাবি মেনে শিক্ষাব্যবস্থাকে ধর্মীয় মোড়কে আচ্ছাদিত করেছে। জাস্টিসিয়া সুপ্রিমকোর্টের সামনে থেকে পেছনে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, দেশে ‘কাজীর বিচার’ চালু হয়েছে। ওআইসি দেশে ‘ফ্রি-প্রেস’ বলতে কিছু নেই, বাংলাদেশেও থাকার কোন কারণ নেই? মুসলিম দেশগুলোতে নির্বাচন বলতে যা বোঝায় বাংলাদেশেও তাই হচ্ছে।

বাংলাদেশ গ্লোবাল প্লেয়ার। বিশ্বব্যাপী ধর্মান্ধতা জাগলে বাংলাদেশ এর বাইরে থাকবে এটি ভাবার কোন কারণ নেই! এখনো হয়তো কিছুটা ‘স্পেস’ আছে, যতদিন শেখ হাসিনা থাকবেন, হয়তো এ জায়গাটুকু থাকবে। আপনি আপনার দু:খের কথা বলতে পারবেন। এরপর সেই সুযোগও থাকবে না। দেশের চেহারায়  এখন যে ‘ইসলামী অবয়ব’ দেখা যাচ্ছে, সেটি আওয়ামী লীগের হাত দিয়ে হয়েছে। অনেকদিন আগে সুলতানা কামাল আমাকে বলেছিলেন, আপনার দলের হাত দিয়েই দেশে জামাত-হেফাজতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন হবে, তাঁর কথা সত্য। ভবিষ্যতে দেশে কি হবে কেউ জানেনা। তবে এটুকু বলা যায়, দেশে প্রতিদিন সূর্য্য উঠবে, চন্দ্র আলো দেবে, প্রকৃতি আপন নিয়মে সবকিছু ঠিক করে নেবে। সেই সুন্দর প্রভাত দেখার জন্যে হয়তো আপনি, আমি থাকবো না! তবু শুভদিন আসুক। [email protected];



এসএস/সিএ
সংবাদটি শেয়ার করুন