ফিচার্ড বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

এআই চ্যাটবট ছেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী, গুগলের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকলেন মা

ai-chatbot

নাগালের বাইরে থাকা কাল্পনিক চরিত্রেরা যদি হাতের নাগালে চলে আসে, তাহলে কেমন হয়? ক্লাস এইটের ছাত্র সেওয়েল সেৎজারের বিষয়টি বেশ ভালো লাগতে শুরু করেছিল। প্রিয় চরিত্রের সঙ্গে কথা বলতে বলতে একটা সময়ে তাকেই ভালোবেসে ফেলেছিল সে। মানসিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। কিন্তু যে সম্পর্ক পরিণতি পাওয়ার নয়, তা এগোবে কী করে! শেষ পর্যন্ত তাই নিজেকে শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয় ১৪ বছরের কিশোর। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিজের মাথায় নিজেই গুলি করে আত্মঘাতী হয় ফ্লোরিডার বাসিন্দা, ১৪ বছরের কিশোর সেওয়েল সেৎজার।

তার মা মেগান গার্সিয়ার দাবি, আত্মহত্যা করার আগে তার ছেলে শেষ কয়েক মাসে লাগাতার ক্যারেক্টার এএআই নামে ওই চ্যাটবটের সঙ্গে কথা বলত। মেগান জানিয়েছেন, সেই ভার্চুয়াল চরিত্রের নাম ডিনেরিস টেরাগ্যারিয়েন।

‘গেম অফ থ্রোন’-এর একটি চরিত্রের অনুকরণে নির্মিত ভার্চুয়াল ক্যারেক্টরটি। সেটির সঙ্গে কথা বলতে বলতে একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিল সে। তারপর আচমকাই এমন কাণ্ড ঘটিয়ে বসে।সেৎজারের মা আরও জানান, তার ছেলের ছোট থেকে মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ থাকলেও আত্মহত্যা করার আগ পর্যন্ত কখনও তার মধ্যে কোনও বিশেষ বিকৃতি দেখা যায়নি। তবে চলতি বছরের শুরু থেকেই স্কুলে কিছু সমস্যা হতে শুরু করে সেৎজারের। তারপর থেকেই ভার্চুয়াল ক্যারেক্টরটিই তার জীবনের সবকিছু হয়ে ওঠে।

সে ওই ভার্চুয়াল ক্যারেক্টারটিকে সম্বোধন করত ‘ড্যানি’ নামে। এবং তাকে সে নিজের ছোট বোন বলে মনে করতে শুরু করেছিল! সেৎজার তার ভার্চুয়াল বন্ধু ড্যানিকে এতটাই ভালোবাসত যে তার জীবনের শেষ দিনেও সে তাকে মেসেজ করতে ভোলেনি। সেদিন সেৎজার ড্যানিকে মেসেজ করেছিল, ‘বেবি সিস্টার, আমি তোমাকে মিস করছি।’ চ্যাটবট এর জবাব দেয়, ‘আমিও তোমাকে খুব মিস করছি আমার মিষ্টি ভাই। বিষয়টি জানার পরই সেৎজারের বাবা-মা তাকে একজন থেরাপিস্টের কাছে নিয়ে যান। সেখানে তাকে পাঁচটি সেশন করানো হয়। এরপর জানা যায়, সেৎজারের একটি নতুন সমস্যা শুরু হয়েছে। সে ‘অ্যাংজাইটি অ্যান্ড ডিসরাপটিভ মুড ডাইস্রেগুলেশন ডিসঅর্ডার’-এ ভুগতে শুরু করেছে।

সেৎজারের মায়ের অভিযোগ, ওই চ্যাটবটের প্রভাবেই তার ছেলে আত্মহত্যা করেছে। সেৎজারের মায়ের দাবি, এআই প্রযুক্তির আসক্তিই তার সন্তানকে তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে।

তার বক্তব্য, ‘এই মৃত্যুর দায় ক্যারেক্টার এআই ও তাদের প্রতিষ্ঠাতা গুগলকে নিতে হবে।’

ক্যারেক্টার এআই সংস্থার নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে মেগান গার্সিয়ার আইনজীবী আদালতে জানিয়েছে, অল্পবয়সীদের জন্য এক মারাত্মক ফাঁদ পাতা রয়েছে ওই অ্যাপে। শুধু তা-ই নয় ওই সংস্থা তাদের ব্যবসা বৃদ্ধিতে এতটাই ব্যস্ত ছিল যে, গুগ্‌লের সঙ্গেও সম্পর্ক ছিন্ন করে। ক্যারেক্টার এআই-এর প্রতিষ্ঠাতা নোয়ম শাজির নাকি এক বার প্রকাশ্যেই বলেছিলেন সে কথা। এ-ও বলেছিলেন যে, তারা যা বাজারে আনতে চাইছেন, গুগলের মতো বড় সংস্থা সেই ঝুঁকি নেবে না। মামলায় বলা হয়েছে শাজিরের ওই মনোভাবেই স্পষ্ট, ব্যবসাই তার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তার জন্য তিনি যে কোনও পদক্ষেপ নিতে রাজি।

সূত্র : মানবজমিন

এফএইচ বিডি / অনলাইন ডেস্ক
সংবাদটি শেয়ার করুন