একজন বীরের স্মৃতিসৌধ
সজীব দেবরায় ।। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের সকল স্থানের মত মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায়ও গর্জে উঠে ছিল পাকিস্থানি বর্বদের হাত থেকে দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করার সপ্নে বিভোর মুক্তিকামী মানুষের হাতিয়ার। এ উপজেলায় ছোট বড় বিভিন্ন যুদ্ধ হয়েছে। তাতে শহীদ হয়েছেন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মুক্তিকামী মানুষ। মা-বোনদের উপর রাজাকার ও পাকিস্থানি পিসাছদের অমানবিক অত্যাচারের কাহিনী শুনলে এখনও শরীরে আগুন ধরে যায়। কমলগঞ্জে রয়েছে ৬টি বদ্ধভূমি ও স্বাধীনতা যুদ্ধে ১টি স্মৃতিস্থম্ভ।
কমলগঞ্জ উপজেলা থেকে ২২কি.মি দক্ষিণে ধলই সীমান্ত অবস্থিত। সেখানে রয়েছে একজন বীরের স্মৃতিসৌধ। ওখানেই পাকিস্থানী সেনা বেরাক তছনছ করে বীরের হাসি হেসে শহীদ হয়েছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান। ধলই এলাকাটির নাম হয়েছে সীমান্তবর্তী ধলই চা বাগানের নামে। পাকিস্থানী সেনাদের ব্যবহৃত সেই বেরাকের জায়গাতে বর্তমানে বাংলাদেশ রাইফেলস(বর্ডার গাড বাংলাদেশ) এর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান সীমান্তফাঁড়ি অবস্থিত। ১৯৫৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি যশোর জেলার (বর্তমান ঝিনাইদাহ জেলা) মহেশপুর উপজেলার খর্দ্দা খালিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হামিদুর রহমান। হামিদুর রহমানের পিতার নাম আক্কাস আলী মন্ডল ও মাতার নাম মুসাম্মাৎ কায়সুন্নেসা। পরিবারে ০৪ ভাই ও ০২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। শিক্ষা জীবনে তিনি প্রথমে খালিশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং পরবর্তীকালে স্থানীয় নাইট স্কুলে সামান্য লেখাপড়া করেন।
বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান ১৯৭০ সালে পাকিস্থান সেনাবাহিনীতে যোগদান করার পর প্রশিক্ষণের জন্য থাকে পাঠানো হয়েছিল চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারে। তিনি ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদান করেন। ২৫ মার্চের রাতে চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ওখানকার আরও কয়েকটি ইউনিটের সমন্বয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। তিনি ৪নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর তারিখে ধলই বিওপি যুদ্ধে শত্রুর গুলিতে তিনি শাহাদৎ বরণ করেন এবং বীরশ্রেষ্ট খেতাবে ভূষিত হন। প্রাথমিকভাবে ধলই বিওপি থেকে ভারতের ৩০কি.মি অভ্যন্তরে ত্রিপুরায় আমবাসা নামক স্থানে সহযোদ্ধারা থাকে সমাহিত করে। পরবর্তীতে ২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর বর্তমান বর্ডার গাড বাংলাদেশের একটি দল ত্রিপুরা সীমান্তে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ গ্রহন করে এবং ১১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে ঢাকার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ খেতাব “বীরশ্রেষ্ঠ” প্রদান করা হয় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানকে। তার এই অসামান্য অবদান ভূলেনি বাংলার মানুষ ভূলেনি কমলগঞ্জ মৌলভীবাজার তথা সিলেটের মানুষ। তার স্মৃতিকে জাগ্রত করার লক্ষ্যে তিনি যেখানে শাহদৎ বরণ করেছিলেন সেখানে ২০০৬ সালে নতুনভাবে তৈরী করা হয় বীরশ্রেষ্ট হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ যার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সরকারের তৎকালিন অর্থমন্ত্রী প্রয়াত এম সাইফুর রহমান। মুক্তিযোদ্ধের সঠিক ইতিহাস ও হামিদুর রহমানের জীবনী আগত পর্যটকদের অবগতির জন্য ৪৬ বর্ডার গাড বাংলাদেশ শ্রীমঙ্গল সেক্টরের উদ্যোগে ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর উদ্ধোধন করা হয় বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতি আর্কাইভ।
প্রাথমিকভাবে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযোদ্ধের তথ্য চিত্র নিয়ে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরা হয় এই আর্কাইভে। এখানে বীরশ্রেষ্ট হামিদুর রহমানের কিছু ইতিহাস,তাঁর পরিবারের সচিত্র ইতিহাস ও সাত বীরশ্রেষ্টের ইতিহাস উপস্থাপন করা হয়েছে। অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত চা বাগান ঘেরা বীরশ্রেষ্ট হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ দেখতে ও মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাস জানতে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গার পর্যটকরা ফারি জমান এই ধলই সীমান্তে বীরশ্রেষ্ট হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধে।
সিএ/এসএস
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন