মত-মতান্তর

ওয়ার্ক ফ্রম হোম , এই সময়টা কাজে লাগানো খুবই জরুরী

ওয়ার্ক ফ্রম হোম
তানিয়া সুলতানা
ওয়ার্ক ফ্রম হোম, এই সময়টা কাজে লাগানো খুবই জরুরী  !! গত কয়েক দিন থেকেই ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ এ আছি। প্রথমে ভালোই লাগছিল সত্যি বলতে। কিন্তু একদিন যেতেই বুঝলাম- ইহা একটি অতীব কঠিন কাজ। বিশেষ করে যারা ফ্যামিলি মেম্বার নিয়ে থাকেন। যাই হোক একটা `টু ডু লিস্ট’ বানালাম। সেটা বানানো পর্যন্তই!

প্রথম দিন ঘুমিয়ে, দ্বিতীয় দিন বাচ্চাদের লেখাপড়া, তৃতীয় দিন বাসার কাজ। এর সাথে অফিস ওয়ার্ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি। যার ফল সব এলোমেলো। কোনটাই সুন্দরভাবে হচ্ছিল না ।

আমাদের পাশের দেশে ২১ দিনের লক-ডাউন চলছে । আমাদের পরিস্থিতি কতদিনে স্বাভাবিক হবে তা এই মুহূর্তে বোঝা যাচ্ছে না। কাজেই এই সময়টা কাজে লাগানো খুবই জরুরী। এখানে আমি কিছু পরামর্শ আপনাদের সাথে শেয়ার করছি এই সময়ের প্রেক্ষিতে ।

কাজ যখন ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’
কাজের জন্য পরিবেশ অত্যন্ত জরুরী। বাসার নির্দিষ্ট একটি স্থানে আপনার অফিস সেটআপ করে নিন। যেখানে কোনো প্রকার ডিস্ট্রাকশন কাজ করবে না। সময়টাও নির্দিষ্ট করুন। অনেকে ভাবতে পারে আপনি ছুটি কাটাচ্ছেন, তাদেরকে বুঝিয়ে বলুন আপনার কাজের ধরণ এবং প্রয়োজনীয়তা।

অন-লাইনে স্কিল ডেভেলপমেন্ট :
কর্মজীবী, ছাত্রছাত্রী, হোম মেকার, ব্যবসায়ী এই সময়টাতে যার যার প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী, নিজের ল্যাকিং আর ইন্টারেস্ট বিবেচনা করে স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর জন্য সময় দিতে পারেন। কোরসেরা, উদেমী, এ ডেক্স, পাইথন অনেক অনলাইন সার্টিফিকেশন কোর্স আছে যা কিনা কিছু ফ্রি আবার কিছু পেমেন্টে করা যায়, যেটা ভবিষ্যতে আপনার কাজে লাগবে।

ওয়ার্ক ফ্রম হোম, এই সময়টা কাজে লাগানো খুবই জরুরী  যা কাজের তালিকা করুন :
এই সময়টাতে একটা কাজের তালিকা তৈরি করুন। যা কিনা আপনার সব প্ল্যান কাভার করবে। যেখানে অফিস, বাসার কাজ, পার্সোনাল ডেভেলপমেন্ট এর কাজ, ক্রিয়েটিভ জিনিসও তালিকায় আসতে পারে, যা আপনাকে মানসিক প্রশান্তি দিবে।

হোম কোয়ারেন্টাইন রুটিন :
যে কোনো মানুষের ভবিষ্যতের সফলতা নির্ভর করে ব্যক্তির দৈনন্দিন রুটিন এর উপর। কাজের তালিকা তৈরি করে বসে থাকলে চলবে না। কাজগুলোর প্রায়োরিটি ঠিক করে, কাজের গুরুত্ব অনুযায়ী কাজগুলো ভাগ করুন। কাজগুলোকে রুটিনের মধ্যে আনুন। রুটিনের ছকে নিজেকে বাঁধুন সাথে সাথে ফ্যামিলিকেও ।

নিজের ও ফ্যামিলি মেম্বারদের বিশেষ যত্ন : 
বর্তমান করোনাভাইরাস এর সময় প্রত্যেকের ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়াতে হবে। কাজেই নিজের ও ফ্যামিলি মেম্বারদের প্রতি যত্নবান হোন। ভিটামিন সি, পর্যাপ্ত পানি, সামর্থ্য অনুযায়ী পর্যাপ্ত প্রোটিন খান। আমরা যারা সূর্যের আলো গায়ে লাগাতে পারি না অফিস-ক্লাস এর জন্য এই সময়টাতে ছাদে গিয়ে কিংবা বারান্দাতে ভিটামিন ডি নিতে পারেন। ব্যায়াম অবশ্যই আপনার রুটিনের মধ্যে রাখতে ভুলবেন না।

ফ্যামিলি মেম্বারদের সাথে কোয়ালিটি টাইম কাটান :
সারাদিন কাজ ,ঘুম কিংবা অযথা সময়ক্ষেপন না করে ফ্যামিলি মেম্বারদের সাথে কোয়ালিটি সময় কাটান। কেন না লম্বা সময় বাসায় থাকা খুবই কষ্টকর প্রত্যেকের জন্য। দাবা, কেরাম অনেক ধরনের ইনডোর খেলা আছে যেটা সবার সাথে খেলতে পারেন। এতে বাচ্চারাও বোর ফিল করবে না। মুভি দেখুন, বাসায় পিকনিক করুন ফ্যামিলি মেম্বারদের নিয়ে। রান্নার কাজ ভাগ করে নিন- বাচ্চারা যেটাতে খুব মজা পায়। সবার ইন্টারেস্ট জানুন সেভাবে সময় কাটান।

বাচ্চাদের লেখাপড়ায় সাহায্য করা : 
কোয়ারেন্টাইন এর এই সময় স্কুলগুলো অনলাইন হয়ে গেছে। যাদের স্কুল গোয়িং বাচ্চা আছে তারা বুঝতে পারছে জ্বালাটা। প্রচুর হোমওয়ার্ক এবং পড়া দেয়া হচ্ছে। হোম টিউটর ছুটিতে। কাজেই আপনি যদি মনে করেন আপনার ছেলেমেয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব আপনি নিবেন যেহেতু আপনি বাসায় আছেন তবেই হয়েছে! আমি ভুক্তভোগী! প্রথমদিন আমার দুই সন্তানকে পড়াতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে আর কোনো কিছুই করতে পারি নাই। এখন যে ফর্মুলা চালু করেছি তা হচ্ছে :
প্রথমত সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছি পড়ার
হোম টিউটরকে ‘টিচিং ফ্রম হোম’ করেছি কিন্তু মনিটরিং করছি নিয়মিত।সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার : 
সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক, ইনস্ট্রাগ্রাম ইত্যাদিতে মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি হয়ে যাচ্ছে অনেকের। এই আন-প্রোডাকটিভ কাজে অতিরিক্ত সময় দেয়া কমিয়ে ফেলুন। কেননা পরে আফসোস হবে সময়টাকে কাজে লাগানো হয়নি বলে।

সর্বোপরি বাসার কাজ, যেগুলো অফিস-স্কুল-কলেজ চলাকালীন সময়ে করা সম্ভব হয় না সেগুলো খুঁজে সময়টাকে কাজে লাগানো। আমরা যারা সারাদিন অফিস স্কুল, কলেজ নিয়ে ব্যাস্ত থাকি। বাসার অনেক প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারি না সময়ের অভাবে- সেগুলো চিহ্নিত করে এই সুযোগে করে ফেলুন।  যেমন ঘর ডেকোরেশন চেঞ্জ, বাসার প্রয়োজনীয় কাগজ ফাইল-আপ ইত্যাদি।

বিশ্বে একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। আসুন আমাদের যার যার ধর্মের প্রতি অনুগত হই। এই কঠিন সময় থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য, সৃষ্টিকর্তার কাছে,  ইবাদত বন্দেগী করি বেশি বেশি করে। আর সাবধানতা অবলম্বনের সাথে সাথে নিজেদের মনোবল আরো শক্ত করি।

লেখক : ডেপুটি ম্যানেজার, এইচআর ডিবিএল গ্রুপ

 

সি/এসএস



 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 2 =