ওয়াশিংটন ডিসিতে তিন দিনের ৩৫তম ফোবানা সম্মেলন শুরু
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফেরা বাংলাদেশের এগিয়ে চলাকে ত্বরান্বিত করতে উত্তর আমেরিকার প্রবাসীদের ঐক্যের সংকল্পে ২৬ নভেম্বর শুক্রবার অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে শুরু হলো তিন দিনব্যাপী ফোবানার বাংলাদেশ সম্মেলন।
৩৪ বছর আগে যেখান থেকে এই ফোবানার অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল সেই ওয়াশিংটন মেট্র এলাকার বিশ্বখ্যাত ‘গ্যালোর্ড কনভেনশন সেন্টার’এ ৩৫ তম ফোবানার উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম মোজাম্মেল হক এমপি।
এ সময় ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, জর্জিয়া স্টেটের সিনেটর শেখ রহমান, আই গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিফ, ফোবানার নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন জাকারিয়া চৌধুরী, ফোবানার প্রতিষ্ঠাতাগণের অন্যতম বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুননবী, ফোবানার প্রধান নির্বাচন কমিশনার মাহবুব রেজা রহিম, ফোবানার সাবেক চেয়ারম্যান রেহান রেজা প্রমুখ বক্তব্য দেন।
ফিতা কেটে উদ্বোধনের পরই বাংলাদেশ, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে প্রবাসের তরুণ প্রজন্ম। এ সময় জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় গোটা মিলনায়তন।
ফোবানার হোস্ট কমিটির সদস্য সচিব শিব্বির আহমেদের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, দলমত নির্বিশেষে সকল প্রবাসী বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। দেশের সম্মান এবং ভাবমূর্তি উজ্জল করতে প্রবাসীদের ভূমিকা সব সময় গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে আমরা এবং বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনা স্মরণ করেন। আপনাদের প্রেরিত রেমিটেন্সেই গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের শক্ত অর্থনীতি।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, সমৃদ্ধিতে উপচে পড়ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনা মহামারিতে অনেক্য উন্নত দেশের অর্থনীতিতেও ভাটা পড়েছে, কিন্তু বাংলাদেশে তা ঘটেনি। অধিকন্তু জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থাই বাংলাদেশকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে অভিহিত করছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কেনিয়া সফরের সময় একসমাবেশে প্রদত্ত বক্তব্য উদ্ধৃত করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, এখন বিশের উন্নয়ন প্রত্যাশীরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলা বাংলাদেশকে অনুসরণ করছে। এই যে গৌরব-তা ভাগিদার আপনারাও।
মার্কিন রাজনীতিতে জোরালোভাবে সম্পৃক্ত হবার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ফোবানা তেমন একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত হবে বলে আশা করছি। সে প্রত্যাশা রেখেই আমি ফোবানার ৩৫তম সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করছি।
সম্মেলনের বিশেষ অতিথি স্টেট সিনেটর শেখ রহমান বলেন, সারা আমেরিকায় দেড় মিলিয়নেরও অধিক বাংলাদেশি রয়েছি। সকলেই বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছি। এই বিশাল জনগোষ্ঠি, সকলেই যদি মার্কিন রাজনীতিতে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি তাহলেই সকলের আমেরিকান স্বপ্ন পূরণ হওয়া সম্ভব। আর এভাবেই বহুজাতিক এ সমাজে বাংলাদেশের গৌরব আরো সমুজ্জ্বল করা সহজ হবে। আশা করছি, ফোবানা সে লক্ষ্যেই কাজ করছে।
বিশেষ অতিথি জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমরা এমন সময়ে ফোবানার এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছি যখন বাংলাদেশ তার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাঙালি জাতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছে। অর্থাৎ ফোবানার এই সম্মেলনও বিশেষ এক তাৎপর্যে আবির্ভূত হয়েছে। আশা করছি তিন দিনের প্রতিটি অনুষ্ঠানমালায় তার প্রতিধ্বণি ঘটবে। তিনি করোনা মহামারি থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে এই সম্মেলনের গুরুত্ব অপরিসীম বলেও উল্লেখ করেন।
সম্মানীত অতিথি রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম উপস্থিত সকলকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা জানিয়ে বাংলাদেশের অর্জনের প্রসঙ্গ আলোকপাত করে বলেন, করোনাকালে অনেক দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি থমকে দাঁড়ালেও বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে এবং চলছে। ইতিমধ্যেই স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এই অগ্রযাত্রায় উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা আরো বেশি কীভাবে অবদান রাখতে পারে, আরো বেশি সম্পৃক্ত হতে পারেন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে এই সম্মেলনে সে আশা করছি।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে চ্যান্সেলর আবুবকর হানিফ বলেছেন, ৩৪ বছরের ফোবানার গুরু দায়িত্ব হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে প্রবাস প্রজন্মকেও বাংলাদেশের উন্নয়ন-অভিযাত্রায় একিভূত করার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এবারের সম্মেলনে তেমন কর্মসূচির সমন্বয় ঘটেছে বলে আশা করছি।
সমগ্র অনুষ্ঠানের সমন্বয় করছেন হোস্ট কমিটির কনভেনর জি আই রাসেল, কোষাধ্যক্ষ ড. ফাইজুল ইসলাম, প্রেসিডেন্ট ইনারা ইসলাম প্রমুখ। ক্যালিফোর্নিয়া, আরিজোনা, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, মিশিগান, শিকাগো, পেনসলিভেনিয়া, নিউজার্সি, নিউইয়র্ক প্রভৃতি স্টেটের নেতৃবৃন্দ অংশ নিচ্ছেন এই সম্মেলনে।
উদ্বোধনী রজনীতে ফোবানার মিউজিক আইডলে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন সাবেক কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাংক। এ সময় ছ্ট্টোমনিদের পরিবেশনায় সকলে মুগ্ধ হন। উদ্বোধনী আমেজে অতিথি শিল্পীরাও বেশ কটি জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
সম্মেলনের মূল মিলনায়তনের বাইরে বিভিন্ন পণ্য-সামগ্রির স্টল ছাড়াও পরিবর্তিত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার তথ্য-কেন্দ্রও দেখা যায়। আই-গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত প্রচারণা এবং করোনা মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে ভেঙ্গে পড়া জনজীবনকে চাঙ্গা করার পরামর্শ কেন্দ্রও রয়েছে। বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তি আলোকে নিউইয়র্কের মুক্তধারা বহু গ্রন্থের সমাহার ঘটিয়েছে সম্মেলন কেন্দ্রে।
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান