কমলগঞ্জে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী ছনের ঘর
বিলুপ্তির পথে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ছনের ঘর। একসময় গ্রামের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় দেখা যেত ছনের ঘর। এসব ছনের ঘর ছিল স্বাস্থ্যসম্মত। দুই দশক আগেও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে গরিব ও মধ্যবিত্তদের ছনের চালা ঘর দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, আগে গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই সুন্দর ছাউনির পরিপাটি ছনের ঘর ছিল।
ঘরের দেয়াল, বেড়া তৈরিতেও অনেক সময় ছন ব্যবহৃত হতো। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে ছন সংগ্রহ করে শ্রমিক লাগিয়ে ঘরের ছাউনি দেওয়া হতো। এগুলো ছিল গ্রামীণ ঐতিহ্য। কেউ কেউ ছন কেটে শুকিয়ে ভার বেঁধে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতেন। গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠত ছনখলা। সেখানে ছনের অভয়ারণ্যের পাশাপাশি দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাসস্থলও ছিল। ছনের চালার মধ্যে চড়ুই পাখিও বাসা বাঁধত। স্থানীয়দের মতে, ছনের চালা ঘর ছিল খুবই স্বাস্থ্যসম্মত।
কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের উত্তর যোগিবিল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এখনও সেখানে ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটি ছনের ঘর। গ্রামের কালাম মিয়া, করিম মিয়া, জবা বেগম ও আখিরুন বেগমের চারটি ঘরই মাটির দেয়াল ও ছনের চালায় নির্মিত।
জবা বেগম জানান, অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। ছনের চালা বদলে টিন লাগানোর ক্ষমতা নেই। তাই এ ঘরেই দিন কাটাচ্ছেন। একই গ্রামের আখিরুন বেগম জানান, চার সন্তান নিয়ে তাঁর পরিবারে সদস্য ছয়জন। স্বামী দিনমজুর। তিনি যা আয় করেন তা দিয়ে সংসার চালানোই কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে ছনের ঘরেই তাদের জীবন কাটছে। অভাব না থাকলে হয়তো এতদিনে ছনের চালা ঘর পরিবর্তন করা হতো। তবে ছনের ঘরে মৌসুমের পরিবর্তনের সঙ্গে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়, যা আরামদায়ক।
গ্রামের কৃষক সিদ্দিকুর রহমান ও নিমাই মালাকার জানান, ছনের চালার ঘরগুলো আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যসম্মত। গরমের সময় দিনের বেলাও ঘরে ঘুমানো যেত অনায়াসে। এখন গ্রামের বাড়িতে ছনের ঘর দেখাই যায় না।