কমলগঞ্জে মন্ডপে মন্ডপে চলছে পূজার প্রস্তুতি
রং-তুলির খেলায় প্রতিমাকে সাজাতে ব্যস্ত মন্ডপগুলোর মৃৎশিল্পীরা
দরজায় কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। আগামী ২০অক্টোবর (শুক্রবার) মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় উৎসব। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় দশভূজা দেবী দূর্গাকে বরণ করতে প্রস্তুত হচ্ছে পূজামন্ডপগুলো। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসবকে ঘিরে কমলগঞ্জের সর্বত্র চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি ও মন্ডপে মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির শেষ মুহূর্তের কাজ। ইতিমধ্যে উপজেলার অধিকাংশ পূজামন্ডপে শেষ হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। এখন রঙ তুলির আঁচড়ে সৌন্দর্য বর্ধণের কাজ চলছে। মাটির কাজ শেষ করে রং-তুলির খেলায় প্রতিমাকে সজ্জিত করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন মন্ডপগুলোর মৃৎশিল্পীরা। মৃৎশিল্পীদের রাত দিনের কাজ আর পূজা কমিটির ব্যস্ততা অত্যাসন্ন দুর্গোৎসবের জানান দিচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপ ঘুরে দেখা যায়, মাটির কাজ শেষ করে প্রতিটি প্রতিমাকে রঙ-তুলির নিপুণ আঁচড়ে রাঙাতে ব্যস্ত শিল্পীরা। চলছে সাজ-সজ্জার কাজও। দেবী দূর্গার সাথে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী আর সরস্বতী দেবীকেও। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই মৃৎশিল্পীদের। তবে এবারের পূজার প্রতিমায় ব্যতিক্রম আনার চেষ্টা করেছেন উপজেলার বেশ কয়েকটি পূজামন্ডপ। দব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির কারণে বিগত বছরের তুলনায় এ বছর দূর্গোৎসবে দ্বিগুন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে আয়োজকদের। এরপরও থেমে নেই কোন আয়োজন। রকমারী আলোক সজ্জার বর্ণালী বাহারে সাজানো হবে মন্ডপ ও তার আশপাশ। হাতে আর কয়েকদিন বাকি। তাই রাত-দিন চলছে সাজ-সজ্জার কাজ।
কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের কুমারটেকি পালপাড়ার মৃৎশিল্পী অজিত রুদ্র পাল জানান, এ বছর তিনি ৯টি দূর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। সবকটি প্রতিমার মাটির কাজ প্রায় শেষ। এখন রং তুলির কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ২টি প্রতিমার রঙের কাজ শেষ করেছেন। আগামী ৪-৫ দিনের মধ্যেই বাকি প্রতিমাগুলোর রঙের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে তিনি জানান।
মনোরঞ্জন পাল নামে আরেক মৃৎশিল্পী বলেন, বেশিরভাগ প্রতিমার মাটির কাজ শেষ করেছি। এখন রঙের কাজ চলছে। সব মিলিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ করতে পারব বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কমলগঞ্জ উপজেলায় মোট পূজা মন্ডপের সংখ্যা ১৬৩ টি। তারমধ্যে কমলগঞ্জ পৌরসভায় ৮টি, ১নং রহিমপুর ইউনিয়নে ২০ টি, ২ নং পতনউষার ইউনিয়নে ১৪টি, ৩নং মুন্সীবাজার ইউনিয়নে ১৬টি, ৪ নং শমসেরনগর ইউনিয়নে ১৪টি, ৫নং কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নে ৮টি, ৬নং আলীনগর ইউনিয়নে ২২টি, ৭নং আদমপুর ইউনিয়নে ১৩টি, ৮নং মাধবপুর ইউনিয়নে ২১টি ও ৯নং ইসলামপুর ইউনিয়নে ১০টি পূজামন্ডপ রয়েছে। এবং ১৭টি ব্যাক্তিগত পূজামন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
কমলগঞ্জ কেন্দ্রীয় শ্রীশ্রী দূর্গাবাড়ির দূর্গাপূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি গোপেশ দত্ত ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সুমন দে জানান, মন্ডপের প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ এখন রঙের কাজ চলছে। সার্থিকভাবে পূজা উদযাপনের জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে দব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির কারণে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। এবছর আমরা ক্ষুদ্রনৃগোষ্টিদের অংশগ্রহণে কালচারাল প্রোগ্রাম ও সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ধামাইল গানে পরিবেশনা সংযুক্ত করেছি।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনর্চাজ সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, কমলগঞ্জের ১৬৩ টি পূজামন্ডপে শান্তিপূর্ণ ভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সবকটি পূজামন্ডপ এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা জোড়দার করা হয়েছে। পূজা মন্ডপগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশের ১০টি মোবাইলটিম ও আনসার বাহিনী পূজা চলাকালিন সময়ে সার্বক্ষণিক কাজ করবে। তাছাড়া বাড়তি নিরাপত্তায় প্রতিটি মন্ডপে সিসি ক্যামেরা বসানোর জন্য মন্ডপ কমিটিগুলোকে বলা হয়েছে।
কমলগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ বলেন, শারদীয় দূর্গাপূজা আনন্দঘন ও শানিন্তপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে আমরা সর্বপ্রকার সর্তকতা অবলম্বন করছি। তাছাড়া ২০২১ সালে কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কমলগঞ্জে ঘটা অপ্রীতিকর ঘটনা ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়ত্তি নিরাপত্তা জোড়দার করা হচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি অধিকতর নিরাপত্তা জোড়দারের জন্য প্রত্যেক মন্ডপে মন্ডপ কমিটির নিজ উদ্যোগে অধিক সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।