বিশ্ব

করোনাভাইরাসে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে না কেন ?

করোনাভাইরাসে শিশুরা কেন আক্রান্ত হচ্ছে না?
ছবি : গেটি ইমেজেস

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে এক হাজার ৮৬৮ জন মানুষ মারা গেছেন এবং ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। করোনাভাইরাসে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে না কেন ? তাদের মধ্যে বেশিরভাগ চীনে আক্রান্ত হলেও আরও ৩০টি দেশে এই ভাইরাস সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। তবে আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা খুবই কম।

এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সংক্রান্ত সর্বশেষ গবেষণা যেটি আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে সেখানে প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল উহানের জিনইনতান হাসপাতালের রোগীদের বিষয়ে বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে।

এতে দেখা গেছে যে, ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে অর্ধেকেরই বয়স ৪০ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে। মাত্র ১০ শতাংশ রোগী ৩৯ বছরের কম বয়সী।

গবেষকরা বলছেন, ‘শিশুদের মধ্যে সংক্রমণের ঘটনা বিরল।’

করোনাভাইরাসে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে না কেন ?

এ নিয়ে অনেক তত্ত্ব থাকলেও শিশুরা কেন আক্রান্ত হচ্ছে না এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট জবাব নেই।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের ভাইরাস সম্পর্কিত বিজ্ঞান বা ভাইরোলজির অধ্যাপক ইয়ান জোনস বলেন, ‘কারণ আসলে পুরোপুরি স্পষ্ট নয়, হয় শিশুরা সংক্রমণ এড়িয়ে যাচ্ছে, নয়তো তারা মারাত্মক সংক্রমণের শিকার হচ্ছে না। এর অর্থ হচ্ছে শিশুরা রোগটিতে খুব মৃদুভাবে আক্রান্ত হচ্ছে, যার কারণে তাদের মধ্যে উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। আর এ কারণেই তারা চিকিৎসকের কাছে যায় না এবং তাদের হাসপাতালে ভর্তি করারও দরকার হয় না।’

এ বিষয়ে সহমত জানিয়েছেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ক্লিনিক্যাল প্রভাষক নাথালি ম্যাকডারমট। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছরের বেশি বয়সী এবং কিশোরদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাইরাস মোকাবিলায় বিশেষভাবে কাজ করে। তারা হয়তো আক্রান্ত কিন্তু তাদের সংক্রমণটা বেশ মৃদু বা তাদের মধ্যে সংক্রমণের কোনো উপসর্গ থাকে না।’

শিশুদের মধ্যে সংক্রমণের এই নিম্নহার এর আগেও দেখা গেছে। সম্প্রতি ২০০৩ সালে চীনে সার্স ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময় ৮০০ মানুষ মারা গেলেও তখনও শিশুদের সংক্রমণের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কম ছিল।

২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোলের (সিডিসি) বিশেষজ্ঞরা ১৩৫ জন শিশু আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা খুঁজে পান। কিন্তু তখন শিশু ও কিশোরদের মধ্যে একজনও মারা যায়নি বলে জানান তারা।

নববর্ষের ছুটি শিশুদের রক্ষা করেছে?

নাথালি ম্যাকডারমট আরও মনে করেন যে, প্রাপ্তবয়স্করা যেভাবে ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছে শিশুরা হয়তো সেভাবে ততটা সংস্পর্শে আসেনি। কারণ প্রাদুর্ভাব শুরু হয় চীনের নতুন বছরের ছুটির সময় যখন স্কুলগুলো বন্ধ ছিল।

চীনের প্রায় সবগুলো প্রদেশেই স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং অনেক স্কুল পুরো ফেব্রুয়ারি মাস বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া কোনো বাড়িতে যদি প্রাপ্তবয়স্ক কেউ আক্রান্ত হন তাহলে তাদের কাছ থেকে শিশুদের দূরে রাখা হচ্ছে। এটিও একটি কারণ হতে পারে।

শিশুদের তুলনায় কি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক হয়?

যদিও কম সংখ্যক শিশু আক্রান্ত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন না যে, তারা আসলে আক্রান্ত হচ্ছে না। এ বিষয়ে আরও সম্ভাব্য বিশ্লেষণটি হলো, এই প্রাদুর্ভাব হয়তো সেই রোগগুলোর মধ্যে একটি যা শিশুদের তুলনায় প্রাপ্তবয়স্কদের মারাত্মকভাবে সংক্রমিত করে, যেমন-জলবসন্ত।

এ বিষয়ে কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু ফ্রিডম্যান বলেন, ‘শিশুদের হয়তো কোনোভাবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে- এমন ধারণার তুলনায় এটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি যে, কর্তৃপক্ষ হয়তো যাদের উপসর্গ নেই বা মৃদু উপসর্গ রয়েছে এমন কাউকে পরীক্ষাই করছে না।’

হংকংয়ে সার্স প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি উল্লেখ করে এ বিষয়ে একমত হওয়ার কথা জানান অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের স্ট্যাটিস্টিকাল এপিডেমিওলজির বিশেষজ্ঞ ক্রিসেল ডনেলি। তিনি বলেন, ‘আমার সহকর্মীরা যে বিষয়ে একমত হয়েছি তা হলো কম বয়সী শিশুদের মধ্যে এই রোগের প্রভাব তেমন আগ্রাসী হয় না- যার কারণে তারা মারাত্মকভাবে সংক্রমিত হচ্ছে না।’

আগে থেকেই অন্য রোগে আক্রান্ত

যেসব প্রাপ্তবয়স্করা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের অধিকাংশ আগে থেকেই অন্য রোগে আক্রান্ত। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই দুর্বল- যেমন ডায়াবেটিস বা হৃদরোগে আক্রান্তরা এই প্রাদুর্ভাবের সময় বেশি ঝুঁকিতে থাকে।

অধ্যাপক ইয়ান জোনস বলেন, ‘নিউমোনিয়া (করোনাভাইরাসের উপসর্গগুলোর মধ্যে একটি) তাদেরকেই বেশি আক্রান্ত করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল কারণ তাদের স্বাস্থ্য এমনিতেই খারাপ কিংবা তারা হয়তো তাদের জীবনের শেষ দিনগুলো পার করছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং শ্বাসযন্ত্রের অন্য রোগগুলোর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে।’

তিনি আরও বলেন, ‘উহানের জিনইনতান হাসপাতালে যেসব রোগীদের ওপর এ গবেষণা চালানো হয় তাদের অর্ধেকই আগে থেকেই নিরাময়যোগ্য নয় এমন অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত ছিল।’

কিন্তু শিশুরা কি ভাইরাস ছড়ানোর জন্য পরিচিত নয়?

ইয়ান জোনস বলেন, শিশুরা সাধারণত নিজেরাই বেশি পরিমাণে ভাইরাসে আক্রান্ত হয় এবং তা ছড়িয়েও দিয়ে থাকে- আর তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রধান সংক্রামক বা “সুপার স্প্রেডার” হিসেবে পরিচিত। তারা খুব সহজেই শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ ছড়ায় এবং নার্সারির বাচ্চাদের সাথে যারা থাকেন তারা এটি ভালভাবেই জানেন। তাই নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃতদের তালিকায় বড় সংখ্যায় শিশুদের থাকার কথা ছিল- কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। এর কারণ হতে পারে যে, ভাইরাসে বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ক্ষেত্রে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে, অথবা রোগটি হয়তো প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের প্রতি তেমন আগ্রাসী হয় না, আর তাই শিশুরা চিকিৎসা সেবা নেয় না এবং পরীক্ষাও নথিবদ্ধ করা হয় না। আবার এটাও হতে পারে যে, সচেতন বাবা-মা এবং স্কুল বন্ধ থাকার কারণে শিশুরা হয়তো সংক্রমণের সংস্পর্শে আসছে না। এক্ষেত্রে চীনে স্কুল খোলার পর যখন শিশুরা স্কুলে যাবে তখন এ বিষয়ে জানা যাবে।’

তবে চলতি প্রাদুর্ভাব নিয়ে আরও বেশি গবেষণার পর হয়তো এ বিষয়ে একটি স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে বলেও মন্তব্য করেন ইয়ান জোনস।

আরও পড়ুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ                                 

কানাডার সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight − one =