‘করোনাভাইরাস ট্রাম্পের ষড়যন্ত্র’! ঘটনাটি কি আসলেই সত্যি? চীন থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পরা মরণভাইরাস করোনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জড়িত বলে প্রচার করছে একটি রুশ সংবাদমাধ্যম। করোনা অর্থ মুকুট। সুন্দরী প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মুকুট পরিয়ে দিতেন ট্রাম্প। এই সূত্র মিলিয়ে এমনটি দাবি করছে রুশ সংবাদমাধ্যম।
রাশিয়ার প্রধান একটি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক চ্যানেল ওয়ান, ভ্রেমিয়া বা ‘সময়’ নামে সন্ধ্যায় তাদের মূল সংবাদ অনুষ্ঠানের মধ্যে করোনাভাইরাসের সঙ্গে ট্রাম্প জড়িয়ে এ খবর প্রচার করছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ভ্রেমিয়ায় সম্প্রতি সবচেয়ে অযৌক্তিক যে তত্ত্বটি প্রচার করা হয়েছে তা হলো, করোনাভাইরাসের ‘করোনা’ শব্দটি নিয়ে।
ল্যাটিন এবং রাশিয়ান-দুই ভাষাতেই করোনা শব্দের অর্থ মুকুট, তারা তাদের প্রতিবেদনে বলছে, এর থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত।
আর এর কারণ হচ্ছে, তিনি সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সভাপতিত্ব করেছেন এবং বিজয়ীদের হাতে মুকুট তুলে দিয়েছেন।
মূলত বিজ্ঞানীরা ভাইরাসের এমন নামকরণ করেছেন এগুলোর মুকুটের মতো আকারের কারণে। কিন্তু ভ্রেমিয়ার উপস্থাপক কিরিল ক্লেইময়োনভ ট্রাম্পের জড়িত থাকার সম্ভাবনা এখনই বাতিল করে দেয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
তিনি বলেন, আপনি হয়তো বলবেন নির্বোধের মতো শোনাচ্ছে। তবে আমি আপনার সঙ্গে একমতই হতাম যদি এটা আমাদের প্রতিবেদকের প্রতিবেদনে না থাকত।
প্রতিবেদনে যেসব ভিডিও দেখানো হয় তাতে এটা স্বীকার করা হয় যে, মুকুটের এই তত্ত্ব ‘বানোয়াট’।
কিন্তু একপাক্ষিকভাবে এমন একজন বিশেষজ্ঞের মতামত নেয়া হয় যিনি বলেন, চীনের করোনাভাইরাস কৃত্রিমভাবে বানানো হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কিংবা আমেরিকার ওষুধ কোম্পানিগুলো এর জন্য দায়ী।
প্রতিবেদনে ক্রেমলিনের মিডিয়া এবং কর্মকর্তাদের ছড়ানো কিছু পুরনো ও মিথ্যা তথ্য আবারো তুলে ধরা হয়। যাতে বলা হয়, জর্জিয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরীক্ষাগার রয়েছে যেখানে মানুষের উপর জৈবিক অস্ত্রের পরীক্ষা করা হয়।
এরপর চ্যানেল ওয়ানের প্রতিবেদক অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব থেকে কিছু বক্তব্য তুলে ধরেন যেখানে বলা হয়, নতুন করোনাভাইরাস শুধু এশিয়ার মানুষদের আক্রান্ত করে এবং এটা এক ধরণের ‘জাতিগত বায়ো ওয়েপন বা জৈবিক মারণাস্ত্র।’
তিনি স্বীকার করেন যে, ওই তথ্য ভুল প্রমাণিত করার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু পরামর্শ হিসেবে তিনি বলেন, ‘যেসব বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে যথেষ্ট সতর্ক থাকেন, তারাও এই সন্দেহকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না।’
ভ্রেমিয়া পোকাসহেট (সময় বলে দেবে) নামে চ্যানেল ওয়ানের প্রধান রাজনৈতিক আলোচনা অনুষ্ঠানে করোনাভাইরাস নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচুর পরিমাণে থাকে।
সংবাদ অনুষ্ঠানের তুলনায় এখনে আরো বেশি খোলাখুলি আলোচনা হয়। তবে মূলভাব থাকে এটাই যে, বিভিন্ন ধরণের পশ্চিমা উপাদান – যেমন ওষুধ কোম্পানি, যুক্তরাষ্ট্র বা এর সংস্থাগুলো কোন না কোনভাবে ভাইরাস তৈরিতে এবং তা ছড়িয়ে পড়তে সহায়তা করেছে, বা এটা নিয়ে অন্তত আতঙ্ক ছড়াতে সহায়তা করেছে।
এর উদ্দেশ্য হিসেবে তাদের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, বড় বড় ফার্মা বা ওষুধ কোম্পানিগুলো করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরি করে বড় ধরণের মুনাফা হাতিয়ে নিতে চায়। আর যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, চীনের মতো ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগীকে দুর্বল করতে এর অর্থনীতিতে আঘাত হানতে চাইছে তারা।
সূত্র: বিবিসি বাংলা