করোনা চ্যালেঞ্জে বিশ্ব অর্থনীতি ।। করোনায় স্থবির পুরো ইতালি, গৃহবন্দি সাড়ে ৬ কোটি মানুষ ।।করোনায় ইতালিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৩১ ।। ৩ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জনসমাগমের স্থানসমূহ বন্ধ
করোনা চ্যালেঞ্জে বিশ্ব অর্থনীতি ।। করোনা ভাইরাসের কারণে বড় চ্যালেঞ্জে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। আশঙ্কা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি করতে চলেছে করোনা। এদিকে বাংলাদেশ এই ঝুঁকির বাইরে নয়। বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় প্রতিটি পর্যায়েই যুক্ত রয়েছে চীন। এদেশেও করোনার প্রভাব ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমদানি-রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে। বিভিন্ন পণ্যের কাঁচামাল আমদানি সঙ্কটে দেশের ব্যবসায়ীরা বড় অঙ্কের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে চীনা অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় মেগা প্রকল্পগুলোর অগ্রগতিতে বাধার মুখে পড়ার শঙ্কায়। বাড়তে পারে প্রকল্প ব্যয়ও। প্রভাব পড়ছে দেশের শেয়ারবাজারেও। গতকাল পরিকল্পনা মন্ত্রী আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন চলমান বিশ্ব পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলেছে, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি মন্দার মুখে পড়তে পারে। অবস্থা খারাপের দিকে গেলে ৩০২ কোটি ১০ লাখ ডলার পর্যন্ত অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার কারণে যে সংকট চলছে তাতে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বৈশ্বিক জিডিপি। কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, উৎপাদন হ্রাস, সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য কমে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন। চীনের কারখানা বন্ধের প্রভাব পড়ছে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর অর্থনীতিতেও। করোনার প্রভাবে বিশ্বের বড় কোম্পানিগুলোর ব্যবসা এখন নিম্নমুখী। কারণ চীন থেকে সারা বিশ্বে বেশিরভাগ কাঁচামাল সরবরাহ হয়।
চলতি অর্থবছরের শুরুতেই হোঁচট খায় দেশের রপ্তানি আয়। সেই হোঁচটের নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে রপ্তানিখাতে। চলতি অর্থবছরের আট মাসে রপ্তানিখাতে যে আয় হয়েছে, তা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২.৭২ শতাংশ কম। অর্জিত এ আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪.৭৯ শতাংশ কম। অর্থবছরের বাকি চার মাসেও রপ্তানি আয় ইতিবাচক ধারায় ফিরবে কি-না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
এদিকে করোনা প্রাদুর্ভাবের প্রভাব পড়েছে দেশের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে। এতে ২০১৯ সালের জানুয়ারির তুলনায় চলতি বছর জানুয়ারিতে প্রায় ২ লাখ টন ও ২০১৮ সালের একই সময়ের তুলনায় ২ লাখ ১০ হাজার টন পণ্য আমদানি কমে গেছে।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, নগদ প্রণোদনা ও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের পরও রপ্তানি আয় কমছে। তৈরি পোশাক, চামড়া, প্লাস্টিকসহ বড় খাতে আয় কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে সার্বিক রপ্তানিখাতে। এছাড়া বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা কম থাকায় অর্ডারও কমছে। সঙ্গে পণ্যের মূল্যও কমে গেছে। পাশাপাশি দেশের অবকাঠামোগত সমস্যা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন না করা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন কারণে রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক ধারা রয়েছে। আগামীতে এ অবস্থা হবে আরো ভয়াবহ। কারণ এরই মধ্যে বিশ্ববাজারকে কাঁপিয়ে দিয়েছে চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস। চীন ছাড়িয়ে এশিয়া-ইউরোপ-আমেরিকা- সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া এ মহামারি যদি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করে, তাহলে রপ্তানি বাণিজ্য বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।
পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশের ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলোয় সর্বোচ্চ ১ থেকে ২ মাসের কাঁচামাল মজুদ থাকে। বড় কারখানাগুলোয় থাকে ৩ মাসের। কিন্তু করোনার কারণে আমদানি বন্ধ থাকলেও এতদিন ধরে উৎপাদন চলায় অনেক কারখানার মজুদ ফুরিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের পুরো রপ্তানির ৮০% তৈরি পোশাক। তৈরি পোশাকের প্রায় ৬০শতাংশই কোন না কোনভাবে চীনের ওপর নির্ভরশীল। আর এসব পণ্য উৎপাদন করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়।
বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এ অর্থবছরের শুরু থেকে বলে আসছি তৈরি পোশাকের ব্যবসা কম। বিশ্ববাজারে পোশাকের ব্যবসা কমছে। শুধু তাই নয়, আগের তুলনায় আমাদের ব্যবসাও ৫ শতাংশ কমে গেছে। সব মিলিয়ে পোশাক খাত বড় চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্ষতি হতে পারে প্রায় ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। যার পরিমাণ বৃটেনের মোট জিডিপির সমান। এর ফলে মন্দার ঝুঁকিতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপান ও চীন। ব্লুমবার্গ ইকোনোমির গবেষণা বলছে, করোনা ভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বৈশ্বিক আমদানি-রপ্তানি। আসন্ন এক সংকটের মুখের বিশ্ব অর্থনীতি। এটি আরো নির্ভর করছে করোনা নিয়ে সরকারগুলোর পদক্ষেপের ওপর। এ ভাইরাসের কারণে চীনে গাড়ি বিক্রি কমে গেছে ৮০ শতাংশেরও বেশি। রাস্তায় গাড়ি চলাচল নেমে এসেছে মাত্র ১৫ শতাংশে। ব্যবসার গতি সর্বনিম্ন অবস্থানে আছে। ব্লুমবার্গ ইকোনোমি বলছে, চীনের জিডিপি এ বছর ১.২ শতাংশ কমে আসবে। যদি মার্চের মধ্যে চীন এখান থেকে উঠে আসতে না পারে তাহলে অবস্থা আরো ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
তবে ব্লুমবার্গ বলছে, এখনো বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করা হয়নি করোনা ভাইরাসকে। তবে সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে সার্বিক পরিস্থিতি। বিশ্বের দেশগুলোর অবস্থা তখন চীনের মত ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদি তাই ঘটে তবে হিসেব বলছে, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ২০২০ সালে শূন্যে নেমে আসবে। প্রবল মন্দা দেখা দেবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও জাপানেও।
একইরকম পূর্বাভাস দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফও। এর আগে এ বছর বিশ্বে প্রবৃদ্ধি আশা করা হচ্ছিল ৩.৩ শতাংশ। তবে করোনার কারণে এটি কমে ০.১ শতাংশ হতে পারে বলছে আইএমএফ। বিমান পরিবহণ সমিতি আইএটিএর হিসেবে, এবার বিমান পরিচালনা সংস্থাগুলো প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যাত্রী কমে যেতে পারে গত বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশেরও বেশি। এরইমধ্যে প্রতিদিন বাতিল হচ্ছে ১০ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট।
এর আগে কোনো স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিই বিশ্বব্যাপী এমন অর্থনৈতিক সংকটের আশঙ্কা সৃষ্টি করেনি। চীন খারাপ থাকলে বিশ্বের কোনো দেশই স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারবে না। তবে করোনা এখন বিশ্বব্যাপী ছড়াচ্ছে। ভুগতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, জার্মানি ও ইতালির অর্থনীতি। ভারতের অর্থনীতিও ভারসাম্য হারাতে বসেছে। একই অবস্থা ইন্দোনেশিয়া ও জাপানেও। অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের পরিসংখ্যান বলছে, করোনা ভাইরাসের কারণে কমপক্ষে ১ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। এরইমধ্যে এর প্রভাব সপষ্ট হচ্ছে।
করোনা থেকে বাঁচতে আগাম যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে তাতেই থমকে যাচ্ছে অর্থনীতি। এতে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, পর্যটন, আমদানি-রপ্তানি, যাতায়াত। দ্রুত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক অর্থনৈতিক খাত। অনেকগুলো ধীরে ধীরে চলছে। সরবরাহ চেইন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। প্রভাব পড়ছে বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারেও। চলছে অব্যাহত সূচকের দরপতন।
করোনায় স্থবির পুরো ইতালি, গৃহবন্দি সাড়ে ৬ কোটি মানুষ
করোনায় ইতালিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৩১
৩ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জনসমাগমের স্থানসমূহ বন্ধ
করোনা ভাইরাসের ছোবলে পুরো ইতালি স্থবির হয়ে পড়েছে। শহরগুলো পরিণত হয়েছে ভুতুড়ে নগরীতে। পুরো দেশ যেন এক আতংকের নগরী। সোমবার রাতে আকষ্মিকভাবে পুরো দেশ রেডজোনের আওতাভুক্ত ঘোষণা করায় গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে দেশটির সাড়ে ৬ কোটিও বেশি মানুষ। আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মিউজিয়াম, থিয়েটার, সিনেমা, স্টেডিয়াম, কনসার্টসহ জনসমাগমের স্থানসমূহ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রোমের বাংলাদেশ দূতাবাসও মঙ্গলবার থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক রুটের ২টি বাদে অন্যান্য সব ফ্লাইট এবং ইউরোপের জনপ্রিয় অভ্যন্তরীণ বিমান- রাইন এয়ার এর সব ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে সরকারি ঘোষণার পরপরই সকাল থেকে সুপার মার্কেটগুলোতে দেখা গেছে মানুষের লম্বা লাইন ও প্রচন্ড ভিড়। ট্যুরিস্ট এলাকাগুলো একেবারে ফাঁকা। হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ সকল ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশী বেকার হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রেস্টুরেন্ট, আলিমেন্টারি খোলা রাখা যাবে তবে প্রায় সকলেই বন্ধ করে দিচ্ছে।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ইতালিতে সোমবার রেকর্ড সংখক মানুষ ১৭৯৭ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৯৭ জন। যা পুরো বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। রবিবারও ঠিক একদিনেই সর্বোচ্চ সংখক নতুনকরে আক্রান্ত হয়েছে- ১৪৫৭ জন এবং মারা গেছে ১৩৬ জন। আর এ পর্যন্ত সবমিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৯১৭২ জন এবং মারা গেছে ৪৬৩ জন। এর আগে শনিবার ইতালি সরকার রেডজোনের আওতাভুক্ত উত্তরাঞ্চলের মিলানসহ ১৪টি শহরের এক কোটি ৬০ লাখ মানুষকে অবরুদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। এরপরও নতুন রোগী আক্রান্তের সংখ্যা রাড়তে থাকায় সোমবার রাত ১০টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা) আকষ্মিকভাবে প্রধানমন্ত্রী জোসেপ্পে কন্তমে এক সংবাদ সম্মেলনে পুরো ইতালিকে রেডজোনের আওতাভুক্ত ঘোষণা করে। এরপরই বিভিন্ন শহরে সরকারি বাহিনি মাইকিং করে মানুষকে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া ঘোষণা দিতে দেখা গেছে।
এদিকে, রাতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরপরই আতংক ছড়িয়ে পড়ে পুরো ইতালিতে। বিশেষকরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে সর্বত্র। সুপারশপগুলোতে মানুষের লম্বা লাইন ও প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে। বাজার যেকোনো সময় বন্ধ করে দেয়া হবে এমন অশংকায় যে যেভাবে পারছে ক্রয় করছে। সুপারশপে বাজার নিতে আসা প্রবাসী বাংলাদেশী উম্মে সালমা এ প্রতিবেদককে জানান, দীর্ঘ ১২ বছরের প্রবাস জীবনে এমন অস্থির অবস্থা দেখিনি। যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি মনে হচ্ছে।
আরেক প্রবাসী ইমরান মাতবর বলেন, ঘর থেকে বের হওয়াও এখন জীবনের জন্য বড় ঝুঁকি। উদ্বেগ ও আতংক বিরাজ করছে সর্বত্র। অন্যদিকে দেশের আত্মীয়-স্বজনরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
শহরগুলোর সবখানেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। অধিকাংশ অফিস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আদালতের কার্যক্রম ৩১ মে পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পরিস্থিতির উন্নতির জন্য আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত সাময়িকভাবে সকলপর্যায়ের কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। যাতে নতুন করে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি না পায়।
বর্তমানে ইতালি থেকে এ্যামিরেটস ও কাতার এয়ার ওয়েজের একটি করে ফ্লাইট চালু রয়েছে। অন্য সব ফ্লাইট ইতোমধ্যে বাতিল করেছে। নতুনকরে মঙ্গলবার ইউরোপের অভ্যন্তরীন বিমান রাইন এয়ার এর সব ফ্লাইট ইতালি থেকে যাত্রি পরিবহন এবং প্রবেশ বন্ধ ঘোষণা দিয়েছে। রোমের বাংলাদেশ দূতাবাসও মঙ্গলবার থেকে সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেছে, পরবর্তী নির্দেশ দেয়া না পর্যন্ত সব কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।
প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ইতালিতে আরও ১৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দেশটির নাগরিক সুরক্ষা সংস্থার বরাত দিয়ে মঙ্গলবার সিএনএন গত ২৪ ঘণ্টার এতথ্য জানিয়েছে। এরআগে সোমবার ৯৭ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবারের নতুন হিসেবে করোনায় ইতালিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬৩১ জনে। একই সঙ্গে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ১৪৯ জনে।
এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার ৯ জন; মৃত্যু হয়েছে ৪০১৮ জনের।
এদিকে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ইতালি জরুরি অবস্থা আরও বাড়িয়েছে। পুরো দেশে জনসাগাম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কার্যত ঘরে অবরুদ্ধ সে দেশের মানুষ এবং কাউকে ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ফুটবল ম্যাচসহ সব ধরনের খেলাধুলার অনুষ্ঠান সারাদেশে বাতিল করা হয়েছে। স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শুধুমাত্র বিশেষ দাপ্তরিক কাজের লোক ছাড়া কারো বের হওয়ার অনুমতি নেই।
গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব প্রথম ধরা পড়ে। পরে চীনের অন্যান্য প্রদেশ এবং বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে। ইতালি থেকে পুরো ইউরোপ এবং আফ্রিকা ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এ ভাইরাস। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইরানে এ ভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভারতে আগেই পৌঁছেছে করোনাভাইরাস। এর মধ্যে ভারতে এ ভাইরাসের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি ধরা পড়েছে। বাংলাদেশে সংক্রমণের ধরা পড়ে রোববার।
মার্চের মাঝামাঝি উহানে নতুন রোগীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে বলে আশা করছেন চীনা চিকিৎসকরা। ফলে শিগগির ওই অঞ্চলের অবরুদ্ধ অবস্থার অবসান ঘটবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
এক মাসের বেশি সময় ধরে কার্যত অবরুদ্ধ ছিল হুবেইর সাড়ে ৫ কোটি মানুষ। কিন্তু চীনের বাইরে প্রতিদিনই নতুন নতুন দেশে এ ভাইরাসের সংক্রমণের তথ্য আসছে। দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারতে বাড়ছে নতুন রোগীর সংখ্যা।
সার্স ও মার্স পরিবারের সদস্য করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ফ্লুর মতো উপসর্গ নিয়ে যে রোগ হচ্ছে তাকে বলা হচ্ছে কভিড-১৯। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এখন পর্যন্ত এ রোগে মৃত্যুহার ৩.৪ শতাংশ, যেখানে মৌসুমি ফ্লুতে মৃত্যুহার থাকে ১ শতাংশের নিচে। তবে করোনায় ৯ বছরের নিচের কেউ মারা যায়নি। প্রবীণদের মধ্যেই মৃত্যুহার বেশি।
করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। উপসর্গগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মতো। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।
করোনাভাইরাসের কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনও তৈরি হয়নি। ফলে এমন কোনো চিকিৎসা এখনও মানুষের জানা নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। আপাতত একমাত্র উপায় হলো আক্রান্তদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, চীনে যে গতিতে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, চীনের বাইরে এই সংক্রমণ ১৭ গুণ বেশি। পরিস্থিতির ভয়াবহতা সম্পর্কে সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রস অ্যাডানম গেব্রেয়েসুস বলেছেন, এ ভাইরাসকে যে কোনো উপায়ে ঠেকাতে হবে। এটা আত্মসমর্পণের সময় নয়। কোনো অজুহাতের সময় নয়। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই কঠিন পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
সর্বশেষ সংবাদ
কানাডার সংবাদ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন