লেখালেখি

করোনা যেতে যেতে অমর লোভের অমরত্ব ফিরিয়ে নাও।

করোনা যেতে যেতে অমর লোভের অমরত্ব ফিরিয়ে নাও।

 

করোনা ভয় দিয়েছে, কিন্তু ভাবতে শিখিয়েছে কি? করোনা মানবজাতিকে এক শয্যায় এনে শুইয়ে দিয়েছে যাকে চিহ্নিত করা হয়,পায়ের গোড়ালিতে বাঁধা নাম্বার দিয়ে।  রুদ্রাক্ষমালা, তসবি কিংবা ক্রস দিয়ে নয়। জীবিত কি মৃত সব একার দলে, যেন রবির কথা “একলা চল রে”। ঘরে আমরা একা-বাইরে বিজ্ঞান লড়ছে একা। পরাক্রমী মানবজাতির প্রাণ এখন ভয়ে স্তব্ধ কিন্তু ভাবনায় কতটা বিশুদ্ধ? যে সংক্রমণ আমাদের মজ্জায়, যে দুঃসহ ঘৃণা আমাদের ভাবনায়, করোনা কি পেরেছে সেখানে হানা দিতে? করোনা পুর্ব পৃথিবীতে যেমন সি,এ,এ- এন,আর,সি ছিলো তেমনি চলতি দুর্যোগ মাঝে হিন্দুদের ত্রান দেয়া হবে না বলে অমানবিক বক্তব্যের কথা ভেবে কেউকি দুঃখ প্রকাশ করেছে? সিলেট ওসমানী নগরের মসজিদের ভিডিও যা ভাইরাল হয়ে ঘুরছে।

হাতের তালুতে মৃত্যু অথচ মগজে বর্বর পশু ঠিকিই দেয় হাঁক আমিই শ্রেষ্ঠ, আমিই করছি কেবল আমরাই করছি। সংগোপনে প্রচার বিহীন কোন কাজ দেখে, আপ্লুত হয়ে যদি কেউ পাঁচ কথার দেওয়াল লিখন লিখে, জ্বলনের তুষের কালো ধোঁয়ায় তা আঁধার হয়ে আসে। কাল কি হবে, কালের ঘরে শূন্য তবু নিজেকে গৌরব দান, নিজেকে প্রচার করেই হয় আমাদের সকালের শুরু। তর সয় না যেন কেউ এসে কানে কানে বলে, নিজের ঢোল অন্যে পেটাবে না তাই তোমাকেই পেটাতে হবে। গীতা বলেছে তুমি শুধু কর্ম করে যাও ফল দেবার মালিক উপরে যিনি বসে আছেন তিনি। দৃশ্যতঃ এ শুধু জ্ঞানের বিষয় জানার জন্য। চর্চা করবে পাশের জন, পাশের বাড়ির লোক, আমি শুধু বলে যাবো। বোধের দরজা তখনো রুদ্ধ ছিলো এখনো আকাশে সিঁদুরে মেঘ।

সেদিন এক বহু পদবীতে ভারি বড় মানুষ বললেন, যুগে যুগে যখন ধর্মের গ্লানি আসে, সৃষ্টিকর্তা তখন রোগ-বালাই দিয়ে মানুষকে শিক্ষা দেন। হেসে বললাম আবার মানুষইতো মানুষ কে সারিয়ে তুলে। ঈশ্বর -আল্লাহ যদি আজাব দেয় আর একটা সময় পর্যন্ত সংগ্রাম করে যখন মানুষ টিকা আবিস্কার করে একে রুখে দেয় তাহলে মানুষই  তো বড় হয়ে গেলো এতে আপনার বিশ্বাসকে খাটো করা হয়নি কি। আসলে যা বলছেন তা ভয় থেকে বলছেন। ঈশ্বর ভয়ের না, ঈশ্বর প্রেমের। তিনি দুঃখ দিলে তা প্রেম দিয়েই সারিয়ে তুলবেন সাজা দিয়ে ধ্বংস করে নয়। মরণব্যাধি জীবানু নয় বরং ঈশ্বর দিয়েছেন জীব সেবা। এই মহামারীতে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী যত সেবামূলক কাজে যারা অহর্নিশ নিবেদিত, তারাই আলো হাতে আঁধার তাড়ানিয়া। মরণ খেলায় লড়ে যাচ্ছে তারা, কখনো হারছে, হারিয়ে দিচ্ছে কখনো। কোন স্তব শোনার আশায় বসে নেই বিভাজনের ঈশ্বরের মত। এদের মাঝেই বহুরুপে, বহুবর্ণে দেখেছি সেবায় এক আর মানবতায় এক রুপি প্রেমের ঈশ্বর।

করোনা সংক্রামণ শুধু মানুষের মধ্যেই। লোভের রাজ্যে কিংবা সনাতন দম্ভের শাসনে মড়ক ধরাতে পারেনি। তাই করোনা উত্তর পৃথিবী নতুন করে সাজবে তা এক ধরনের আত্মতুষ্টি মাত্র। যা চোখে দেখি তা অবিশ্বাস করি কি করে। লোভ কতটা সর্বগ্রাসী হলে গার্মেন্টস মালিকেরা এই ছুঁয়া-ছুঁয়ির দুর্যোগে, লকডাউনের মাঝে নিরীহ মানুষদের কাজে যোগদানের কথা বলতে পারে, কারণ ব্রম্মার বরে লোভ অমর, শেয়ারবাজারের পতনকে মানুষ সবচেয়ে বড় পতন মনে করে। মানুষের দম্ভ এত উঁচুতে, চাঁদ পর্যন্ত ঠেকেছে। তুমি কত উঁচু আরো কত উঁচুতে উঠতে চাও বাপু?  তুমি কি জানো তোমার-আমার জন্যই সৃষ্টি হয়েছে মৃত্যু। করোনা যদি দম্ভের কোষে এই বীজ বপন করতে পারে তবেই একটা সুন্দর আগামী অপেক্ষায় আছে।

অন্যতায় সব আঁধারের শেষে আলো আসে। কোনটি একটু দীর্ঘ,  স্কেন্ডিনেভিয়ান দেশে যেমন কখনো দিনের আলোর জন্য মাস অপেক্ষা করতে হয় এই যা। একদিন বিজ্ঞান বলবে হে পৃথিবী তোমার অসুখ শেষ, শুরু হবে হাতে, হাত মেলানোর উৎসব, কোলাকুলির উৎসব, একই রকম সাইরেন বাজিয়ে রক্তপাতের উৎসব।

আমরা ভুলে যাবো মৃত্যু দানব এসে আমাদের শাসিয়েছিল। মাসের পর মাস গৃহবন্দী হয়ে শুনেছি পৃথিবীর অসুখের সেতার বাদন। আর ভালো লাগেনা, আর ভালো লাগেনা। অপার্থিব সুখ আমাদের ভুলিয়ে দেবে আবার সব।

থমথমে সন্ধ্যার বদলে পাবো মুখরিত দিন, নিজস্বি আর বিজ্ঞাপনে ঢেকে যাবে প্রচার মুখি সেবকের মুখ। সারি-সারি উন্নতির অবকাঠামো, প্রাসাদোপম দেখানো সুখি গৃহকোণ, রাস্তা,ডোবা,শ্মশান,কবর দখল করে গড়ে উঠবে ইমারত,তার উপরে অভারলুকিং রেস্তোরাঁ। সন্তানের উচ্চাভিলাষী ভবিষ্যৎ, অর্থ,খ্যাতি, ভ্রমণ শুধুই ছুটে চলা। এর মাঝে স্মৃতির ঝাঁপি থেকে বের হয়ে আসবে কোন পুরানো নাম, কোন বাল্য সখি, গ্রামের সাঁকো, মেঠো পথ কিংবা বিকেলের সোনারোদ। যেহেতু থামতে মানা তাই আবার দৌড়।

করোনা যুদ্ধে জয়ী হলেও অভাবের সাথে প্রয়োজনের যুদ্ধ চলবে। অভাবের নাম ঢাকা পড়বে পথের ধুলায় যেমন পাতা কুড়ানি, পথশিশু ,কাজের বুয়া এই নাম গুলির কত সাধ কত ইচ্ছা সাধ্যের কাঁচের জানালায় প্রতিহত হয়ে মারা পড়বে। এদের সাথে এন,জি,ও কাজ করবে,বুদ্ধিমান পরিচালক তৈরি করবে ছবি ঘুরে বেড়াবে ফেস্টিভ্যালে কিন্তু তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরেনা, কি করোনার আগে কি পরে। দিনে দিনে ক্ষুধিতের বঞ্চনা চলবে বেড়ে।

বিপরিতে তরতর করে উঠবে শেয়ার বাজার, জমে উঠবে ইউরোপিয়ান ক্লাব আই,পি,এল আর বি,পি,এল। মিলিয়ন ডলারে হবে খেলোয়াড়দের বেচা-কেনা, তারকাদের ঝুলিতে পড়বে মাল্টিমিলিয়ন ডলারের বক্স অফিস। সে তুলনায় মানবিক মুল্যবোধ, সুস্থ সমাজের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ নিয়ে সব রাষ্ট্রের উদাসীনতা হবে একই রকম। ধর্মবাহিত জীবানুতে সংক্রমিত হবে সমাজ,দেশ। আগোল দেয়া দরজা খুলে বেড়িয়ে আসবে রুদ্রাক্ষ, তসবি আর ক্রস।

করোনা গৃহস্থের দ্বারে তোমার অনশণ কবে ভাঙবে জানিনা, তুমি যাও অজস্র মৃত্যুরে পার করে, যদি পারো অমর লোভের অমরত্ব ফিরিয়ে নাও, দম্ভ কে বিষ্ণুর চক্র দিয়ে করে যাও চূর্ণ।

 

হিমাদ্রী রয় সঞ্জীব। কবি ও আবৃত্তিকার, টরন্টো

 

 

সিবিএনএ/এসএস


 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 4 =