-বিদ্যুৎ ভৌমিক
১৪ ডিসেম্বর হল শোকাবহ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাঙালির জাতির জীবনে আর একটি বেদনাবিধূর ও কলংকৃত দিন। গভীর শোক, বিনম্র শ্রদ্ধা ও পরম ভালবাসার সাথে সমগ্র জাতি আজ স্মরণ করছে তার শ্রেষ্ঠ সন্তান -বরেণ্য বুদ্ধিজীবিদের । একই সঙ্গে গোটা জাতি দুঃখ, বেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের প্রতি, যারা দীর্ঘ ৪৮ বছর ধরে বয়ে চলেছেন আপনজনকে নির্মমভাবে হারানোর গভীর মর্মবেদনা, সীমাহীন দুঃখ ও কষ্ট। এই নিশংস হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দালালরা চেয়েছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদ এবং মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা যাতে এদেশে যথাযথভাবে বিকশিত না হয়। যুদ্ধের শুরু থেকেই হানাদার বাহিনী যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞের সূচনা করেছিল, একেবারে শেষদিকে এসে পরাজয়ের আগ মুহূর্তে তা রূপ নেয় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পরিকল্পিত হত্যাকান্ডে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৯ মাস ভয়াবহ রক্তগঙ্গা পেরিয়ে গোটা বাংগালি জাতি যখন ১৬ ডিসেম্বর গৌরবউজ্জল বিজয়ের পথে দাঁড়িয়ে আছে, ঠিক এর পূর্ব মুহুর্তে রাতের আঁধারে পরাজয়ের গ্লানিমাখা রক্তলিপ্সু পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও শান্তি কমিটির সদস্যরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অর্থাৎ বরেণ্য শিক্ষক, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের বেছে বেছে হত্যা করেছিল বুদ্ধি, মেধা ও মননে বাংলাদেশকে পঙ্গু করার এক জঘণ্য ও হীন উদ্দেশ্যে। ২৪ বছর পাকিস্তানী দুঃশাসনের দিনগুলোতে বরেণ্য সাহিত্যিক, শিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানের স্বৈরাচারী ও ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালী জাতির স্বাধীকার ও অধিকার অাদায়ের সংগ্রামে বুদ্ধিজীবীরা সর্বদা রাজনীতিকদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন । বুদ্ধিজীবিরা রাজনীতিবিদদের প্রেরণা যুগিয়ে তাদের এগিয়ে চলার পথকে ভালোভাবে মসৃন করেছেন । এটা সত্য যে, বুদ্ধিজীবীরাই জাগিয়ে রাখেন জনতাকে, জাগ্রত করেন জাতির বিবেক এবং লালন করেন সৎসাহস নিয়ে এগিয়ে চলার শুভ চিন্তা ও প্রত্যয়। অন্যায়কে অন্যায় বলার সাহস তারাই দেখাতে পারেন। তাইতো এহেন জঘন্য ও হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে রক্তলিপ্সু পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের ভয়ংকর এদেশীয় দোষররা চেয়েছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদ, মহান স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যাতে এদেশে যথাযথভাবে বিকশিত না হয়।একাত্তরে যারা হত্যাযজ্ঞে ও মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ সংঘটনে জড়িত ছিল তাদের বিচার প্রক্রিয়া সমাপ্তির পথে । ইতোমধ্যে কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, সাকা চৌধুরী ও আলী হাসান আল মুজাহিদ, মওলানা মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাশেম আলীর মতো ঘাতকদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকান্ড একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধগুলোর মধ্যে ঘৃন্যতম । তবে বাংলাদেশে অত্যাচারী ও অশুভ শক্তির এ অপপ্রচেষ্ঠা সফল হয় নাই । স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক উন্নতির মডেল হিসাবে সর্বজনবিদিত । অন্যদিকে স্বাধীনতার ৭২ বছর পরও পাকিস্তান একটি জূকিপূর্ণ ও ব্যর্থ রাষ্ট্রের গ্লানি বহন করেই চলেছে ।
বিদ্যুৎ ভৌমিক, সাবেক অধ্যাপক, লেখক ও সিবিএনএ এর উপদেষ্টা
মন্ট্রিয়ল, ক্যানাডা । ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন