কাতার বিশ্বকাপে যা করা যাবে না
ফিফা ওয়ার্ল্ডকাপের ২২তম আসর বসতে চলেছে কাতারে। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে দেশটির পৃথক পাঁচ শহরের ৮টি স্টেডিয়ামে লড়বে ৩২টি দল। সাধারণত জুন-জুলাইয়ে বিশ্বকাপ আয়োজন হলেও কাতারের উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে বছরের শেষদিকে হবে এবারের টুর্নামেন্ট। শীত আসন্ন হওয়ায় খেলোয়াড় এবং দর্শকদের কথা চিন্তা করেই বিশ্বকাপ পিছিয়েছে কাতার। মরুর দেশটির আরো অনেক বিষয় অজানা দর্শকদের। চলুন জেনে নেয়া যাক।
বিশ্বকাপের সময় যা বহন করতে পারবেন না দর্শকরা
ইসলামিক রাষ্ট্র হওয়ায় নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা রয়েছে কাতারে। ফুটবল দর্শকরা নিজেদের ব্যাগেজে অ্যালকোহল বহন করতে পারবেন না। কোনো ধরনের মাদকজাতদ্রব্য কাতারে অনুমোদিত নয়। এছাড়া পর্নোগ্রাফি, শুকরের মাংস এবং অন্যান্য ধর্মের বই নেয়া যাবে না। যেদেশে ই-সিগারেট গ্রহণ করাই নিষিদ্ধ সেখানে অ্যালকোহল, শুকরের মাংস নিয়ে প্রতিবন্ধকতা আসাটাই স্বাভাবিক।
২০১৪ সালে কাতারে ভ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়।
যেমন কাপড় পরা যাবে না
বিশ্বকাপের দর্শনার্থীদের কাতারে রক্ষণশীল পোশাক পরতে হবে। পোশাকে শালীনতা রক্ষা করার অনুরোধ জানিয়েছে কাতার সরকার। হোটেলের বাইরে বের হওয়ার সময় নারীদের কাঁধ ঢাকা পোশাক পরতে হবে। সঙ্গে লং স্কার্ট অথবা ট্রাউজার পরতে হবে। সমুদ্র সৈকতে নারীদের বিকিনি পরিধানে অনুৎসাহিত করা হয়েছে। তবে হোটেলের প্রাইভেট পুলে এই পোশাকে গোসল করতে পারবেন নারী সমর্থকরা। শুধু মহিলাদের ক্ষেত্রে নয়, পুরুষদের পোশাকেও বাধ্যবাধকতা দিয়েছে কাতার সরকার। জনসম্মুখে খালি গায়ে এবং শর্টস পরে ঘোরাফেরা করা যাবে না।
একেবারেই কি অ্যালকোহলমুক্ত হবে কাতার বিশ্বকাপ?
সফরকারীদের অ্যালকোহল বহনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলেও একেবারেই মদ্যপান নিষিদ্ধ করা হয়নি কাতার বিশ্বকাপে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত বার এবং হোটেলগুলোতে সীমিত পরিমাণে অ্যালকোহল সরবরাহের অনুমতি দেয়া হয়েছে। মদ্যপানের ক্ষেত্রে রয়েছে বয়সসীমাও। ২১ বছরের কম কেউ অ্যালকোহল গ্রহণ করলে তাকে ৩ হাজার কাতারি রিয়াল জরিমানা করা হবে। অন্যথায় ছয় মাসের জেল।
বিবাহবহির্ভূত সঙ্গী নিয়ে যাওয়া যাবে না কাতারে
বিশ্বকাপ দেখতে আসা সমর্থকদের সঙ্গী নির্বাচনেও সীমাবদ্ধতা দেয়া হয়েছে। বিয়ে ব্যতীত প্রেমিক- প্রেমিকারা হোটেলে এক সঙ্গে অবস্থান করতে পারবেন না। এছাড়া সমকামীতাকে জোরালোভাবে অনুৎসাহিত করা হয়েছে কাতারে। অভিযোগ প্রমাণ হলে জেল-জরিমানার ঘোষণাও দিয়ে রেখেছে দেশটির সরকার।
কাতারে সংখ্যালঘুদের পরিমাণ
ইসলামী রাষ্ট্র কাতারে ৬৬ শতাংশ মুসলমান বাস করেন। বাকি ৩৪ শতাংশ মানুষ অন্যান্য ধর্মের। তার মধ্যে ১৫ শতাংশ হিন্দু, ১৪ শতাংশ খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ধর্মালম্বী রয়েছেন ৩ শতাংশ। বাকি দুই শতাংশ অন্যান্য ধর্মের।
যে কারণে সমালোচিত কাতার বিশ্বকাপ
আয়োজক হওয়ার জন্য ‘বিড’ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে কাতারের বিরুদ্ধে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশটিকে ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত করতে অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের কথাও শোনা গিয়েছে। এক জরিপে দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার সাড়ে ৬ হাজারের বেশি শ্রমিক কাতারে স্টেডিয়াম নির্মাণে নিহত হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দাবি, কাজ করতে শ্রমিকদের জোরজবরদস্তি করা হতো। ছুটির দিনেও শ্রমিকদের ব্যস্ত থাকতে হতো স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজে। এছাড়া সময় মতো বেতন পরিশোধ করা হতো না শ্রমিকদের। নির্যাতিত অভিবাসী শ্রমিকরা মানবাধিকার সংস্থাটিকে জানিয়েছে, তারা নির্যাতিত এবং শোষিত হয়েছেন।
কাতারের জাতীয় সংগীতের মর্মার্থ
কাতারের জাতীয় সংগীতের টাইটেল হলো ‘আস-সালামি আল-আমির’ অর্থাৎ, আমিরের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। ১৯৯৬ সালে কাতারের কবি শায়খ মোবারক বিন সাঈফ আল-থানি রচনা করেন এই গান। আর সুরকার হলেন কাতারের খ্যাতনামা সংগীতশিল্পী আব্দুল আজিজ নাসির আল-উবায়দা আল-ফখরু।