লেখালেখি

কানাডায় এবারের কোভিডঘেরা সামার এবং ট্রাক্টর চড়ে স্ট্রবেরি সংগ্রহ

কানাডায় এবারের কোভিডঘেরা সামার এবং ট্রাক্টর চড়ে স্ট্রবেরি সংগ্রহ


সদেরা সুজন।।  আমার জন্ম, বড় হয়েউঠা অসম্ভব সুন্দর প্রকৃতিঘেরা একটি মফস্বলে। যেখানে চারদিকে বিশাল মাঠে সোনালী ধান কিংবা চাবাগানের সবুজে সবুজ। ধলাই নদীর তীর ঘিরে উঁচু-নিচু আঁকা-বাঁকা পাহাড়িয়া পথ। কখনো ক্রংক্রিট কখনো পাথর বিছানো পথ ধরেই হাঁটতে হাঁটতে বড় হয়ে উঠতে হয়েছে। সেই ফেলে আসা দিনগুলোতে আজকের মতো রকমারি সারি সারি গাড়ী, মটর সাইকেল কিংবা অন্যান্য যানবাহন ছিলোনা। হাতে গোনা কয়েকটি বাইসাইকেল, রিক্সা,  জীপ, মটরসাইকেল আর চাবাগানের ট্রাক্টর। সেই শৈশবে বাগানের দুর্গোপুজো দেখতে ট্রাক্টর ছড়েই যেতে হতো। চাবাগান কিংবা পাহাড়িয়া উঁচু-নিচু, আঁকাবাকা পথে ট্রাক্টরই ছিলো ভরসা আর বর্ষার দিনে যখন রাস্তাগুলো গর্ত হয়ে পানি আর কাদায় একাকার হয়ে যেতো তখন এই ট্রাক্টর ছিলো শক্তিমান যানবাহন। ফেলে আসা দিনগুলোর কত স্মৃতি এই ট্রাক্টরকে ঘিরে। কৈশোরের পর থেকে আর সেই যানবাহনটি চড়া হয়নি্ প্রায় চল্লিশ বছর পর কানাডায় ফের চড়লাম সপরিবারে সেই ট্রাক্টর। বুঝতেই পারছেন নস্টালজিয়া বলে কথা! চোখের পলকে সেই কবে শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলোর মধ্যে হারিয়ে গেলাম, অসংখ্য, অসংখ্য খন্ড-বিখন্ড স্মৃতি আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে গেলো প্রিয় মাটি, প্রিয় মানুষ আর বড্ড চেনাজানা গ্রামের পথপ্রান্তরের সেই জন্মভূমি আমার তীর্থভূমিতে।

২০২০ সাল সারা বিশ্বের মানুষের জন্য একটি ভয়ানক বছর মরতে মরতে যারা বেঁচে যাবে কিংবা বেঁচে থাকবে তারা কখনোই এ দুঃসহ দিনের কথা ভুলতে পারবেনা সহজে। কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের অপ্রতিরোধ্য শব্দহীন যুদ্ধে মৃত্যু থেকে বাঁচতে প্রায় তিন মাস ঘরে বন্দি থেকে অসহ্য অচেনা যাপিত জীবনে একটু সামারের আবহ কাটাতে চলে গিয়েছিলাম লং ড্রাইভে একটি ফার্মে স্ট্রবেরি তুলতে। সেখানেও গিয়ে দেখলাম মরণঘাতি করোনার ভয়ে সব যেনো ছন্দপতন ঘটেছে। দু’দিন পূর্বেই সময়টা  বুক করতে হয়েছিলো অনলাইনে। ফলে কাঁটায় কাঁটায় সেখানে পোঁছতে হলো্। মাথার উপরে যেনো চৈত্রের দাবদাহ। তারপরেও বেশ লাগছিলো অনেকদিন পর প্রাণখুলে নিঃশ্বাস নিতে পারছি বলে। বুক করার সময়ই বলে দিয়েছিলো করোনার কারণে কি কি করতে হবে। মাস্ক পড়ে দুরত্ব বজায় রেখে বার বার হাত সাবানদিয়ে ধোয়ে স্ট্রবেরি বাগানে যেতে হবে এবং বিগত বছরগুলোর মতো ইচ্ছে হলেই মাঠে খাওয়া যাবেনা ভালোকরে ধোয়েই খেতে হবে।

 

মধ্যদুপরে মাথার উপরে প্রচন্ড রোদের তাপদাহ, Quinn স্ট্রবেরি ফার্মে টিকিট কিনে স্বাস্থ্যবিধির সব নিয়ম মেনেই উঠতে হলো ট্রাক্টরে। ট্রাক্টরে কাঠের ট্রাইলারে সীটে দুরত্ব বজায় রেখে বসতে হলো। ফার্মের প্রবেশদ্বার থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে স্ট্রবেরি মাঠ। বিশাল মাঠে যাবার পূর্বে দেখা গেলো কত রকমারি বাগান। কখনো আপেল, কখনো ব্লুবারি, কখনো চেরি, পেয়ারস, লাউ, মরিচ আর কোর্নের দিগন্তঘেরা বাগান ! আহা,কীসুন্দর অপূর্ব দক্ষ কৃষকের সৃষ্টিকর্ম।  মনটা ভরে গেলো। তারপরে স্ট্রবেরি মাঠ! বিশাল এলাকাজুড়ে শুধু স্ট্রবেরি আর স্ট্রবেরি। হাজার হাজার লাইনে সবুজ পাতার অন্তরালে লাল টকটকে স্ট্রবেরি। দেখে মনে হয়েছিলো ঠিক যেনো আমার প্রাণের পতাকা লাল-সবুজ খেলা করছে আমার হৃদয়ে।

গিন্নী, ছেলে-মেয়ে স্ট্রবেরি তুলতে ব্যস্ত হলেও আমার প্রাণ-মন শুধুই এই দিগন্ত প্লাবিত বিশাল মাঠের লালসবুজের থরে থরে অজানা আনন্দে। মাস্কবন্দি জীবনে ক্যামেরার ক্লিক কিছুটা বিব্রত হলেও অনেকদিন পর ক্যামেরায় ক্লিক দিচ্ছি সে-কি কম কথা?

কিছুক্ষণের মধ্যেই স্ট্রবেরির বাস্কেট ভরে গেলো অপরদিকে রোদের তান্ডবে সবাই দিশেহারা ফলে নিজের অজান্তেই ফিরতে হলো। কানাডায় এবারের কোভিডঘেরা সামার এবং ট্রাক্টর চড়ে স্ট্রবেরি সংগ্রহ করে আবারো ট্রাক্টরে ফিরছি আর সেই ফেলে আসা দিনগুলোর কথা মনকে ক্ষত-বিক্ষত করছে। গাড়ীতে উঠেই শৈশবের ট্রাক্টরের সেই গল্প বলি যদিও বাচ্চাদেরকে অনেকবার বলেছি সেই ট্রাক্টর চড়ে পূজা দেখা, টিভি-ফোনহীন আর বিদ্যুৎবিহীন হারিক্যানের আলোয় যাপিত জীবনের কথা! সেদিন আজকের মতো এতকিছু না থাকলেও একটা ভিন্ন রকমের আনন্দ ছিলো অনুভূতি ছিলো। যে নস্টালজিয়া প্রবাসের প্রতিটি সময় আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। কোভিড নামের অজগরের পেটে এবারের সামার ফলে অনেকদিন পর সপরিবারে বাইরে বেড়ানো বেশ ভালো লেগেছিলো।

 

 

সিএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন