বুধবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের এতথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, দগ্ধ ৩৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক।
সামন্ত লাল সেন জানান, হাসপাতালে আনা অনেকের ৭০-৯০ শতাংশ শরীর দগ্ধ হয়েছে, কারও ৬০-৭০ শতাংশ। প্রত্যেকেরই সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ পুড়ে গেছে।
বুধবার বিকেলে ‘প্রাইম পেট অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামের এই কারখানাটিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট দুই ঘণ্টার চেষ্টায় সন্ধ্যা ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। দগ্ধদের অধিকাংশই কারখানাটির শ্রমিক।
দগ্ধ কয়েক শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে, কারখানায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে শ্রমিকরা ভেতরেই আটকা পড়েন। সেখানে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের থালা, গ্লাস ও বিভিন্ন খাবার সরবরাহে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বাক্স ও প্যাকেট তৈরি করা হতো।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢামেকের বার্ন ইউনিট কর্তৃপক্ষ সব চিকিৎসক ও কর্মীর ছুটি বাতিল করে দায়িত্বে নিয়োজিত করেছেন। কেরানীগঞ্জের স্থানীয় এমপি ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ হাসপাতালে আহতদের দেখতে আসেন। তিনি বলেন, ‘কারখানাটির কোনো অনুমোদন ছিল না।’
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, বিকেল ৪টার দিকে কারখানাটিতে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর, পোস্তগোলা ও কেরানীগঞ্জ থেকে ১০টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। আগুন লাগার খবরে স্থানীয় লোকজনও ভিড় করে সেখানে। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরাও দগ্ধদের উদ্ধার কাজে অংশ নেন।
আগুন লাগার ব্যাপকতার খবরে ঢাকা থেকে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ২০টি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। এসব অ্যাম্বুলেন্সে করে দগ্ধদের দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ফায়ার অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন সমকালকে বলেন, ‘সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও নেভাতে আরও সময় লেগেছে। আগুনে দগ্ধদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। আগুন নেভানোর পর তল্লাশি করে ভেতর থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’
ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দগ্ধদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে; তারা হলেন- শ্রমিক ফয়সাল, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি জাহাঙ্গীর, শফিকুল, বশির, মো. ফয়সাল, দুর্জয় সরকার, সুমন ইসলাম, মেহেদী, আসাদ, সিরাজ, সাজিদ, জিনারুল হোসেন, সাখাওয়াত, আবু সাইদ, বাবুল, জাকির হোসেন, আলমগীর, আবদুর রাজ্জাক, রিয়াজ, দিদারুল, লাল মিয়া, জাকির হোসেন, সালাউদ্দিন, সুজন, সোহান, জিসান, সাহাজুল, ইমরান, রায়হান, আসলাম, মফিজ, মোস্তাকিম, ফারুক আহমেদ ও ফিরোজ।
বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন পার্থ শঙ্কর পাল জানান, দগ্ধদের মধ্যে বেশির ভাগের অবস্থা সংকটাপন্ন। তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশ ছাড়াও শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। চিকিৎকরা তাদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।