দেশের সংবাদ

খালেদা জিয়া কি লন্ডন যাচ্ছেন? ভিসা করা আছে ফাতেমারও

খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

এনাম আবেদীন ।। খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাচ্ছেন—এমন একটি গুঞ্জন এখন বিএনপির পাশাপাশি অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও ছড়িয়েছে। বলা হচ্ছে, শুধু রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ মিললেই একটা সুবিধাজনক সময়ে তিনি বিদেশে চলে যেতে পারেন। খালেদা ও তাঁর গৃহকর্মী ফাতেমার যুক্তরাজ্যে যাওয়ার ভিসা কিছুদিন আগেই করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এখন বাকি রয়েছে হিসাব মেলা।

বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, এই হিসাব-নিকাশের অর্থ হলো সরকারের সঙ্গে খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারের দেনদরবার বা সমঝোতাপ্রক্রিয়া। ওই প্রক্রিয়া তখনই চূড়ান্ত হবে, যখন সরকার মনে করবে খালেদা জিয়া বিদেশে গেলে সরকারের কোনো ক্ষতি নেই। অর্থাৎ তিনি লন্ডনে থাকলেও সরকারের বিরুদ্ধে সরব হবেন না—এমন নিশ্চয়তার পাশাপাশি খালেদা জিয়া দেশে অবস্থান করলে রাজনীতির অন্য কী ‘লাভ’ রয়েছে, সেগুলোও হিসাবে আসবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।

গত ২৮ মে ভাড়া করা একটি উড়োজাহাজে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার গুঞ্জন নতুন মাত্রা পায়। ২০১৭ সালেও লন্ডনের একটি হাসপাতালে চোখের অস্ত্রোপচার হয়েছিল খালেদা জিয়ার। এদিকে দক্ষিণ লন্ডনের উপকণ্ঠে টেমস নদীর ধারে ওয়ালটন এলাকার আগের বাসা বদল করে কিছুদিন আগেই কিছুটা বড় পাঁচ-ছয় রুমের নতুন একটি বাসা ভাড়া নিয়েছেন তারেক রহমান।

জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার সম্প্রতি  বলেন, ‘আমি ঠিক জানি না। এ ধরনের ব্যাপার থাকলে তো আমার জানার কথা।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত শনিবার এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে কিছু শুনিনি। তবে এটা তো ঠিক যে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা ভালো নয় এবং তাঁর উন্নত চিকিৎসা দরকার।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কালের কণ্ঠকে জানান, ‘ম্যাডামের বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে কিছুদিন আগে গুঞ্জন শুনেছি। এখন অবশ্য শুনি না।’

প্রবীণ আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের মতে, ‘ম্যাডাম ও তাঁর পরিবার তো উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে চাইবে। কারণ মুক্তির উদ্দেশ্যই ছিল উন্নততর চিকিৎসা, সেটা তো সফল হয়নি। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারের মনোভাব তথা হিসাব-নিকাশের ওপর। সরকার চাইলে সব কিছু পারে।’

জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক গতকাল  বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে হলে শর্ত শিথিলের জন্য আমাদের কাছে আবেদন করতে হবে। সরকারের সম্মতি বা অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু এ ধরনের কথা এখন আসছে কেন? তিনি তো আবেদন করেননি।’

কারামুক্তির শর্ত অনুযায়ী আপাতত খালেদা জিয়াকে বাসায় বসে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। প্যারালাইজড থাকায় বর্তমানে দুটি হাতই তাঁর প্রায় অকার্যকর।

আর এ কারণেই রাজনীতির তুলনায় খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত বিষয়েই দুই বছর ধরে গুরুত্ব দিয়ে আসছে তাঁর পরিবার। গত ৪ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যে আবেদন করা হয়, সেখানেও উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার আগ্রহের কথাই বলা হয়েছে। এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে করা আবেদন এবং জামিনের জন্য আদালতে যুক্তিতর্কের সময়েও আইনজীবীরা উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। উচ্চ আদালতে প্রতিবারই জামিনের আবেদন করা হয়েছে তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য।

কারামুক্ত হয়ে গত ২৫ মার্চ থেকে গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় থাকলেও খালেদা জিয়া সরকারের নজরদারির মধ্যেই রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। লন্ডনে থাকলেও তাঁর বিষয়ে নজরদারি থাকবে। তবে ওই সময় খালেদা জিয়া ইচ্ছা করলে দেশি-বিদেশি যেকোনো ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করতে পারবেন। কিন্তু বর্তমানে ফিরোজায় বিশেষ কোনো বৈঠক বা সাক্ষাৎ করতে হলে তা পুলিশ বা প্রশাসনকে জানিয়েই করতে হবে।

গত ১১ মে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ডেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা কথা বলেন খালেদা জিয়া। ওই দিন আলাপের মধ্যে তারেক রহমানকেও যুক্ত করা হয়েছে বলে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকে সন্দেহ করেন। ফলে সরকারি মহলে এ নিয়ে কিছুটা খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়। আর এমন তৎপরতার মধ্যেই খালেদা জিয়া নেতাদের সঙ্গে সব ধরনের সাক্ষাৎ বন্ধ করে দেন।

সরকারের নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের সাজা স্থগিত হওয়ায় কারামুক্ত হন খালেদা জিয়া। তবে ওই দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে আভাস পাওয়া যায়, তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই খালেদা জিয়া মুক্তি লাভ করেন এবং তাদের সঙ্গে সরকারের সমঝোতা হয়েছে বলে বিএনপির পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনের সংশ্লিষ্ট সবাই মনে করেন। খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার এবং বোন সেলিমা ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বলেও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। ফলে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে হলে সেটি পরিবারের সঙ্গে সমঝোতার মধ্য দিয়ে হবে বলে বিএনপি নেতারা মনে করেন।

গত ২৫ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘দেখুন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তিনি (খালেদা জিয়া) কেন করবেন? তিনি তো এখনো সাজাপ্রাপ্ত, দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি। ছয় মাসের জন্য তাঁর দণ্ড স্থগিত করা হয়েছে।’

সম্প্রতি কালের কণ্ঠ’র পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একই রকম জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করা হয়েছে। তিনি এখনো মুক্ত নন। তাহলে রাজনীতি তিনি কেন করবেন! সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

 

সি/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন