গাজা উপত্যকায় গড়ে প্রতি ১০ মিনিটে একটি করে শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করে বলেছেন, “কোথাও কেউ নিরাপদ নয়।”
মহাপরিচালক বলেন, গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে অর্ধেক এবং এর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলির দুই-তৃতীয়াংশ কাজ করছে না। যেগুলি কাজ করছিল সেগুলি তাদের ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে বলে জানান তিনি।
টেড্রস ১৫ সদস্যের কাউন্সিলকে বলেছেন, ”হাসপাতালের করিডোরগুলি আহত, অসুস্থ ব্যক্তিদের ভিড়ে ঠাসা। মর্গ উপচে পড়ছে। অ্যানেস্থেসিয়া ছাড়াই অস্ত্রোপচার চলছে। হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ হাসপাতালে আশ্রয় নিচ্ছেন। ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরাইলে হামলার পর ইসরাইল গাজা উপত্যকা শাসনকারী হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইসরাইলের দাবি হামাস যোদ্ধারা প্রায় ১২০০ জনকে হত্যা করেছে এবং ২৪০ জনেরও বেশি মানুষকে জিম্মি করেছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইল গাজা আক্রমণ করেছে- ২.৩ মিলিয়ন মানুষের ওপর আকাশ থেকে এবং স্থল আক্রমণ শুরু করেছে।
চলছে অবরোধ। ৭ অক্টোবর থেকে গাজা এবং পশ্চিম তীরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর ২৫০ টিরও বেশি আক্রমণ হয়েছে যেখানে ইসরাইল স্বাস্থ্যসেবার উপর ২৫টি হামলা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা।
ইসরাইল দাবি করেছে, হামাস হাসপাতালের নিচে সুড়ঙ্গে অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছে, যদিও হামাস অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ইসরাইলের জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, ইসরাইল দক্ষিণ গাজায় হাসপাতাল স্থাপনের জন্য একটি টাস্কফোর্স তৈরি করেছে। ১২ অক্টোবর, ইসরাইল তার স্থল আক্রমণের আগে গাজার প্রায় ১.১ মিলিয়ন মানুষকে দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এরদান বলেছেন, “ইসরাইল সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে, আইসিআরসি এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলির সাথে ফিল্ড-হসপিটাল এবং চলমান হাসপাতাল স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা করছে। ইসরাইল উত্তর গাজার হাসপাতালে চিকিৎসা সহায়তাকারী জর্ডানের বিমানকে নামতে সহায়তা করেছে।”
এরদানের দাবি-ইসরাইল ডব্লিউএইচও বা জাতিসংঘের অন্য কোনও সংস্থার চেয়ে গাজাবাসীর মঙ্গলের জন্য অনেক বেশি কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র গাজার হাসপাতালগুলিতে জ্বালানি সরবরাহ করার চেষ্টা করছে এবং জাতিসংঘের দূত রবার্ট উড বলেছেন, বেসামরিক এবং মানবিক সুবিধাগুলিকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সম্মান ও সুরক্ষিত করতে হবে বলে জোর দিয়েছিলেন। উড বলেন, হামাস বেসামরিক মানুষকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। বৈঠকের শুরুতে, জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (UNRWA) এর সাথে কাজ করা ১০১ জনের সাথে ইসরাইল ও গাজায় নিহত বেসামরিক নাগরিকদের স্মরণে নিরাপত্তা পরিষদ কিছুক্ষণের জন্য নীরবতা পালন করে। টেড্রোস ইথিওপিয়ায় যুদ্ধের কথা স্মরণ করে বলেন, তিনি জানেন গাজার শিশুরা কি অবস্থার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে- ”হাওয়ায় গুলির শব্দ, বোমা হামলার পর ধোঁয়ার গন্ধ, রাতের আকাশে ট্রেসার বুলেট, ভয়, যন্ত্রণা, ক্ষতি- এইসব দেখতে হচ্ছে শিশুদের।”
সূত্র : রয়টার্স থেকে মানবজমিনে প্রকাশিত