জানা অজানা

কমলগঞ্জ সরকারি মডেল হাই স্কুল: গৌরবময় ইতিহাস সমৃদ্ধ প্রাচীন বিদ্যাপীঠ

গৌরবময় ইতিহাস সমৃদ্ধ

ইতিহাস ঐতিহ্য আর মনোরম ভূ-প্রকৃতির কমলগঞ্জ | পর্ব -২ | সৈয়দ মাসুম 

কমলগঞ্জ সরকারি মডেল হাই স্কুল: গৌরবময় ইতিহাস সমৃদ্ধ প্রাচীন বিদ্যাপীঠ

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে ১৮৯১সালে স্থানীয় জমিদার রতীশ দত্তের উদ্যোগে ধলাই তীরবর্তী পানিশালা গ্রামের পাশ ঘেঁষে কমলগঞ্জ এম ই(মধ্য ইংরেজী)স্কুল নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। ১৯৩৪সালে এই এম ই স্কুলটি হাই স্কুলে রূপান্তরিত হয়।
কমলগঞ্জ হাই স্কুল থেকে কমলগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ,এরপর কমলগঞ্জ মডেল হাই স্কুল এবং সর্বশেষে ২০১৮ সালে এসে কমলগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় নামে সরকারের গেজেট তালিকা ভুক্ত হয় এই প্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠার প্রথমদিকে উচ্চবর্ণীয় হিন্দু ও চা বাগানে কর্মরত কর্মকর্তাদের ছেলেমেয়েদেরই পড়ার অগ্রাধিকার ছিল এই স্কুলে। এম ই স্কুল থাকাকালীন ও হাই স্কুলে উত্তীর্ন হওয়ার পরও সুদীর্ঘ কাল স্কুলটির সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন ডাক্তার চেরাগ উদ্দিন সাহেব।পরবর্তীতে স্কুলটির উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় সম্পৃক্ত হন সৈয়দ আব্দুল কাহির ওরফে গোলাম মোস্তফা ও মকবুল আলীর মতো প্রখ্যাত দানশীল ব্যক্তিরা।উনাদের বদান্যতায়ই স্কুলে প্রতিষ্টিত হয় সুবিশাল ভবন ও খেলার মাঠ। পাকিস্তান শাসনামলের শেষ দিকে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির অবিভাবক প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন গোলাম মোস্তফা সাহেব। ওই সময়ে মহকুমার প্রশাসনিক কর্মকর্তা থাকতেন ম্যানেজিং কমিটির প্রধান।
গোলাম মোস্তফা সাহেবের মৃত্যুর পর এই দায়িত্বে আসেন মকবুল আলী সাহেব।
মকবুল আলী সাহেবের মৃত্যুর পর স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পান বর্তমান কমলগঞ্জের পৌর মেয়র জুয়েল আহমেদের পিতামহ হাজী আব্দুর রহমান সাহেব। তিনিও আজীবন এই দায়িত্বে ছিলেন। রহমান সাহেবের মৃত্যুর পর প্রায় দুই দশকেরও অধিক সময় কাল ধরে দায়িত্বে আছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ও কমলগঞ্জ উপজেলার বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান। অবশ্য মধ্যখানে বেশ কয়েক বছর প্রাক্তন মেয়র আবু জামসেদের পিতা জনাব আবু হুরায়রা সাহেব এই দায়িত্ব পালন করেন।
এম ই স্কুল থাকা কালীন দক্ষিণ সিলেটের অত্যন্ত সুনামখ্যাত এই বিদ্যাপীঠে সেই সময় প্রধান শিক্ষক হিসাবে কর্মরত ছিলেন বরিশালের বিশিষ্ট সু-সাহিত্যিক লেখক বাবু রাম গোপাল চক্রবর্তী।
শিক্ষকদের মধ্যে লংলার গগন চন্দ্র দে ,বাবু শশীমোহন দাস ও বাবু বিপিন চন্দ্র দেবের নাম জানা যায়।
হাই স্কুলে উন্নীত হওয়ার পর বাবু নরেন্দ্র কুমার দত্ত ছিলেনএই স্কুলের কিংবদন্তিতুল্য প্রধান শিক্ষক।
আশির দশকের প্রথম দিকেই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান সৈয়দ আব্দুল মতিন। একজন দক্ষ শিক্ষক আর স্কুল প্রশাসক হিসাবে সৈয়দ আব্দুল মতিনের জুড়ি ,সম্মান ও মর্যাদা ছিলো স্বর্ণচূড়া।
এই স্কুলের ঋষিতুল্য শিক্ষক ছিলেন রাঁধা মোহন সিংহ ও মাওলানা আব্দুর রকিব।গণিত ,ইংরেজি ,বিজ্ঞান ,ইতিহাস ও সাহিত্য সর্ব বিষয়ে সমান পারদর্শী রাধামোহন সিংহকে অনেকেই বলেন তিনি ছিলেন কমলগঞ্জ হাই স্কুলের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ট শিক্ষক।
সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিংহের পিতা ললিত মোহন সিংহও ছিলেন এই স্কুলের খ্যাতিমান শিক্ষক।
১৯৯৫ সালে সৈয়দ আব্দুল মতিনের ইন্তেকালের পর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আসেন মোবারক হোসেন। বাবু নরেন্দ্র দত্ত থেকে শুরু করে মোবারক হোসেন পর্যন্ত প্রত্যেকেই কমলগঞ্জ হাই স্কুলের শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক হয়েছেন। মোবারক হোসেনের অবসরে যাওয়ার পর এই ধারাবাহিকতা বিঘ্নিত হয়। পরবর্তী ইতিহাস সকলেরই জানা।
১৯৭১সালে আমাদের সুমহান মুক্তিযুদ্ধে কমলগঞ্জ হাই স্কুলের
শিক্ষক রমেশ শীল শহীদ হন । ১৯৮৬ সালে শিক্ষকদের দাবী আদায়ের আন্দোলনে কমলগঞ্জ হাই স্কুলের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন শামসুর রহমান। কমলগঞ্জ হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র ফয়েজ আহমেদকে সেই সময় গুলিবিদ্ধ করে স্বৈরাচার সরকারের পেটুয়া পুলিশ বাহিনী। এক সময় ফয়েজ আহমদও মারা যান।
বিশের দশকে খান বাহাদুর ডাক্তার বজলুল হাসান চৌধুরী এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। সাবেক এম এন এ ,গণপরিষদ সদস্য ও কমলগঞ্জ -শ্রীমঙ্গলের আজীবন সাংসদ ,মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪নং সেক্টরের প্রধান রাজনৈতিক সমন্বয়ক মোহাম্মদ ইলিয়াস চল্লিশের দশকে বছর দু’য়েক এই স্কুলের ছাত্র ছিলেন পারিবারিক তথ্য থেকে জানা যায়।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি বাবু সুরেন্দ্র কুমার সিংহ ,বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ,লেখক ও বাংলাদেশ ব্যাংকার সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ফারুক উদ্দিন আহমেদ, সাবেক সচিব বেনু গোপাল দেব,সাবেক অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ এম এ মুনিম ,সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর এ বি চৌধুরী,সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডাক্তার প্রফেসর নন্দ কিশোর সিংহ, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক প্রফেসর সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন শামীম ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য অধ্যাপক রফিকুর রহমান সহ অসংখ্য ডাক্তার ,ইঞ্জিনিয়ার ,প্রশাসক ,লেখক আর শিক্ষাবিদের শিক্ষা জীবনের বড় অংশটি কাটিয়েছেন এই বিদ্যাপীঠেরই আঙ্গিনায়।
কমলগঞ্জ সরকারি মডেল হাই স্কুল: গৌরবময় ইতিহাস সমৃদ্ধ প্রাচীন বিদ্যাপীঠ | সৈয়দ মাসুম ঃঃ লেখক, গবেষক, কবি, সাংবাদিক এবং প্রাক্তন অধ্যাপক

এসএস/সিএ



সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন