খুব ভোরে নীরা, আকাশকে খুব জোরে জোরে আকাশ আকাশ বলে চিৎকার করে ঘুম থেকে ডেকে তুললো ৷
আকাশ পেশায় খুব ব্যস্ত একজন ব্যবসায়ী, ব্যবসা ছাড়া তার মাথায় আর কোনোকিছুই ঘুরপাক খায়না ৷ অনেক টাকা তার কিন্তু বিশেষ বিশেষ দিনগুলো সে ভুলে যায় প্রতিবছর! আজ ও তার ব্যতিক্রম নয় ৷ এ নিয়ে নীরার মনে দারুন ক্ষোভ জমে আছে ৷ যদিও পরে আকাশ সেটা নীরাকে পুষিয়ে দেয় ৷আজ নীরার জন্মদিন ! নীরা প্রতিবারের মত এবারও ভেবেছিলো আকাশ অফিস থেকে ফিরে নীরাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে সারপ্রাইজ দিবে ৷ কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি ! এমনটা কখনোই হয়না ! তাই নীরাই খুব ভোরে আকাশকে ঘুম থেকে ডেকে তুললো টেবিলে যেয়ে নাশতা করার জন্য ৷ গাড় ঘুম থেকে আকাশ বেচারার উঠতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছিলো তবুও সে চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বসে নীরাকে বললো কি হয়েছে ? তুমি টেবিলে যাও আমি আসছি৷নীরা টেবিলে যাবার একটু পর আকাশ এসে স্তম্ভিত হয়ে গেলো আজকের এতসব আয়োজন দেখে, নীরাকে এত আয়োজনের কারন জিজ্ঞেস করলো কিন্তু নীরা খুব গম্ভীর হয়ে আকাশকে খাবার খেতে বললো !
আর মনে মনে ভাবলো আকাশ এখনো কেন বুঝতে পারছেনা, কেন প্রতি বছর ও ভুলে যায় আজ নীরার জন্মদিন সে কথা ??
কষ্টে নীরার চোখ ভিজে উঠলো !
নাশতা ফিনিশ করে আগের ঠিক করে রাখা সময়ে দুজনই বেরিয়ে পড়লো ৷
আজ এই বিশেষ দিনটিতে আকাশের চোখের ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করতে হবে, এরপর সংসারের বাজার ৷
গাড়িটা ডাক্তারের চেম্বারের ঠিক উল্টো দিকের মাঝারি আকৃতির পার্কিং লটে এসে থামতেই আকাশ গাড়ি থেকে বেরিয়ে নীরাকে বললো তুমি চাইলে গাড়িতে বসে থাকতে পারো , আমি কিছুক্ষনের মধ্যেই ফিরছি ৷ নীরা আকাশের কথায় আর নামলোনা গাড়ি থেকে ৷
গাড়িতে বসেই cell phone টা নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করার এক পর্যায়ে নীরার চোখ হটাৎ গাড়ির জানালা টপকে বিশাল দূর আকাশে চলে গেলো ৷ আকাশের গায়ে লেপ্টে আছে ঝকঝকে স্বর্ণালি রোদের সাথে ধূসর মেঘের ফালি !!
একে অপরকে যেন বেশ আবেগে জড়িয়ে আছে ! মনে হচ্ছে একটু পরই ওদের এ আবেগ উপচে জলরাশি হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়বে ৷
আকাশ মেঘের কোলাকুলি দেখার পর নীরা নিচে মাটির দিকে তাকাল ! মাটির দিকে তাকাতেই তার চোখ চলে গেলো মাটির উপরে বিছানো ভীষণ কটকটে সবুজ রংয়ের ঘাসগুলোর উপরে ! প্রতিটি ঘাসের ডগায় একটি করে ফুল ফুটে আছে ! ঘাস ফুলের নাম লিলি সেটা নীরার মাথায় আসতে একটু সময় নিলো ! হালকা গোলাপি রঙের ফুলগুলো ৷ কি অনাবিল সুন্দর দেখতে ৷ ফুলগুলোর দিকে খুব মায়া আর অবাক করা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নীরা !!
এরই মঝে হটাৎ অবাক করা দৃষ্টি কাটিয়ে নীরার চোখে এলো — ছিপছিপে গড়নের শ্যামলা গায়ের রং এর একটি মেয়ে তার মাথার চুলগুলো খোঁপা বেঁধে এক প্যাচের শাড়ী পড়ে ঘাস ফুলগুলোর ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷ ভারী মিষ্টি চেহারার মেয়েটি, আরেকটু তাকিয়ে লক্ষ্য করতেই নীরার নজরে এলো খুব সাধারণ গোছের একটি ছেলে ঘাসফুল থেকে টপ করে একটি ফুল ছিঁড়ে মিষ্টি চেহারার এই মেয়েটির খোঁপায় ফুলটি গুঁজে দিলো ৷ ফুলটি খোঁপায় গুঁজে দেবার পর মেয়েটির সৌন্দর্য্য যেন আরো দ্বিগুন হয়ে গেলো !
মেয়েটি বড় বড় চোখ করে ছেলেটির দিকে এক পলক তাকিয়ে মুচকি হাসলো! চোখ ফেরানো যাচ্ছেনা যেন এতো অদ্ভুত সুন্দর এ দৃশ্য থেকে !! নীরার এ দৃশ্য দেখে আবেগে চোখের কোন ভিজে উঠলো ! সুখী হতে আর কি লাগে ? ? নীরার এমনটিই মনে হল !
চোখ মুছে নীরা এ দৃশ্যের শেষ অংশটি তার সেল ফোন এর ক্যামেরায় বন্দি করে ফেললো ! হয়তো আজ এই মেয়েটিরও নীরার মতই বিশেষ কোন দিন ছিল ৷
ততক্ষনে আকাশ প্রায় গাড়ির কাছাকাছি চলে এলো, এবং আসতে আসতে বিষয়টি খেয়াল করে দেখলো ৷ নীরার চোখের জ্বলের দৃশ্যটিও আকাশের চোখ অগ্রাহ্য করতে পারেনি ৷ আকাশ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে নীরাকে নিয়ে বাকি কাজগুলোও সেরে ফেললো ৷
এবারে আকাশ গাড়ি টান দিলো বাসার উদ্দ্যেশ্যে ৷ গাড়িতে বসে আকাশের সাথে নীরার একটি কথাও হয়নি ! আকাশ অবশ্য বেশ কয়েক বারই নীরার সাথে কথা বলতে চেষ্টা করেছিল কিন্তু নীরা একেবারেই নির্বাক ৷ কোনো কথার জবাবই আকাশকে দিলোনা ৷ শুধু একটু পর পর তার নিজের চোখদুটো মুছেই যাচ্ছে ৷
আকাশ নীরার কাছে জানতে চাইলো কেন সে কাঁদছে, নীরা সে কথারও কোন জবাব দিলোনা আকাশকে ৷ গাড়ি চলতে চলতে একটা সময় গাড়িটি এসে থামলো ওদের বাড়ির বিশাল আকৃতির গেট বরাবর ৷
দারোয়ান গেট খুলতেই নীরা গাড়ি থেকে নেমে হন হন করে সিঁড়ি বেয়ে নিজেদের এপার্টমেন্ট এর ঠিক দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো ৷ নীরার পেছন পেছন আকাশও চলে এলো ৷ ব্যাগ এ হাত দিয়ে নীরা চাবি খুঁজে পাচ্ছেনা ৷ আকাশ তার চাবিটি নীরার দিকে বাড়িয়ে দিতেই নীরা দরজা খুলে একেবারেই যেন চমকে উঠলো বাসার ভেতরের এমন অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য দেখে !!
চারিদিকে শুধু হরেক রকমের ফুল আর ফুলের মালা দিয়ে ঘরের ভেতরের প্রতিটি জায়গা সাজানো !
কি ফুল নেই তাতে ৷ নাম জানা এবং নাম না জানা সব ধরণের ফুলই রয়েছে পুরো এপার্টমেন্টটির যেদিকে চোখ গেলো তার সবখানেই ৷ একটু আগে রাস্তায় দেখা মেয়েটির খোঁপায় পড়ানো গোলাপি রঙের লিলি ফুলও রয়েছে এখানে ৷ কিন্তু সব ফুলের মঝে গোলাপের পরিমানটা যেন একটু বেশি ৷ নীরার গোলাপ খুব প্রিয় ৷ বাসর রাতে নীরা আকাশকে এ কথা বলেছিলো অনেকদিন আগে ৷
ফুলের মৌ মৌ সুবাসে নীরার সারা ঘর যেন ভেসে যাচ্ছিলো ! নীরা বুক ভরে তাজা ফুলের গন্ধ টেনে নিঃশাস নিলো ৷ ঘরের ঠিক এক কোনের টেবিলের উপরে রাখা কাঁচের যে ফুলদানিটি রয়েছে তার ভেতরে খুব বড় মাপের একটি ফুলের তোড়াও রাখা আছে ৷ ফুলের তোড়াটিতে নানান রঙের গোলাপের সমাহার ! নীরা এসব অপরূপ ফুলের বাহার থেকে একমুহূর্তের জন্যও যেন চোখ ফেরাতে পারছেনা ৷
গোলাপ রাখা ফুলদানির পাশে বিশাল আকৃতির একটি কেকও রাখা আছে ৷ যার গায়ের উপরে খুব বড় করে লেখা –
“আজ তোমার শুভ জন্মদিন নীরা
ছোট ছোট বেশ কিছু মোমবাতি জ্বালানো কেক এর চারিদিকে ৷ আকাশ নীরাকে ডেকে বললো
“নীরা মোমবাতিগুলো নিভিয়ে কেক কাটো !”
আকাশের কথামতো নিরাও মোমবাতি গুলোতে ফুঁ দিতে যাবে এমন সময় আকাশ হাতে একটি গোলাপ তুলে নীরার খোঁপায় গুঁজে দিলো !
নীরা কেক এ ফুঁ দেয়া বন্ধ করে আকাশের বুকে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো অতি আবেগে !!
এবং কান্নাজড়িত কণ্ঠেই আকাশকে বললো
তার খোঁপায় ঘাসফুলও গুঁজে দিতে
আকাশ মুচকি হেসে নীরার খোঁপায় গোলাপের পাশাপাশি ঘাসফুলও গুঁজে দিয়ে এক হাতে নীরার কোমর জড়িয়ে ধরলো
আর অন্যহাতে নীরার ছোট বোন নিতু আর তার বরকে thnx লিখে পাঠিয়ে দিলো ৷
আকাশ এবং নিতু মিলে আগে থেকেই নীরার জন্মদিনে এমন সারপ্রাইজ দিয়ে নীরাকে চমকে দেবে বলে ঠিক করেছিলো