সাহিত্য ও কবিতা

জয় হোক, জর্জ ।।।। পুলক বড়ুয়া


জয় হোক, জর্জ
পুলক বড়ুয়া

জর্জ তুমি কে
আমি জানি না
ফ্লয়েড তুমি কি
আমি জানি না
আমি তা জানতেও চাই না
আমি তা ভাবতেও চাই না

শুধু জানি, তুমি শুধু
সাত সমুদ্র তের নদীর পাড় নও আরও আরও
মহাসমুদ্র পাড়ি দিয়ে
মহাদেশে থেকে মহাদেশে
মহাকাশ থেকে মহাকাশে
তুমি আজ পৃথিবীসম তরঙ্গ
তোমার নামের প্রথমাংশ জর্জ শেষাংশ ফ্লয়েড
তোমার নামের প্রথম ভাগ জর্জ শেষভাগ ফ্লয়েড
প্রথম থেকে শেষাবধি
তুমি একজন জর্জ
আপাদমস্তক ফ্লয়েড
আমার একজন অতি প্রিয়জন প্রিয়ভাজন প্রিয়বরেষু

জর্জ থেকে জখম হওয়া অবধি
উদর থেকে খবর হওয়া অবধি
উদয় থেকে লয় অবধি
উন্মেষ থেকে শেষাবধি
সূচনা থেকে অবশেষ অবধি
আদি থেকে অন্তিমে
প্রারম্ভ থেকে পরিশেষে
তুমি একজন মানুষ পূর্ণাঙ্গ মানুষ সম্পূর্ন মানুষ
তুমি মানব ওরা দানব
তুমি সম্পন্ন হতে পার না, শুধুই বিপন্ন হতে পার

আমি জানি, শুধু তুমি শুধু মানুষ
একজন সাধারণ মানুষ মানবপুত্র সামান্য মানব
আমি জানি, তুমি এক বর্ণরাহুর গ্রাস অন্তঃসারশূন্য সেরাবাদের শিকার বর্ণহিংস্র শ্রেষ্ঠত্ববাদের নিরঙ্কুশ বলি : জনম জনম জানকোরবান : বিপন্ন বলির পাঁঠা—বিধ্বস্ত কালো আদমী; আমি জানি, তুমি ভেতরে সবার মতো—বাইরে কালো, অসবর্ণ—অন্তরে সবার মতো—সমান সর্বস্ব রাঙা

দলিত দুনিয়া রক্তমিছিলে ডোবা
এক খুনি দেশের সীমানা ফুঁড়ে
সাদা কালো গণতন্ত্র ডিঙিয়ে
এক খুনে রাঙা মানচিত্র নামিয়ে
সারা দুনিয়ার সমবেত কন্ঠ তুমি
বঞ্চনার বুকে লাঞ্ছিত আত্মার
স্বয়ংক্রিয় খাড়া আগ্নেয় মশাল

তুমি নিভে যাওয়া আঁখির কালো আলো
তুমি অবরুদ্ধ ফুসফুসের কালো হাওয়া
তুমি জেঁকে বসা পাথরের মতো উঁচু সাদা বরফের নিচে উপদ্রুত কালো বরফের চাঁই

যে দেশ ঠান্ডা মাথায় মানুষের টুঁটি চেপে ধরে
যে দেশ হাঁটু গেঁড়ে আঁটোসাঁটো করে
স্বাধীনতাকে বধ করে ফেলে
যে দেশ মানবাধিকারকে ধরে বেঁধে
নিগড়ে পিষে ফেলে
যে দেশে হাঁটুর নিচে মানুষের দাম
যে দেশে হাঁটুর নিচে মানুষের দম
যে দেশে হাঁটুর নিচে তোমার জীবন
যে দেশে মুক্তির আওয়াজ মুক্তির ঠিকানা মৃত্তিকা ফুঁড়ে ভূপৃষ্ঠ ছেড়ে ভূপৃষ্ঠ ছোঁবে বলে হাঁটুর ওপরে উঠতে পারে না
খাটো হাঁটুর নিচে মাটিতে মাটির ওপরেই মুখ থুবড়ে চাপা পড়ে আর তাকে ঠেসে ধরে জোরপূর্বক হত্যা করা হয় গেস্টাপো কায়দায়—সে তো বাতিঘরের নিচে অমাবস্যার মতো অন্ধকার আচ্ছাদিত একখন্ড আচ্ছন্ন কম্পাস
এক পরিত্যক্ত অপাঙ্ক্তেয় অবহেলার নাম আজো তুমি—অনিবার্য তুমি—যাকে অসম্ভব জেনেও
গায়ের জোরে বাতিল করা যায় না

হে আমার কালো কালো প্রিয় হরফেরা, অক্ষরের প্রপাত, ফলক—তোমরা আমার ঘাড় চেপে ধরা চাপ চাপ সব কালো কালো ছাপ শব—তোমরা আমার পরম প্রিয় নিকষ নিগ্রো-আঁধার ভ্রাতা : একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ, অপর পাতা
শৃঙখলিত বন্দীবাদন রদ্ধস্বর পাঠ, ঘাড় ধরে বের করে দেওয়া দমবন্ধ-উচ্চারণ : ‘ আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না ‘
এক আশ্চর্য বন্দিত কালো অধ্যায়
এক অবাক নিন্দিত সাদা অধ্যায়

তুমি এক রাষ্ট্রীয় আলখাল্লায় নিষ্পেষিত আমার পবিত্র সাধারণ পোশাক—তুমি এক অসভ্য উর্দির নিচে সুশীল আব্রু
যেন লোক দেখানোর মতো ভাঁজ করা সশস্ত্র সুরক্ষার প্রচ্ছদ-ফাঁদে মোড়া—বস্তুত মূল্যবান বাতাবরণে বেড়ে ওঠা—এক মূল্যহীন অরক্ষিত নিপাট নিঃসীম বলিষ্ঠ-অনাথ—
ক্রীতদাস নও—সভ্য দুনিয়ার নিরস্ত্র সভ্য
কালোরা কাবু হয়ে থাকবে সাদারা বাবু হয়ে থাকবে
এই মিছে ধারণার বুকে এক কালো পান্ডুলিপি, কালো কাব্য

তুমি আমার স্বরলিপি কাগুজে বাঘের মতো শ্বেতাঙ্গ বুকে জ্বালাময়ী আঁকিবুঁকি : শ্রমজীবী তান : ‘ছিল্লা-কাইট্টা লবণ লাগাই দিমু’

তুমি আমার আচমকা বর্বর দাপুটে সরকারি ব্যরিকেডজুড়ে তোমার পেটানো বুকের বাঁধভাঙা লেলিহান লোহুলিপি—যে তুমি আলো-আঁধারে উজ্জ্বল লুটেরা বারুদ—কালো আলো জ্বেলে দাও বর্ণবাদী রঙ মুছে তাড়িয়ে নির্বাচন করো : ‘হোয়াইট হাউজ’ নয় ‘ব্ল্যাক এ্যান্ড হোয়াইট’ অথবা ‘রেড হাউজ’—যদিও ধারেকাছে নেই আদিবাসীবৃন্দ কিংবা সর্বপ্রিয় রেড ইন্ডিয়ানগণ : গোড়ায় গলদ ভুলের মাসুল এই ক্রমিক ব্যর্থতা : কী সুন্দর বর্ণদ্বেষ, বর্ণকক্ষ, বর্ণদ্বন্দ্ব দেশ :
বহিঅঙ্গে গণতন্ত্র অন্তরঙ্গে বর্ণতন্ত্র

জর্জ, বন্ধু আমার মিনতি আমার, শোন, সেদিন
সুদূর থেকে তোমাকে আমি বাঁচাতে পারিনি বটে
এখন থেকে তুমি আর একা নও কালো নও
এখন এক থেকে তুমি অনেক আলোক, অগুনতি
যারা তোমার ঘাড় চেপে ধরে তিলে তিলে বিশ্বাস, নিঃশ্বাস লুটেছিল, রুখেছিল—তুমি তাদের ঘাড়ে সেই পড়ন্ত অবিশ্বাস, নির্মম-নিঃশ্বাস

ফ্লয়েড, তুমি আমার দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর দীর্ঘতম
কৃষ্ণকায় ভালোবাসা
ফ্লয়েড, তুমি আমার সুদীর্ঘ-জ্বলন্ত-অগ্নিগর্ভ
পরম পূর্ণাঙ্গ কৃষ্ণাঙ্গ প্রেম

জয় হোক, জর্জ !

 

সি/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন