বিনোদন

মৃত মায়ের কথা মনে করে সুশান্তের শেষ লেখায় অবসাদের ইঙ্গিত?


‘আবছা অতীতের বাষ্প চোখের জলে ঝরে পড়েছে..অফুরন্ত স্বপ্ন একটা হাসি খুড়েই খুড়ে চলেছে.. এবং জীবন দ্রুত পরিবর্তনশীল, দুইয়ের মাঝে আমি ঝুলে রয়েছি.. মা’। ঠিক একসপ্তাহ আগে মায়ের কথা মনে করে ইনস্টাগ্রামে এই বার্তাই লিখেছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত। যার আত্মহত্যার খবর রবিবার আলোড়ন পড়ে গেছে গোটা বলিউডে। ৩৪ বছরে আত্মহননের মতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কেন নিলেন সুশান্ত? সেই উত্তর অধরা। মেলেনি কোনও সুইসাইড নোটও। কিন্তু সুশান্তের শেষ ইনস্টাগ্রাম পোস্টে মিলেছে তার অবসাদগ্রস্ত হওয়ার ইঙ্গিত। খবর হিন্দুস্তান টাইমস এর।

স্বপ্ন আর বাস্তবের বেড়াজালে আটকে পড়েছিলেন অভিনেতা। অতীত পিছু ডাকছিল, কিন্তু সোনালি ভবিষ্যতের তাড়নাও তো কম ছিল না। তাই বলে জীবনটাকেই শেষ করে দিতে হবে? খুব অল্প বয়সেই মাকে হারিয়েছেন সুশান্ত সিং রাজপুত। ২০০২ সালে মৃত্যু হয় সুশান্তের মায়ের। ছেলের আকাশছোঁয়া সাফল্যের ছিটে ফোঁটাও দেখে যেতে পারেননি সুশান্তের মা। শুধু তাই নয়, একটা আক্ষেপ আজীবন সুশান্তকে তাড়া করে বেড়িয়েছে-মায়ের শেষ আবদার রাখেননি তিনি। এমনকি মায়ের মৃত্যুতে এক ফোঁটা চোখের জল ফেলেননি সুশান্ত সিং রাজপুত।

২০১৬ সালে ডিএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুশান্ত জানিয়েছিলেন- মা একদিন রাত ১১.৩০ নাগাদ আমাকে ফোন করে অঝোরে কাঁদছিল। আমি প্রশ্ন করি কাঁদছ কেন? কী হয়েছে? মা জবাবে বলেছিল.. তুই বাড়ি চলে আয় বাবা, আমি বলেছিলাম এখন যাওয়া সম্ভব নয়, মা চুপ করে গিয়েছিল। বলেছিল তুই নিজের খেয়াল রাখ, যত্ন নে শরীরের। পরের দিন সকালে খবর পেলাম মায়ের মৃত্যুর। ব্রেন হামারেজে মা মারা যায়। বিশ্বাস করুন আমি এক ফোঁটা চোখের জল ফেলেনি। একটুকুও কাঁদতে পারিনি…’।

পাটনার ছেলে সুশান্ত। ২০০০ সালে তার পরিবার দিল্লিতে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করে। অভিনেতার পরিবারে তার ভাই, বাবা ও দুই বোন রয়েছে। ১৮ বছর আগে মায়ের মৃত্যু, সুশান্তের জীবনে বিরাট শূন্যতা তৈরি করেছিল। সেই খালি জায়গাটা কোনওদিনই পূরণ হয়নি। ক্যারিয়ারের শুরুতে বিরাট সাফল্য হাঁকালেও শেষ কয়েক বছর তেমন সাফল্য আসেনি।

এমএস ধোনির সুবাদে দেশজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান সুশান্ত। তবে তারপর থেকে সাফল্যের মুখ দেখেননি সুশান্ত। ব্যোমকেশ বক্সি, রাবতা বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। সোনচিড়িয়াতে সুশান্তের পারফরম্যান্স নজড় কাড়লেও লাভ হয়নি। অন্যদিকে সুশান্তের শেষ বক্স অফিসে রিলিজ চিঁছোড়ে সাড়া ফেললেও ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্মে সুশান্ত-জ্যাকলিনের ড্রাইভও ব্যর্থ হয়। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা সুশান্তের দিল বেচারাও শুরু থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে। সব মিলিয়ে অবসাদ যে বেশ খানিকটা আঁকড়ে ধরেছিল সুশান্তকে তা স্পষ্টই বলে দিচ্ছে সুশান্তের শেষ ইনস্টাগ্রাম পোস্ট।

দিশার মৃত্যুর ৫ দিনের মাথায় সুশান্তেরও আত্মহত্যা, নানা প্রশ্ন

দিশার মৃত্যুর ৫ দিনের মাথায় সুশান্তেরও আত্মহত্যা, নানা প্রশ্ন

দিশা সালিয়ান ও সুশান্ত সিং রাজপুত

গত ৮ জুন ১৪ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন সুশান্ত সিং রাজপুতের সাবেক ম্যানেজার দিশা সালিয়ান। দিশার মৃত্যুর মাত্র ৫ দিনের ব্যবধানে সুশান্ত’র  মৃত্যু হতবাক করে দিলো উপমহাদেশকে। গোটা দেশ যখন করোনা নিয়ে দুশ্চিন্তায়, হঠাৎই বলিউডের ওপরে যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। আত্মহত্যা করলেন বলিউডের নতুন প্রজন্মের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ সুশান্ত সিং রাজপুত। রবিবার মুম্বাইয়ের বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয় তার ঝুলন্ত লাশ। বাড়িতে থাকা কাগজপত্র থেকে জানা যাচ্ছে, বেশ কিছুদিন ধরেই ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন তিনি।

অন্যদিকে, মুম্বাইয়ের মালাডের এক বহুতলের ১৪ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন দিশা। প্রেমিক রোহন রাই এবং বন্ধুদের সঙ্গে ডিনারের পর আচমকাই বড় কাচের জানলার কাছে চলে যান দিশা। কিছু বুঝে ওঠার আগে সেখান থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। তবে কী কারণে আত্মহত্যা করলেন সেলিব্রিটি ম্যানেজার, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যায় পুলিশ। তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তবে লকডাউনের সময় থেকে ক্রমশ ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন দিশা। মাঝে মধ্যেই অন্য রকমের ব্যবহার করতেন তিনি। কী কারণে তার ব্যবহারে আচমকা পরিবর্তন আসে, তা নিয়েও পুলিশ খোঁজ শুরু করেছে।

এদিকে সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার ঘটনায় গোটা উপমহাদেশ শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে। ধোনির বায়োপিক থেকে শুরু বেশ কিছু সুপারহিট চলচ্চিত্রের নায়ক সুশান্ত সিং রাজপুত। ১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি পাটনায় জন্মগ্রহণ করেন সুশান্ত সিংহ রাজপুত। পরবর্তীকালে দিল্লিতে চলে আসে তার পরিবার। দিল্লি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়েও ভর্তি হন। কিন্তু সেইসময় থেকেই থিয়েটারের দিকে ঝোঁকেন তিনি। নাচও শেখেন। তার জন্য পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি।অভিনয়ের তাগিদ থেকেই শেষ মেশ মুম্বইয়ে চলে আসেন সুশান্ত। সেখানে ২০০৮ সালে প্রথম একতা কাপুরের প্রযোজনায় ‘কিস দেশ মে হ্যাঁ মেরা দিল’ সিরিয়ালে অভিনয় করার সুযোগ পান। সিরিয়ালে অল্প দিনের মধ্যেই তার চরিত্রটির মৃত্যু হয়। তবে সেখান থেকেই একতা কাপুরের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যায় তার। সেই সূত্রেই ২০০৯ সালে ‘পবিত্র রিস্তা’ সিরিয়ালে মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

বিডি-প্রতিদিন

সংবাদটি শেয়ার করুন