জাতিসংঘ দেশের সংবাদ ফিচার্ড

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বাংলাদেশকে অর্থ দিতে চায় অনেক দেশ

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বাংলাদেশকে অর্থ দিতে চায় অনেক দেশ

এম. মোশাররফ হোসাইন ও সাখাওয়াত মুকুল, সম্মেলন থেকে: জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রয়োজনে বাংলাদেশকে অনেক দেশ অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন।

কানাডার মন্ট্রিয়ালে বিশ্ব জীববৈচিত্র্য সম্মেলনে (কপ-১৫) বিশ্বের ১৯৬ দেশের মন্ত্রী ও উচ্চ পর্যায়ের সরকারি প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে হাই লেভেল সেগমেন্টে স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ওপর সারসংক্ষেপ উপস্থাপনের পর সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জাতিসংঘের গ্লোবাল ফান্ডে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর বিশাল অংকের অর্থ সহায়তার ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত আর কোন দেশ এগিয়ে আসেনি, তবে আমরা আশা করছি শিগগিরই আরও বিভিন্ন দেশ এগিয়ে আসবে।

তিনি বলেন, সম্মেলনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী প্রত্যেকটি দেশের ৩০ শতাংশ বনায়নের যে কথা বলা হয়েছে আমাদের ছোট দেশে তা হয়তো আমরা পারবো না। কিন্তু আমরা আমাদের ৩০ শতাংশ জলাভূমি সংরক্ষণ করতে পারব। বাংলাদেশের বনভূমি বর্তমানে ১৪ থেকে ১৬ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। তবে সামাজিক বনায়নসহ আমাদের বর্তমানে ২২ শতাংশ বনভূমি রয়েছে।

এর আগে জাতিসংঘ জীববৈচিত্র্য সনদের আওতায় জীববৈচিত্র্য সম্মেলন এবং কার্টাহেনা প্রোটোকলের দশম সভা ও নাগয়া প্রটোকলের চতুর্থ সভায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণের উপর সারসংক্ষেপ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ১৯৯৪ সালের ৩ মে বাংলাদেশ সিবিডি-এর সদস্য পদ লাভ করে। ২০০১ সালের ৫ মে বাংলাদেশ এ কনভেনশনের আওতায়  কার্টাহেনা প্রটোকলের সদস্য হয়। ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ নাগোয়া প্রটোকলে স্বাক্ষর করে। নাগোয়া প্রটোকল অনুসমর্থনের লক্ষ্যে মন্ত্রিসভা কতৃক ইতোমধ্যে অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। সিবিডি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কর্তৃক জীববৈচিত্র আইন ২০১৭ জারি করা হয়েছে এবং অ্যাকশন প্ল্যান প্রণীত হয়েছে।

মন্ট্রিয়লে অনুষ্ঠিত আন্তর্জতিক জীব ও বৈচিত্র্য সম্মেলনের আরও ছবি দেখতে হলে

১৬.১২.২০২২

তিনি বলেন, জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে এবারের সম্মেলনে গ্লোবাল বায়োডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্ক চূড়ান্ত করাসহ কোস্টাল এন্ড মেরিন বায়োডাইভারসিটি, বায়োডাইভারসিটি এন্ড এগ্রিকালচার, বায়োডাইভারসিটি এন্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ, সিনথেটিক বায়োলজি, ইনভেসিভ এলাইন স্পেসিস, ডিজিটাল সিকোয়েন্স ইনফর্মেশন, ফাইন্যান্সিয়াল রিসোর্স মবিলাইজেশন ফর ইমপ্লিমেন্টেশন অফ বায়োডাইভারসিটি কনভেনশন ইত্যাদি এজেন্ডাগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮ (ক) অনুচ্ছেদে জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কার্যক্রমকে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা অষ্টম পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনা ডেলটা প্ল্যান ২১০০ সহ অন্যান্য জাতীয় পরিকল্পনায় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কার্যক্রমকে গুরুত্ব সহকারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বাংলাদেশের অবস্থান আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তুলে ধরা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে গ্লোবাল অ্যান্ড ফেসিলিটি সহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উৎস হতে আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি লক্ষ্যে উক্ত সভায় বাংলাদেশ কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে।

শাহাব উদ্দিন বলেন, তবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল জনবহুল এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহ জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা এবং জীববৈচিত্র্যের উপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর বিকল্প জীবিকায়ন নিশ্চিত করে, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং এর টেকসই ব্যবহার নিশ্চিতকরণে পর্যাপ্ত, আর্থিক, কারিগরি এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা পেতে পারে, সে লক্ষ্যে উন্নত বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে।

গ্লোবাল বায়োডাইভারসিটি ফান্ডে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর ৩৫০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার অঙ্গীকারকে স্বাগত জানিয়ে মন্ত্রী বলেন বলেন, আমরা আশা করি অন্যান্য উন্নত দেশগুলো কানাডার পথ অনুসরণ করে জিবিএফ বাস্তবায়নের সার্বিক সহযোগিতার পরিমাণ বৃদ্ধি করবে এবং এই সম্মেলনে একটি বাস্তবায়নযোগ্য জিবিএফ চূড়ান্ত করা হবে।



সংবাদটি শেয়ার করুন