বাংলাদেশি-আমেরিকান ড. সাদীর আবিষ্কার করা করোনার ওষুধ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে
লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র থেকে।। অবশেষে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সারিয়ে তোলার ওষুধ আবিষ্কারের সুখবর এলো। বাংলাদেশি আমেরিকান চিকিৎসা-বিজ্ঞানী ড. রায়ান সাদীর আবিষ্কৃত টিভিজিএন-৪৮৯, এবং সাইটোটক্সিক টি লিম্ফোসাইটস ওষুধ মানবদেহের জন্যে নিরাপদ কিনা তা যাচাইয়ের জন্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি দিয়েছে মার্কিন ফেডারেল ওষুধ প্রশাসন তথা এফডিএ।
নিউজার্সিতে অবস্থিত বায়ো-টেকনোলজি কোম্পানী ‘টেভোজেন বায়ো’র সিইও এবং গবেষণা টিমের প্রধান ড. রায়ানের এই আবিষ্কারের সংবাদ বিশ্বমিডিয়ায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। করোনা মহামারিতে বিধ্বস্ত অর্থনীতি এবং মুষড়ে পড়া জনজীবনে স্বস্তি আনতে এমন ওষুধের প্রয়োজনীয়তা ভিষণভাবে উপলব্ধি করছিলেন সকলেই।
করোনার প্রকোপ শুরুর পরই পাবনার সন্তান এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করা রায়ান সাদী নির্বিঘ্নচিত্তে এই ওষুধ আবিষ্কারে মনোনিবেশ করেন।
উল্লেখ্য, আগে থেকেই ক্যান্সার চিকিৎসার সবচেয়ে বেশি কার্যকর ওষুধের গবেষণা করছিলেন তিনি। সেটিকে করোনাভাইরাস নির্মুলের দিকে ধাবিত করেন। গত বছরের অক্টোবরে তার গবেষণা শেষ হয় এবং এফডিএর অনুমতির আবেদন করেছিলেন। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী এফডিএ তার পর্যবেক্ষণ-বিশ্লেষণ শেষে এটি করোনা নির্মুলে ভূমিকা রাখবে কিনা তা যাচাইয়ের জন্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে পাঠিয়েছে। সেই অনুযায়ী ১২ জুলাই ‘টেভোজেন-বায়ো’ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের। এই ট্রায়ালের মাধ্যমে ‘টিভিজিএন-৪৮৯’ মানবদেহের জন্যে কতটা নিরাপদ তা নিশ্চিত হতে চায় এফডিএ।
উল্লেখ্য, করোনার টিকা গ্রহণ করলে মানুষ করোনার সংক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতা অর্জন করে। করোনাভাইরাসকে মেরে ফেলতে পারে না। ড. সাদীর এই ওষুধ করোনায় আক্রান্ত বা সংক্রমিত সেলকে নির্মূল করবে। ট্রায়ালের মাধ্যমে করোনায় আক্রান্তরা এই ওষুধ গ্রহণ করলে মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়বে না-সেটিও নিশ্চিত হতে চায় মার্কিন স্বাস্থ্য প্রশাসন। এছাড়া, এই ওষুধ গ্রহণকারিরা কত দীর্ঘ সময়ের জন্য করোনার মত ভয়ংকর ভাইরাসের আক্রমণ থেকে দূরে থাকতে সক্ষম-তাও ট্রায়ালের অন্তর্ভুক্ত।
করোনা প্রতিনিয়ত পাল্টাচ্ছে এবং ভয়ংকর আকারে আবির্ভূত হচ্ছে। সেদিকে খেয়াল রেখে এই ওষুধ তৈরী করা হয়েছে বলে ১৫ জুলাই বৃহস্পতিবার অপরাহ্নে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন ড. রায়ান সাদী।
ইয়েল ইউনিভার্সিটির সংক্রমণ রোগ বিষয়ে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ড. রায়ান সাদী বলেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্যে এফডিএ থেকে অতিদ্রুত ছাড়পত্র পাওয়ায় আমি এবং আমার সহকর্মীরা খুবই সন্তুষ্ট। কারণ সারস-সিওভি-২’র সংক্রমণ রোধে সক্ষম কোষগুলিকে আরো শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে এই সেল-থেরাপি অপরিসীম ভূমিকা রাখবে। সেল থেরাপির মাধ্যমে মহামারি দেখা দেয়া অঞ্চলেও এই ওষুধের সুফল পাবেন আক্রান্তরা। এমন চিকিৎসা-ব্যবস্থায় নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তাও দূর করতে ভূমিকা রাখবে এই ওষুধ।
ড. রায়ান উল্লেখ করেন, খুব দ্রুত এটি রোগীকে প্রয়োগ করতে আমার টিম আন্তরিক অর্থেই সজাগ রয়েছে। ড. সাদী বলেন, এই ওষুধ কোষে সংক্রমিত হওয়া ভাইরাসকে একেবারেই নি:শেষ করবে। তার ফলে রোগী স্বল্পতম সময়ে আরোগ্য লাভে সক্ষম হবে।
আবিষ্কৃত ওষুধ টিভিজিএন-৪৮৯ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী সাদী বলেন, এটি ভাইরাসের গতি-বিধি চিহ্নিত করতে পারে এবং তা মেরে ফেলে সুস্থ মানুষের কোষের ন্যায় অর্থাৎ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নতুন কোষ সৃষ্টিতে সক্ষম হবে। ইতিমধ্যেই পরিচালিত পর্যবেক্ষণ জরিপে (প্রি-ক্লিনিক্যাল) আমরা তা নিশ্চিত হয়েছি।
করোনা যেভাবে আর যে নামেই আবির্ভূত হউক না কেন-সেই ভাইরাসকে চিরতরে নির্মূলে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন এই টিভিজিএন-৪৮৯-ওষুধ আবিষ্কারে নেপথ্য পৃষ্টপোষক বিশ্বখ্যাত সেল-থেরাপি বিশেষজ্ঞ এবং ফিলাডেলফিয়ার থমাস জেফারসন ইউনিভার্সিটির মেডিকেল অনকোলজি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান ড. নীল ফ্লোমেনবার্গ। ড. নীল এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে আমরা এই ওষুধকে নিরাপদ ভাবতে পারি। এখন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেও তা সব ধরনের ভাইরাসকে নির্মূলে কার্যকর ভূমিকা রাখবে-এটাই প্রমাণিত হবে, সে আশা করছি।
৭০ বছরেরও অধিক বয়সের রোগী, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত এবং করোনায় সংক্রমিত হবার প্রচণ্ড ঝুঁকিতে থাকা ১৮ বছরের অধিক বয়সী সকল মানুষ এবং আগে থেকেই জটিল রোগে আক্রান্ত-এখন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন-এমন রোগীর ওপর ট্রায়াল চালানো হবে বলে জানান ড. সাদী।
সর্বশেষ বিশ্লেষণ-পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ২০২৮ সালের মধ্যে সারাবিশ্বে চিকিৎসা-ব্যবস্থায় যুগান্তকারি উৎকর্ষ সাধনের অভিপ্রায়ে সবচেয়ে কার্যকর গবেষণায় নিয়োজিত বৃহৎ পরিসরের ১০টি ওষুধ প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠানের অন্যতম হবে এই ‘টেভোজেন বায়ো’-যার মালিক হচ্ছেন ড. সাদী।
ড. সাদী বলেছেন, করোনা রোগীকে সারিয়ে তোলার এই ওষুধ ব্যবহারের জন্যে এফডিএর অনুমতি পাবার পর তা বাংলাদেশ যদি চায় আমি বিনামূল্যে দিতে কার্পণ্য করবো না। স্বল্পভাষী এবং প্রচণ্ড পরিশ্রমী ড. সাদী বললেন, তবে বাংলাদেশে তা যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রয়োজন হবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকের। সেল থেরাপি দেয়ার মত আনুষঙ্গিক সামগ্রির পাশাপাশি এইচএলএ টেস্টিং মেশিনও লাগবে। ড. সাদী উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও আমি করে দেব আমার খরচেই।
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান