প্রবাসের সংবাদ ফিচার্ড সোশ্যাল মিডিয়া

প্রবাসে বাড়ি দেখে বলে দেয়া যায় বাড়ির মালিক কোন দেশের?

সাংবাদিক সুব্রত নন্দী’র ফেসবুক থেকে
প্রবাসে বাড়ি দেখে বলে দেয়া যায় বাড়ির মালিক কোন দেশের? 
প্রবাসে বাড়ি দেখে বলে দেয়া যায় বাড়ির মালিক কোন দেশের? আপনি যদি বিশাল কোন বাড়ি দেখেন ধরে নিতে পারেন সেটার মালিক একজন বাঙালি হতে পারেন। আর বাড়ির পিছনে লাউয়ের ডগা উঁকি ঝুঁকি মারলে সেটাও বাঙালির বাড়ি হতে পারে। সবচেয়ে ছোট বাড়িতে ( টাউন হাউস) বাস করেন ফিলিপিনোরা। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের মধ্যে বড় বাড়ির মালিকানা কম। কানাডাতে বাড়ির ব্যবসা করে দশ বছরের মধ্যে বিশ পঞ্চাশ মিলিয়নের মালিক হয়েছেন এমন বাঙালির সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। অথচ ত্রিশ বছর আগেও বাঙালিরা মুল পেশা হিসেবে ট্যাক্সি চালাতেন। নিউ ইয়র্কে ট্যাক্সি ড্রাইভারের অধিকাংশই বাঙালি।
কিন্তু দিন বদলের হাওয়ায় এখন কন্সট্রাকশন রেনোভেশন প্লাম্বিং বিল্ডার্স সব পেশাতেই বাঙালির দাপট। বিশ বছর আগে সস্তায় যিনি একটি বাড়ির মালিক হতে পেরেছিলেন তার এখন রিফাইনান্সে তিন চারটি। এতে করে বাড়ির দালালদের পয়মন্ত। ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে সে আপনাকে রিফাইনান্সে আরো একটি বাড়ি কিনে দিতে পারলে তার পকেটে পনের বিশ হাজার ঢুকে যাবে। এদিকে আপনিও একটি বাড়ির মালিক হলেন, পাঁচ বছর পর বিক্রি করলে এক শত হাজার লাভ। কিন্তু এতে আপনার সুখ শান্তির চব্বিশটা বেজে যাবে। অল্প আয়ের মানুষ হিসেবে আপনি হয়ত আরাম আয়াশে ছিলেন, গান শুনতেন, ছবি দেখতেন , আড্ডা দিতেন সব চুকে বুকে যাবে। অতিরিক্ত মর্টগেজ, মেইনটেনান্স, ভাড়াটিয়ার ঝামেলায় আপনার চুল পাকবে গায়ের চামড়া ঝুলে যাবে। উদগ্র টাকার নেশায় আপনি জীবনের অনেক কিছুই হারাবেন। একদিন সব ফেলে টুক করে মরে যাবেন , আবার উইল না করে গেলে সরকারের রাষ্ট্র ভাণ্ডারে আপনার সম্পত্তি চলে যাবে। কানাডা আমেরিকাতে আমাদের পরবর্তি প্রজন্ম তাদের পৈত্রিক সম্পত্তির অধিকার নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয়। অথচ আপনি টাকার বস্তা তাদের জন্য জমিয়ে যাচ্ছেন নিজের সুখ হারাম করে। কি হবে এই টাকা দিয়ে?
কানাডাতে আমার বাড়িটি একটি বাগান বাড়ি। শ্বেতাঙ্গদের বাড়ির পিছনে প্রচুর যায়গা থাকে। সেখানে গাছ পালা থাকে, পাখিরা কিচির মিচির করে। আমি ব্যাংকের ঋণের টাকায় ক্রয় সুত্রে মালিক হয়ে সেই বাড়ির পিছনে গ্রীষ্মকালীন সময়ে বাগান করি। চেরি গাছের নীচে বসে বিয়ার খাই। ঘাস কাটি। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখি। কাঠ বেড়ালিদের দৌড় ঝাপ দেখি। কবিতা পড়ি। জীবনের সুখ তো এখানেই। আমি এতেই খুশি। কিন্তু আমার স্ত্রীর বড় বাড়ির শখ। এতদিনে আমার বাড়ির মুল্য এক মিলিয়নের উপর। পৃথিবীর যে কোন দেশের চাইতে এখন টরন্টোতে বাড়ির দাম আকাশ চুম্বি। এটা সে বেচে দিয়ে দুরে কোথাও বিশাল অট্টালিকা কিনতে চায়। বুঝলাম তার বাঙালির ঘোড়া রোগ ধরেছে। বাঙালি বড় বাড়ি দেখিয়ে আনন্দ অনুভব করে যে দ্যাখ বেটা আমি তোর চাইতে কত বড়। শো বিজ বাঙালির একটা মানসিক অসুখ। দুইজন মাত্র মানুষ অথচ বাড়ি কিনছেন চল্লিশ হাজার স্কয়ার ফিটের। কারন দেখাতে হবে। এতে অপচয় হলে হোক। সেই বাড়ি দেখে অন্য বাঙালির আবার জ্বালা যন্ত্রনা শুরু হয়। সেটা দেখে আবার বড় বাড়ির মালিক নিষ্ঠুর আনন্দ উপভোগ করেন! কিয়েক্টাবস্থা!!!
আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের বাঙালিদের এই সংকট দেখে মনে মনে হাসি। আমার বাগান বাড়িতেই আমার আনন্দ। আমার সুখ। বয়স পঞ্চাশ পেরিয়ে উর্ধমুখি। বাঁচব আর কতদিন? দৌড়ের উপর থেকে আমার পোষায় না। আমি পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করে মরে যেতে চাই। কিন্ত আমি চাইলেই কি সব সম্ভব?
# লেখাটি বিশিষ্ট সাংবাদিক সুব্রত নন্দীর ফেসবুক থেকে নেওয়া
সংবাদটি শেয়ার করুন