তীব্র দাবদাহ: চাঁদের আলোয় ধান কাটছেন চাষিরা
দেশজুড়ে চলছে তীব্র দাবদাহ। এতে বিপাকে পড়েছেন শরীয়তপুরের ধানচাষিরা। অতিরিক্ত গরম ও হিটস্ট্রোকের ভয়ে ধান কাটার সময় হিসেবে রাতকে বেছে নিয়েছেন তারা। দিনে তীব্র তাপদাহের কারণে বাসায় থাকছেন, আর রাতে চাঁদের আলোয় ধান কাটছেন চাষিরা।
এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে সদর উপজেলার চর কাশাভোগ এলাকায়। এদিকে, এই সমস্যা সমাধানে সরকারের দেওয়া কম্বাইন হার্ভেস্টার ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন জেলা কৃষি বিভাগ।
ধানচাষীরা জানান, সারাদেশে চলছে তীব্র দাবদাহ। এর প্রভাব পড়েছে শরীয়তপুরেও। এরমধ্যে আবার জেলার অধিকাংশ জমিতে বোরোধান পাকতে শুরু করেছে। তবে অতিরিক্ত গরমে দিনের বেলা হিটস্ট্রোকসহ বিভিন্ন অসুস্থতার ভয়ে ধান কাটতে পারছেন না চাষিরা। তাই রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় ধান কাটতে দেখা গেছে তাদের।
এই অতিরিক্ত গরমে শ্রমিক না পেয়ে নিজেরাই নিজেদের জমির ধান কাটছেন। যতদিন চাঁদের আলো থাকবে, ততদিন এই ধান কাটবেন বলছেন তারা।
সরেজমিনে বেশ কয়েকটি ধানের জমিতে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে দুলছে সোনালী ধান। অধিকাংশ জমির ধান এখন পেকে গিয়েছে। দিনের বেলা প্রখর রোদের তাপ থাকায় রাতের বেলা চাঁদের আলোয় ধান কাটছেন চাষিরা।
চাষী মিজান শিকদার বলেন, ৮০ শতাংশ জমিতে আমি বোরো ধানের চাষ করেছি। ধানের ফলন ভালো খুব ভালো হয়েছে। ধানও পেকে গেছে। তবে গরমের কারণে দিনের বেলা ধান কাটতে রাজি হচ্ছে না শ্রমিকরা। পরে সিদ্ধান্ত নেই নিজেরাই রাতে চাঁদের আলোতে ধান কাটবো। তাই আমরা চারজন চাষী ধান কাটা শুরু করি। রাত ৯টা থেকে শুরু হয়ে ভোর ৫টা পর্যন্ত আমরা ধান কাটি।
স্থানীয় সাইফুল ইসলাম বলেন, তীব্র গরমের কারণে জেলায় এই প্রথম রাতে চাঁদের আলোয় চাষিদের ধান কাটতে দেখা গেছে। কৃষি বিভাগ চাষিদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা উচিৎ।
জেলা কৃষিবিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৫ হাজার ৫২৬ হেক্টর জমিতে বোরোধানের আবাদ করা হয়েছে। যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬২৭ মেট্রিক টন। আর গত বছর জেলায় বোরোধানের আবাদ হয়েছিল ২৫ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৯০৬ মেট্রিক টন।
গত বছরের তুলনায় এ বছর বোরোধানের উৎপাদন বেড়েছে এক হাজার ৭২১ মেট্রিক টন। তবে চলতি বছরে চলমান তীব্র দাবদাহে ধানের উৎপাদনে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলে ধারণা কৃষিবিভাগের।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) মোহাম্মদ রিয়াজুর রহমান বলেন, প্রচণ্ড দাবদাহে আমাদের কৃষকদের দিনের বেলা ধান কাটা খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ অতিরিক্ত গরমে কাজ করলে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। যারা এই গরমে মাঠে কাজ করবেন তাদের প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করার পাশাপাশি গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে।
তিনি বলেন, তীব্র তাপদাহর কারণে কিছু কিছু কৃষক রাতে চাঁদের আলোয় ধান কাটছে। সেক্ষেত্রে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি। সরকারের পক্ষ থেকে অনেকগুলো কম্বাইন হার্ভেস্টার দেয়া হয়েছে। এই কম্বাইন হার্ভেস্টার যদি ব্যবহার করে তাহলে অল্প সময়ের মধ্যে তারা ধান কাটতে পারবেন। –বাংলাদেশ জার্নাল
এসএস/সিএ