প্রবাসের সংবাদ ফিচার্ড

দক্ষিণ কোরিয়ায় যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যে  জাতীয় শোক দিবস পালন

দক্ষিণ কোরিয়ায় যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যে  জাতীয় শোক দিবস পালন

যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ২০২১ পালন করা হয়। এ উপলক্ষ্যে দূতাবাস দিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে।

১৫ আগস্ট সকাল ০৯.৩০ ঘটিকায় রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম দূতাবাস প্রাঙ্গণে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দের উপস্থিতিতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করবার মাধ্যমে দিবসটির কর্মসূচির সূচনা করেন। এসময়ে উপস্থিত সকলেই কালো ব্যাজ পরিধান করেন। অত:পর মান্যবর রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ দূতাবাসে জাতির পিতার ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। পরবর্তীতে, রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দের উপস্থিতিতে কোরিয়ান ভাষাসহ জাতিসংঘের দাপ্তরিক ৬টি ভাষায় অনুদিত জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। উল্লেখ্য, ২০২০ সালে দূতাবাস জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণটি  কোরিয়ান ভাষায় অনুবাদের উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং এ সংক্রান্ত একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যে  জাতীয় শোক দিবস পালন অনুষ্ঠানে মান্যবর রাষ্ট্রদূত এরপর ‘মুজিব বর্ষ’ উদযাপনের অংশ হিসেবে জাতির পিতার জীবন ও কর্মের উপর দূতাবাস প্রাঙ্গনে আয়োজিত ৩য় আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ বঙ্গবন্ধুর উপর লিখিত বইয়ের প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। উল্লেখ্য, এর পূর্বে দূতাবাস জাতির পিতার জীবন ও কর্মের উপর  পাঁচ (০৫) দিন ব্যাপী ১ম আলোকচিত্র প্রদর্শনীটি কোরিয়ান কালচার অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় গত ০৯-১৩ জুলাই ২০২১ তারিখে সিউল শহরের প্রাণকেন্দ্র গাংনামের থিও গ্যালারিতে এবং চার (০৪) দিন ব্যাপী ২য় আলোকচিত্র প্রদর্শনীটি ইয়াংওয়ান কর্পোরেশনের সহযোগিতায় গত ০৩-০৬ আগস্ট ২০২১ তারিখে সিউলে ইয়াংওয়ান কর্পোরেশনের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে আয়োজন করে। এছাড়া দূতাবাস গত ২৬ জুলাই ২০২১ তারিখে দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়নসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের গ্রন্থাগারে ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ স্থাপন করে। সেইসাথে অন্যান্য দুইটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যথা-সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও Korea Advanced Institute of Science and Technology (KAIST)-এর গ্রন্থাগারের জন্য বঙ্গবন্ধুর উপর ইংরেজী ও কোরিয়ান ভাষায় লিখিত বই প্রদান করে যাতে করে সেখানকার শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কার্যক্রম এবং তাঁর দর্শন সম্পর্কে অবহিত হতে পারে।

জাতীয় শোক দিবস-উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানের পরবর্তী পর্ব অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদত বরণকারী বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের শহিদ সদস্যবৃন্দের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং বঙ্গবন্ধুসহ সেই কাল রাত্রিতে নিহত সকল শহিদদের বিদেহী আত্মার শান্তি এবং দেশ ও জাতির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। পরে দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে প্রদত্ত মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনান।

পরবর্তীতে পূর্বধারণকৃত ‘বঙ্গবন্ধু ও বিশ্ব শান্তি’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা সভা প্রদর্শন করা হয়। উক্ত আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়া পলিসি সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর Sung Yong Kang যিনি ‘Commemorating Bangabandhu, the Founding Father of the People’s Republic of Bangladesh: Imagination and Inspiration that Bangabandhu Throws on the Korean Peninsula Today’ শিরোনামে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেন। প্রফেসর Sung Yong Kang তাঁর আলোচনায় বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাধীনতা অর্জন ও মাতৃভাষা রক্ষার সংগ্রামের ইতিহাসের সাদৃশ্য তুলে ধরেন। তিনি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন এবং এর আলোকে কোরিয়ান উপদ্বীপে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলোচনা করেন।

ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের সম্মানিত সদস্য সচিব ও কিউরেটর জনাব মোঃ নজরুল ইসলাম খান ও রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম। বঙ্গবন্ধুকে বিশ্ব শান্তির অন্যতম অগ্রদূত উল্লেখ করে জনাব মোঃ নজরুল ইসলাম খান তাঁর বক্তব্যে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অকুন্ঠ সমর্থন ও বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন যে, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতার আদর্শ ও দর্শনকে অনুসরণ করে বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।  রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম তাঁর বক্তব্যে জাতির পিতার অসাম্প্রদায়িক নীতি ও বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্র নীতি এবং বিশ্ব শান্তি ও সম্প্রীতি স্থাপনে তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সমর্থনের কথা উল্লেখ করেন। ‘মুজিব বর্ষ’ উদযাপনের অংশ হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধু শান্তি পুরস্কার’ প্রদান প্রসঙ্গে মান্যবর রাষ্ট্রদূত বলেন যে বাংলাদেশ সরকারের এই উদ্যোগ সারা বিশ্বে শান্তি ও সহনশীলতার সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেবে। তাছাড়া, আসন্ন ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য ‘বিশ্ব শান্তি সম্মেলন’  বিশ্ব মানবতাকে একত্রিত হতে অনুপ্রাণিত করবে এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সমতা ও  ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে আরও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে-যার স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু।

অনুষ্ঠানের পরবর্তী পর্বে ‘জাতীয় শোক দিবস’ উপলক্ষ্যে একটি অনলাইন আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে অংশ নেন কোরিয়াতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকগণ। আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী ও অবদানের উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। আলোচনায় বক্তাগণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মময় জীবনের প্রতি আলোকপাত করেন। মান্যবর রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্টের অন্যান্য শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের  মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জাতি গঠনে জাতির পিতার অসামান্য অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি জাতির পিতার ‘সোনার বাংলা’ স্বপ্ন বাস্তবায়নে দক্ষিণ কোরিয়াস্থ প্রবাসী বাংলাদেশীদের আরো গঠনমূলক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

সিউল, ১৫ আগস্ট ২০২১।

 

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন