মোহন কুমারের জীবনের গোপন উপাখ্যান
এক নব সূচনা
পর্ব ১
মোহন কুমারের জন্য দিনটি হওয়া উচিত ছিল আনন্দের।
কিন্তু তা হয়নি। বার বছর ধরে সে এরই পথ চেয়ে ছিল। অবশেষে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিল। কয়েক মাসের তিক্ত-রুক্ষ মেজাজের পথ ধরে জন্ম নেয় প্রচন্ড ঘৃণার। আর সেজন্যই সে আগেভাগেই বিয়ে বিচ্ছেদে সম্মত হয় এই শর্তে যে, তাদের সন্তান দুটো তার জিম্মায় থাকবে।
মোহন কুমার তার এই মুক্তির ব্যাপারে এতই উদগ্র ছিল যে, সন্তানদের পাশাপশি তার স্ত্রীকে খোরপোষ বাবদ সে যা চায় তাই দিতে রাজি ছিল। সে এবং তার বাবা তাকে যত অলঙ্কার দিয়েছিল, আসবাবপত্র, ছবি- যা কিছুর সে উল্লেখ করেছে তার সবই মোহন কুমার সোৎসাহে দিতে রাজি ছিল। কিন্তু তার স্ত্রী এসব কিছুই চাইল না । বরং বিচ্ছেদের ব্যাপারে তাকে মোহন কুমারের মতই উৎসাহী মনে হল। সেদিন সন্ধ্যায়ই সে জিনিসপত্র গুছিয়ে সন্তানদের নিয়ে গাড়ি চালিয়ে তার মা-বাবার বাড়ি চলে গেল। এমনকি সে বিদায় সম্ভাষণ জানানোরও প্রয়োজন বোধ করল না। সন্তানরা টের পেল অন্যান্যবার নানুবাড়ি বেড়াতে যাবার মত নয় তাদের এবারের যাওয়া। মায়ের কালো মার্সিডিস গাড়িতে ওঠার আগে তারা তাদের বাবাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেল। গাড়িটি অপ্রয়োজনীয় তীব্র গতিতে গেট অতিক্রম করল; মোহনের স্ত্রী নিশ্চিত ছিল এতে তার সন্তানরা পেছন ফিরে হাত নেড়ে তাদের বাবাকে টা-টা দিতে পারেনি।
সব সময় খুঁত ধরে বেড়ানো, বদমেজাজী স্ত্রীর কবল থেকে এই সদ্য-পাওয়া মুক্তিকে তো মোহন কুমারের উদযাপনই করা উচিত। কিন্তু সে যখন তার দোতলা বাংলোর ব্যালকনির রেলিংয়ে পা ঠেকিয়ে বসে হাভানা চুরুট টানছিল তখন তার ভেতরটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল, একাকিত্বের কাফনে মুড়ে যাচ্ছিল তার সমস্ত অনুভূতি। চারপাশ জুড়ে নীরবতা। বাচ্চাদের ঝগড়াঝাটি চেঁচামেচি নেই। তার ছ’বছরের মেয়েটা ছুটে এসে নালিশ করছে না যে তার বড় ভাই তাকে উত্ত্যক্ত করছে এবং তাদের ভীষণভাবে ধমকে দিয়ে ভদ্র আচরণ করতে বলছে না এবং তাকে বিক্তনা করার জন্য কিছু বলতে হচ্ছে না। বাচ্চাদের চেঁচামেচি করে ঝগড়া তাকে প্রায়ই ব্যতিব্যস্ত করে রাখে। এখন সে এই সবকিছু থেকেই বঞ্চিত। হঠাৎ করেই বাড়িটাকে খুব বেশি ফাঁকা লাগছে এবং রাতটাকে মনে হচ্ছে ভীষণ দীর্ঘ। সে হাঁপিয়ে উঠল।
মোহন তার স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক টা খতিয়ে দেখল। লোকে যেমনটি বলে থাকে এটা ছিল তেমনি ছকে বাঁধা বৈবাহিক সম্পর্কের ভালবাসা। কিন্তু অবশ্যই এটা আদতে ঠিক তেমনটা ছিল না। তের বছর আগে সে যখন আমেরিকা থেকে কম্পিউটার এবং ব্যবসাব্যবস্থাপনায় ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে আসে, তার অবসরপ্রাপ্ত মাঝারি সারির সরকারি চাকুরে বাবা-যে তার একমাত্র পুত্রকে ঘিরে মধ্য বিত্তীয় স্বপ্নে বিভোর- সংবাপত্রের অফিসে তার ছবি এবং জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দিল। পরদিন সকালে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের বিয়ে-সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনের পাতায় তার শিক্ষাগত যোগ্যতার উচ্ছ্বসিত প্রশংসার ফিরিস্তিসহ ছবি ছাপা হল। এতে অবিবাহিত মেয়েদের বাবা-মাকে যোগাযোগের আহবান ছিল। সে তার বাবাকে চায়ের দাওয়াত দিয়ে বিয়ের বয়সী কনে দেখানোর ধুম পড়ে গেল। বিশাল অঙ্কের যৌতুক আর ব্যবসার অংশীদারিত্বের প্রস্তাব আসতে থাকল। এমনকি এত বছর পরেও মোহন এটা ভেবে অবাক হয় যে, কত সহজে সে তাকে বিকিয়ে দিতে রাজি হয়েছিল এবং শেষমেশ সোনুকে করতে সম্মত হয়েছিল।
কানাডা প্রবাসীদের অনুষ্ঠানের ভিডিও দেখতে হলেঃ
তার বাবা রায় বাহাদুর লালা অচিন্ত্য রাম সবচেয়ে বেশি দাম হেঁকেছিল। সে ছিল কয়েকটা চিনিকলের মালিক এবং দিল্লীতে তার ছিল বিশাল ভু-স্পত্তি। মোহন এই প্রস্তাবে বশ হয়েছিল যতটা না একজন স্ত্রী লাভের আশায়, তার চাইতে বেশি তার বাবাকে খুশি করার জন্য। সোনু ছিল চলনসই সুন্দরী, তেজস্বী এবং আশ্রমে শিক্ষিতা। কুমারিত্বকে রক্ষা করে চলায় সে ছিল ব্যগ্র এক কুমারিও। তাদের বিয়েটা ছিল খুবই জাঁকজমকপূর্ণ এবং বিয়ের পরই তারা সোনুর বাবার দেয়া বিশাল সাজানো ফ্ল্যাটে উঠেছিল। মোহনের বাবাও এসে তাদের সাথে সেই ফ্ল্যাটে উঠেছিল। তাদের মধুচন্দ্রিমা বেশ ভালই কেটেছিল- নবদম্পতিদের ক্ষেত্রে সচরাচর যেমনটি দেখা যায়; যাদের পরস্পরের শরীরকে আবিস্কার এবং গো-গ্রাসে উপভোগের ওপরই বেশি ঝোঁক থাকে তখন কামনার চেয়ে। তাদের প্রথম সন্তান, তথা পুত্রসন্তান তখনকারই দুরন্ত প্রণয়ের ফসল। চলবে…